যাত্রীট্রেন নয়, চলবে পণ্যবাহী ট্রেন

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)
প্রনব ঘোষ || গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল বলে বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে। বাংলায় চালু এই প্রবাদের ইঙ্গিতবহ অর্থ রয়েছে। কাঁঠাল গাছে সবে কাঁঠাল ধরতেই খাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। এর জন্য গোঁফে আগে ভাগে তেল লাগানোর উদ্যোগ চলে, যেন কাঁঠালের আঠা মুখে না লেগে যায়। আসলে গাছে শুধু কাঁঠাল ধরলেই চলবে না।কাঁঠাল পেকে সুগন্ধ ছড়াতে হবে, তারপরই উদ্যোগ নিতে হবে সুস্বাদু ও রসালো ফলটি খাওয়ার। বাস্তবেও তেমনটাই হয়ে থাকে। শুধুমাত্র অতিউৎসাহী কিছু লোকের কারণেই হয়তো প্রচলিত হয়েছে প্রবাদটি। 
আগরতলা আখাউড়া - রেলপথ নিয়েও জোর প্রচার চলছে অতিউৎসাহীদের। প্রচারের ফানুস ক্রমেই ফুলছে। তাতে ধারণা তৈরি হচ্ছে যেন যখন - তখন আগরতলা - কলকাতা ভায়া ঢাকা যাত্রীট্রেন চলাচল শুরু হয়ে যাবে।অথচ তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই মোটেও। সোজা কথায় ভায়া আখাউড়া ও ঢাকা হয়ে রেলপথে কলকাতা যাওয়া সুদূরপরাহত। আগরতলা – আখাউড়া রেলপথ চালু হলেও তেমন সম্ভাবনা নেই।সহসা আগরতলা - কলকাতার মধ্যে ভায়া - ঢাকা যাত্রীট্রেন চলাচলের সুযোগ নেই।এ কথা উঠে এসেছে খোদ রেলের তথ্যে। ভারতীয় রেলের নিজস্ব নির্মাণ সংস্থা তথা ইরকনের তরফে জানানো হয়েছে তথ্যটি। এই তথ্যে দেখা যায় বাংলাদেশ রেলপথ বাদ সেধেছে উল্লেখিত ক্ষেত্রে।

আগরতলা- ঢাকা-কলকাতা


বাংলাদেশের বর্তমান রেল পরিকাঠামো তুলনায় দুর্বল।ফলে আগরতলা – কলকাতা ভায়া আখাউড়া, ঢাকা, বেনাপোল যাত্রীট্রেন চলাচল শুরু করা যাবে না।কবে বাংলাদেশকে ভিত্তি করে আগরতলা – কলকাতা যাত্রীট্রেন চলাচল করবে তা এখনই বলা যায় না। এর জন্য লেগে যেতে পারে বহু সময়।বাংলাদেশের রেলপথ সর্বত্র আধুনিক ব্রডগেজে নেই। বেশকিছু অংশের রয়েছে মান্ধাতা আমলের মিটার গেজ। আর সেটাই অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে আগরতলা – কলকাতা ভায়া ঢাকা যাত্রীট্রেন চলাচলে।এ কারণেই বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন ত্রিপুরার নিশ্চিন্তপুর রেলস্টেশন তৈরি হয়েছে ডুয়েল গেজে। নিশ্চিন্তপুর স্টেশনে
মিটার গেজ ও ব্রডগেজের আলাদা রেলপথ থাকবে।এর মধ্যে চারটি থাকবে মিটার গেজে। বাকি দুটি থাকবে ব্রডগেজে। আবার মিটার গেজের রেলপথের স্লিপার থাকবে ডুয়েল গেজে। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে রেলপথ দ্রুত ব্রডগেজে রূপান্তরের কথা মাথায় রেখেই এই উদ্যোগ। এই অব্যবস্থায় রেলপথ তথা ট্র্যাকের মূল ভিত্তি স্লিপারে একাধারে মিটার গেজের মাপে এক মিটার দূরত্বে রেলপথ বসানোর সুযোগ থাকে।একই সুবিধা থাকে ব্রডগেজের মাপে ১ মিটার ৬৬ সেন্টিমিটার দূরত্বে রেলপথ বসানোর।বর্তমানে গুয়াহাটি, শিলিগুড়িকে ব্যবহার করা আগরতলা –কলকাতা রেলপথের দূরত্ব প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার। এর পুরোটাই ব্রডগেজ রেলপথের।ভারতের কিছু ঐতিহ্যবাহী তথা হেরিটেজ মর্যাদায় ভূষিত রেলপথই রয়েছে মিটার গেজে।বাকি সব রেলপথ রয়েছে ব্রডগেজে।১৬০০ কিলোমিটার অতিক্রম করতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে সময় লাগে ৩৫ ঘণ্টা প্রায়। বিশেষ কলকাতা এক্সপ্রেসে সময় লাগে ৩১ ঘণ্টা ৩০মিনিট। ভারতীয় রেলের সময় সারণিতে এই তথ্য দেওয়া আছে। বাস্তবক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে এর চেয়ে বেশি অথবা কম সময় লাগে আগরতলা – কলকাতার জন্য।দেশের মনোরম পাহাড়ি প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায় এই রেলপথে।১১ এপ্রিল ভারতীয় রেলের নির্মাণ সংস্থা ইরকন এক তথ্য প্রকাশ করেছে।কেন্দ্রীয় সরকারের উত্তর পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন তথা ডোনার মন্ত্রকের মন্ত্রী জি কিষান যান নিশ্চিন্তপুরে।উল্লেখিত দিনে তিনি পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন করেন নিশ্চিন্তপুর।আগরতলা স্টেশন থেকে নিশ্চিন্তপুর স্টেশন হয়ে সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত খতিয়ে দেখেন কাজের অগ্রগতি। আগরতলা – আখাউড়া রেলপথের ভারতীয় অংশের নির্মাণ নিয়ে করেন পর্যালোচনা।


অংশ নেন বৈঠকে। আর তখনই ভারতীয় অংশের তহবিল ডোনার মন্ত্রকের মন্ত্রীর হাতে তথ্য তুলে দেওয়া হয়। অগ্রগতির কথা
জানানো হয় তাকে। ভারতীয় অংশে প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইরকনের জেনারেল ম্যানেজার তৈরি করেন অগ্রগতির চিত্র। তাতে বলা হয় শিলিগুড়ির মুরগির ঘাড়ের মতো অংশ চিকেন নেক ব্যবহার হয়ে আসছে ভারতীয় রেলপথে। এই অংশ দিয়েই আগরতলা – কলকাতা রেল সংযোগ রয়েছে। সময় লাগছে প্রায় ৩৮ ঘণ্টা । আগরতলা আখাউড়া রেলপথ রূপায়ণ হলে বিকল্প উপায় সৃষ্টি হবে। আগরতলার দূরত্ব কমবে প্রায় ১১০০ কিলোমিটার। রেলপথে আগরতলা – কলকাতার দূরত্ব নেমে আসবে প্রায় ৫০০ কিলোমিটারে। সময় কমে দাঁড়াবে প্রায় ১৬ ঘণ্টায়। সব মিলিয়ে সময় বাঁচবে প্রায় ২২ ঘণ্টা। উল্লেখিত অগ্রগতির চিত্রেই বলা হয়েছে প্রাসঙ্গিক কথা। আর তা হল বাংলাদেশ অংশের ১২০ কিলোমিটার রেলপথ এখনও মিটার গেজে রয়ে গেছে। গঙ্গাসাগর থেকে বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা পর্যন্ত ব্রডগেজে রূপান্তরিত হয়নি। এমতাবস্থায় আগরতলা কলকাতার মধ্যে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে এখনই যাত্রীট্রেন চালানো মুশকিলই নয়,অসম্ভব। কেননা ভারতে ঐতিহ্যবাহী রেলপথের অংশ ছাড়া সর্বত্র ট্রেন চলে ব্রডগেজে।আর বাংলাদেশকে ব্যবহার করে ট্রেন চালানো মানে চালাতে হবে মিটার গেজে। আর তা না হলে আগে গঙ্গাসাগর ঢাকা অংশের রেলপথ ব্রডগেজে রূপান্তর করতে হবে। অদূর ভবিষ্যতে তেমন হওয়ার সম্ভাবনা কম।এর জন্য বিপুল অর্থের খরচ করতে হবে। ইতোমধ্যে ১২ কিলোমিটার ২৩০ মিটার দীর্ঘ রেলপথের জন্য খরচ হয়ে গেছে ৭৪৪ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা। অতিরিক্ত আরও ১৫৬ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা প্রয়োজন।’ ফলে বাংলাদেশ অংশে ১২০ কিলোমিটার রেলপথ মিটার গেজ থেকে ব্রডগেজে রূপান্তর আপাতত অলীক কল্পনা। ফলে প্রাথমিকভাবে এই রেলপথে শুধু চলাচল করতে পারে পণ্যবাহী ট্রেনই।আগরতলা – কলকাতা ভায়া ঢাকা রেলপথের মূল অংশ পড়েছে বাংলাদেশে। ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথের ৩৭৫ কিলোমিটারই রয়েছে ওখানে।পার্শ্ববর্তী দেশের আশুগঞ্জ,ভৈরব, ঈশ্বরদি, দর্শনা, আখাউড়া,গঙ্গাসাগর,বেনাপোল ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন রয়েছে এই রেলপথে। এর বাংলাদেশ অংশের ৩৭৫ কিলোমিটারের মধ্যে মিটার গেজ রেলপথে ১২০ কিলোমিটার। বাকি ২৫৫ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে ব্রডগেজে।


এই রেলপথের মধ্যে মাত্র ১২৫ কিলোমিটার রয়েছে ভারতে। এর মধ্যে ত্রিপুরা অংশে রয়েছে মাত্র ৫ কিলোমিটার ৫৬০ মিটার রেলপথ। বাকি প্রায় ১২০ কিলোমিটার রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। উল্লেখিত আগরতলা – আখাউড়া রেলপথ নির্মাণ শুরু হয়েছে ২০১৭ সালে। তখন অক্টোবর মাস।এখন ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যভাগ অতিক্রান্ত। এখনও শেষ হয়নি এর নির্মাণ। মাঝখানে কেটে গেছে প্রায় ৭ বছর। সেক্ষেত্রে আগরতলা – কলকাতা ভায়া ঢাকা যাত্রীট্রেন চলাচলে ১২০ কিলোমিটার রেলপথের গেজ পরিবর্তনের প্রশ্ন।এই রেলপথ মিটার গেজ থেকে রূপান্তর করতে হবে ব্রডগেজে।এর জন্য কত সময় লাগতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। তারপর আছে এর জন্য অর্থের সংস্থান কোথা থেকে হবে সেই প্রশ্ন। বাংলাদেশের মতো অংশে রেলপথ ব্রডগেজে রূপান্তরে আনুষঙ্গিক নানা হ্যাপা রয়েছে।সব মিলিয়ে এর জন্য সময় লাগতে পারে দুই থেকে আড়াই দশক।অবস্থায় নির্মীয়মাণ রেলপথে পণ্যবাহী ট্রেনই চলতে পারে পরবর্তী বহু বছর।এর জন্য আবার কলকাতার কোনও স্টেশন থেকে ব্রডগেজে পণ্য বহন করতে হবে।ঢাকার মতো কোনও স্টেশনে এই ট্রেন বোঝাই পণ্য নামাতে হবে। ফের মিটার গেজের ট্রেনে পণ্য বোঝাই করে আনতে হবে নিশ্চিন্তপুরে। জলপথে জাহাজে পণ্য এনেও মিটার গেজের ট্রেনে বোঝাই করা যেতে পারে। আপাতত আগরতলা আখাউড়া ছাড়া ভারত – বাংলাদেশ সংযোগ রক্ষাকারী পাঁচটি রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে পেট্রাপোল -বেনাপোল, গেজে – দর্শনা, সিঙ্গাবাদ রাহানাপুর, রাধিকাপুর – বিরোল রেলপথ।আসামে আছে মহিশাসন শাহাবাজপুর রেলপথ। এক্ষেত্রে নবতম সংযোজন হতে চলেছে আগরতলা – আখাউড়া রেলপথ। এই রেলপথ নিয়েই চলছে স্বপ্ন ফেরি করা। চলছে গল্পের গরু গাছে চড়ানোর পালা ৷ চলছে জোর প্রচার। এমনই বক্তব্য বিভিন্ন মহলের।

Dainik Digital

Recent Posts

গয়নার ল্যাবে তৈরি হলো বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম রুবি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বাংলায় চুনি, ইংরেজিতে রুবি।চুনির রং কতটা টকটকে লাল, তার উপর এই মানিকের দাম…

10 hours ago

মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বাঁচাতে পুলিশ প্রশাসনের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-চাঁদারজুলুম নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে তথাকথিত সুশাসনের রাজ্যে প্রশাসনের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে এলো।…

10 hours ago

কাজের বাজারে মন্দা!!

কেন্দ্রে ১০০ দিন পূর্ণ করল তৃতীয় মোদি সরকার।যদিও বর্তমান ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকারকে মোদি সরকার আখ্যা…

11 hours ago

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

1 day ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

1 day ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago