যন্ত্রদানবের খোঁচায় ছিঁড়লো স্মার্ট সিটির গ্যাস-জলের পাইপ!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি:- রাজ্যের রাজধানী শহর আগরতলায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অল্পেতে রক্ষা পেয়েছে শহর। গত প্রায় ১০ দিন ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় একের পর বিপদের শঙ্কা তৈরি হয়ে চলছে। পাইপলাইন গ্যাস মিলছে না মানুষের। মিলছে না পানীয় জল। চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে আগরতলাজুড়ে। এর মধ্যে মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী অবস্থা পুরোপুরি নাগালের বাইরে চলে যায়। সকাল এগারোটার আগে থেকে পাইপলাইন গ্যাস ও নলবাহিত জল রাত আটটা নাগাদ সংবাদ লেখার সময় পর্যন্ত মিলেনি। আগরতলা শহরে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। এমনই অভিমত ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকের।মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বিপর্যয় ঘটে আগরতলায়। আচমকা ছিঁড়ে যায় মাটির নীচে থাকা গ্যাস সরবরাহ করা পাইপলাইন। ছিঁড়ে অথবা ভেঙে যায় শহরের পানীয় জল পরিবাহী ও সরবরাহকারী পাইপ। ফলে শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় অঘোষিত অরন্ধন চালু হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে পড়ে নাওয়া-খাওয়া। স্নান সহ স্বাভাবিক প্রাকৃতিক কাজ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বহু পরিবারের মানুষকে সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যারাত পর্যন্ত না খেয়ে কাটাতে হয়েছে। ঘরে রান্না করা সম্ভব হয়নি। ফলে কোনও কোনও পরিবারে বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে কোনও রকমে ক্ষুধা নিবারণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক পরিবারের পক্ষে আক্ষরিক অর্থেই স্নান, প্রাকৃতিক কর্ম করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। রাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কাজ চলছে। তবে রাতের মধ্যে সমস্যার পুরোপুরি নিরসন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে খবর।
এমতাবস্থায় মানুষের ভোগান্তি বুধবার সকাল পর্যন্ত চলবে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ত্রিপুরা প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড তথা টিএনজিসিএলের তরফে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জোর চেষ্টা চলছে বলে জানা যায়। একই ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাজ্য জল পর্ষদের তরফে। বিভিন্ন মহল সূত্রে প্রাপ্ত খবর অনুসারে গত প্রায় দশ দিন ধরে শহরের বিভিন্ন অংশে চলছে মাটি খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। আর তার জেরে আগরতলা শহর ও সংলগ্ন এলাকার দুর্জয়নগর, রামনগর, কৃষ্ণনগর, বড়জলা, জয়নগর, মেলারমাঠ, রবীন্দ্র পল্লি সহ আরএমএস চৌমুহনীকে থেকে হাসপাতাল চৌমুহনী পর্যন্ত এলাকায় এই ঘটনা ঘটে চলছে। সর্বশেষ অনাকাঙিক্ষত কাণ্ডটি ঘটেছে আরএমএস চৌমুহনী থেকে হাসপাতাল চৌমুহনী এলাকায়।
গত কয়েকদিনের মতো আগরতলা পুর নিগমের উদ্যোগে স্মার্ট সিটি প্রকল্পের আওতায় শহরে খোঁড়াখুঁড়ি কাজ শুরু হয় মঙ্গলবার সকালে। পুর নিগম এবং স্মার্ট সিটির একাধি আধিকারিকের উপস্থিতিতে শুরু কাজ। গতো কয়েকদিনের মতে যন্ত্রদানব ড্রজার মাটি খুঁড়তে কার লাগানো হয়। আর তাতেই ঘটেছে কয়েক দিনের মতো বিপদ। একটি বিমা সংস্থার শাখা কার্যালয়ের সামনে ভজ মাটিতে দাঁত বসাতেই ঘটে বিপত্তি। একযোগে ছিঁড়ে যায় গ্যাস সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত এক এবং আধ ইঞ্চি গ্যাসের পাইপ। কার্যত ছারখার হয়ে যায় সব। তীব্র গতিতে গ্যাস বের হতে থাকে পাইপ দিয়ে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। খবর দেওয়া হয় দমকলে। ছুটে আসে ইঞ্জিন সহ দমকলের একটি দল। এই ফাঁকে খবর পৌঁছে যায় গ্যাস কোম্পানিতে। কোম্পানির সারাইকারী দল কাজে নেমে পড়ে। প্রথমে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের ব্যবস্থা করে দলটি। সঙ্গে সঙ্গে হাত লাগায় পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারের কাজে। প্রাপ্ত খবর অনুসারে পরিস্থিতি এতোটাই লণ্ডভণ্ড হয়ে দাঁড়ায় যে দিনের কয়েক ঘন্টার চেষ্টায় অবস্থা সামাল দেওয়া যায়নি। বহু বাড়িতে চালু করা যায়নি গ্যাস সরবরাহ। এর জন্য রাতে সংবাদ লেখা পর্যন্ত কাজ চলছে।একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে শহরের জল পরিবাহী ও সরবরাহকারী পাইপে। ড্রজারের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে পাইপ লাইনে পানীয় জল বের হতে থাকে। অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে পুর নিগম ও স্মার্ট সিটি প্রকল্পের তরফে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যন্ত্রপাতি ছেড়ে আধিকারিক- কর্মীরা এলাকা ছেড়ে পালায় বলে খবর। অন্যদিকে গ্যাস কোম্পানির মতো জল পরিষদের তরফে কাজ শুরু করা হয় অবস্থা সামাল দিতে। ঘটনা ঘিরে এলাকার বিপাকে পড়া মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখিত কারণে বিপাকে পড়া পরিবারের মধ্যে রয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সমীর রঞ্জন বর্মণ সহ ত্রিপুরা উচ্চ আদালতের বিচারপতি অরিন্দম লোধের বাড়ি সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রশাসনিক সূত্রে প্রাপ্ত অনুসারে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের শেষ লগ্নে বরাদ্দ টাকা খরচের ধুম লেগেছে। চলতি অর্থবর্ষের আর দেড় মাসও বাকি নেই। এই কারণে আগরতলা পুর নিগম এবং স্মার্ট সিটি প্রকল্পের তরফে তড়িঘড়ি অর্থ খরচের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর তাতেই বিপদ ঘটেছে বলে খবর। কোনও ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থার কথা মাথায় না রেখে শহরের বিভিন্ন অংশে নালা সংস্কার ও নির্মাণের কাজ চলছে। ভূতলের গ্যাস, জলের লাইনের কথা মাথায় না রেখে কাজ করায় অঘটন ঘটেছে। ঘটনাচক্রে ভূতল বিদ্যুৎ সরবরাহকারী তার সহ অন্যান্য ব্যবস্থার কথা মনে রাখায় আরও বড়ো বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে শহর এবং নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষ। এমন ঘটনা কিন্তু শহরে প্রথম ঘটেনি। এর আগেও নির্মাণকাজ তথা উন্নয়নের নামে এমন বিপদ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ দিনের বিপদ পূর্বের যাবতীয় সীমা ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা যায়। আর এই কারণে মানুষের দুর্ভোগও হয়েছে মাত্রাছাড়া।

Dainik Digital

Recent Posts

হৃদরোগে হঠাৎ মৃত্যু: কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমান যুগে হৃদরোগ জনিত সমস্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।এর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও জীবনঘাতী…

23 hours ago

প্রশ্নের মুখে বৈধ সীমান্ত বাণিজ্য, আমদানির তুলনায় রপ্তানি নামমাত্র, পরিস্থিতি চিন্তাজনক!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমানে রাজ্যেনয়টি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন রয়েছে।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই নয়টি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশনকে…

24 hours ago

আঠাশের বিধানসভা নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা প্রদ্যোতের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনেও আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলেই, আমাদের…

24 hours ago

হার্ভেকে নকআউট করে তপনের সেমিতে সংহতি!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-তপন স্মৃতি নকআউট ক্রিকেটের দ্বিতীয় দল হিসাবে সেমিফাইনালে হার্ভেকে নকআউট করে তপনের সেমিতে সংহতি!!খেলার…

24 hours ago

সতর্কতাই বাঞ্ছনীয়!!

নজিরবিহীন গরমের মুখোমুখি রাজ্য। মার্চ মাসের শেষ দিকে গরমের এই প্রকোপ এককথায় নজিরবিহীন।এজন্য আবহাওয়া দপ্তরকে…

24 hours ago

খুশির ঈদ উদযাপন

অনলাইন প্রতিনিধি :-"ঈদুল ফিতর" যার অর্থ হলউপবাস ভাঙার আনন্দ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের…

2 days ago