বিভৎস ট্রেন দুর্ঘটনা, ছিটকে গেল চলন্ত তিনটি মালগাড়ির কামরা!!
যান দুর্ঘটনা ও মৃত্যু মিছিল!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইদানীংকালে রাজ্যজুড়েই যানদুর্ঘটনার সংখ্যা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর সাথে পাল্লা দিয়ে পথচারী থেকে বাইক চালক থেকে যানবাহনের সওয়ারী প্রত্যেকেরই মৃত্যু হচ্ছে। কারো কোনও হুঁশ নেই। পুলিশ থেকে প্রশাসন সবাই বিষয়টিকে স্বাভাবিক ঘটনা বন্ধু হিসাবে মেনে নিচ্ছে। প্রতিদিন যানদুর্ঘটনায় মৃত্যু হচ্ছে। তাতে সপ্তাহে কত লোক, মাসে কত লোক, বছরে কত লোক মারা যাচ্ছে শুধু যানদুর্ঘটনায় এর কোনও হিসাব নেই। সংখ্যাটি আঁতকে ওঠার মতো। অথচ আমরা ক্যান্সার থেকে শুরু করে তামাক, যক্ষ্মা, হৃদরোগ প্রতিটি ক্ষেত্রে মৃত্যুর হিসাব করি। কত লোকের মৃত্যু হচ্ছে এর পরিসংখ্যান দেওয়া হয়।

সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বড় বড় আলোচনাচক্র হয়। চিকিৎসকরা, বিশেষজ্ঞরা ভালো ভালো কথা বলেন। সর্বশেষ করোনাকালে দেশে একটিও মৃত্যু নিয়ে মিডিয়ার প্রচার এমন মাত্রায় পৌঁছেছিল যে মানুষের মনে এই রোগ সম্পর্কে প্রবল আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। অথচ দেখা গেল কী – করোনায় গত ২০২০ সাল থেকে যত না লোকের মৃত্যু হয়েছে, এর কয়েকগুণ লোক বিড়ি খেয়ে মরে বছর বছর, মদ খেয়ে মরে, লিভার রোগে ভোগে। এমনকী যানদুর্ঘটনায় এর থেকে বেশি লোকের মৃত্যু হয়। অথচ এ নিয়ে কি কোনও প্রচার রয়েছে, না দেশের সরকারের না রাজ্যে রাজ্যে সরকারগুলির প্রচার রয়েছে, প্রশাসনের নজর রয়েছে। সবই চলছে স্বাভাবিক গতিতে। অন্যদিকে যানদুর্ঘটনার বলি হচ্ছেন কত না লোক।

আমাদের এই ছোট্ট রাজ্যের কথা ধরলে আমরা বলতে পারি এই রাজ্যে ইদানীং সময়ে যানদুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে। শুধু মানুষের মৃত্যুই হচ্ছে না, যানদুর্ঘটনায় অনেক পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।
এ রাজ্যে যানবাহনের সংখ্যা গত কয়েক বছরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। পরিসংখ্যান বলছে জাতীয় গড় থেকেও নাকি এ রাজ্যে যানবাহনের সংখ্যা বেশি। অর্থাৎ জনসংখ্যা অনুযায়ী এ রাজ্যে দ্বিচক্রযান, ত্রিচক্রযান, চার চাকার গাড়ির সংখ্যা বেশি আগরতলা শহরের কথা ধরলে লক্ষ্য করা যায় যে, আগরতলা শহরে বর্তমানে দ্বিচক্রযান এবং ত্রিচক্রযান অটো, টমটমের ঠেলায় সাধারণ মানুষের চলাফেরা করাই একপ্রকার দায় হয়ে পড়েছে। রাজ্যে বাইক, স্কুটি সহ দ্বিচক্রযান এবং ত্রিচক্রযানের যে এজেন্সিগুলি রয়েছে এদের থেকে পরিসংখ্যান নিলেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

প্রতিদিন যে হারে রাজ্যে বাইক, স্কুটি বিক্রি হচ্ছে তা আঁতকে ওঠার মতো ঘটনা। শুধু তাই নয়, চার চাকার গাড়ি বিক্রিও এ রাজ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। যানের সংখ্যা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে এর চাপ এসে পড়বে রাস্তাঘাটে। এছাড়া রয়েছে দ্বিচক্রযান চালকদের বাইক, স্কুটি চালনার সন্ত্রাস। একশ্রেণীর দ্বিচক্রযান চালকরা যেভাবে যানবাহন চালাচ্ছে তা বলার মতো নয়। কোনও নিয়মের তোয়াক্কা নেই। আইন মানার কোনও বিষয় নেই। রাজ্যে যেমন তুলনামূলকভাবে রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো। স্বভাবতই- চালকদের এতে পোয়াবারো। বেপরোয়া গতিতে বাইক, গাড়ি চালনায় কোনও বাধা নেই। স্বভাবতই দুর্ঘটনা বাড়ছে। মানুষের মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে।

একদিকে ট্রাফিক পুলিশের অদক্ষতা, যানের চাপ নিতে না পারা, বিপর্যস্ত ট্রাফিক ব্যবস্থা, আইন প্রয়োগ সঠিকভাবে না করা- সব কিছুই দায়ী যান সন্ত্রাসের লাগাম না টানার ক্ষেত্রে।রাজধানীতে ট্রাফিক সিগন্যালগুলির অবস্থাও চলছে অবৈজ্ঞানিকভাবে। ট্রাফিক ব্যবস্থা এখন পুরোপুরি চলছে ক্যামেরা নির্ভর। ক্যামেরা দিয়ে ফটো তুলে নোটিশ পাঠানো হচ্ছে আর ফাইন আদায় – এই হলো ট্রাফিকের কাজ। আর কোনও কাজ নেই। রাজধানীর বাইরে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য কেউ আছে কি না তা বোঝা দায়। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলছে। ট্রাফিক আইন মানা হচ্ছে কি না, লাইটের ব্যবহার, ট্রাফিক আইন মেনে হচ্ছে কি না দেখার কেউ নেই। ওভারস্পিড, ওভারটেক করা ইত্যাদিও যানদুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসাবে অনেক সময় চিহ্নিত হয়। এছাড়া যত্রযত্র ভিভিআইপি গাড়ির চলাফেরাও অনেক সময় যানদুর্ঘটনার কারণ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকে।

অতি সম্প্রতি দক্ষিণ জেলার ডিএমের গাড়ির ধাক্কায় দুই-দুইজনের মৃত্যু হলেও কারো কোনও হেলদোল চোখে পড়েনি। ট্রাফিক নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখা হলেই রাজধানীতে পুর কর্পোরেশন তার বাহিনী নিয়ে নেমে পড়ে হকার উচ্ছেদে। হকারের জন্যই নাকি রাজধানীতে – যানদুর্ঘটনা হচ্ছে, ট্রাফিক জ্যাম হচ্ছে। আদতে যানদুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সমস্ত দপ্তর এবং এর সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সকলেই চরম ব্যর্থ।যানদুর্ঘটনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র হিসাবে চিহ্নিত করে বড় আকারের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে সরকার, প্রশাসনকে। ছোট এ রাজ্যে যানদুর্ঘটনা এত মাত্রায় কেন, এত মাত্রায় গাড়িঘোড়া কাদের হাতে যাচ্ছে, এরা লাইসেন্স কীভাবে পাচ্ছে- সবকিছু খতিয়ে দেখা দরকার। অর্থাৎ যানদুর্ঘটনা রুখতে একটা আগ্রাসী ভূমিকা দরকার সরকারের। তাহলেই যদি কিছুটা লাগাম টেনে ধরা যায়।