যুদ্ধের অর্থনীতি

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

স্বাভাবিকভাবেই মাঝে মাঝে জানিতে চাহি যুদ্ধের খবরটা কী ? কী চলিতেছে ইউক্রেনে , রাশিয়া কোন ধারায় আক্রমণ তীব্র করিতেছে ? আজ যুদ্ধের খবর আর যুদ্ধক্ষেত্র হইতে পাওয়া যাইতেছে না বিশেষ । রুশ বাহিনী তার সীমান্ত এলাকায় যতটা আক্রমণাত্মক এবং কুশলী লড়াই লড়িয়াছিল ততটা কুশলী নয় কিভের আশেপাশে আসিয়া । তাহাদের আক্রমণও ততটা তীব্র নহে । তুলনায় ভাড়াটে সেনার অধিক ব্যবহার করিতেছে তাহারা । এরপরও রুশ বাহিনীর যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হইয়াছে । অপরদিকে ইউক্রেন ন্যাটো বা ইউরোপের কাহারো কাছ হইতেই মৌখিক সাহায্য ছাড়া আর কোনও সাহায্য না পাইয়া একাই লড়িতেছে ।

ইউক্রেনের বাহিনী রুশ সেনার মোকাবেলা করিতেছে দেশের সাধারণ নাগরিকদের ঢাল বানাইয়া । ফলত রুশ সেনার পক্ষে যুদ্ধ তাড়াতাড়ি শেষ করা বা ফতেহ পাওয়া কঠিন হইতেছে । কিংবা বলা যায় আদৌ কি ক্রেমলিন চাহিতেছে তাড়াতাড়ি যুদ্ধ শেষ করিয়া ইউক্রেনে তাহাদের পুতুল সরকার বসাইতে? যুদ্ধক্ষেত্রের এইটুকু খবর কোনও চিন্তাশীল পাঠককে সন্তুষ্ট করিতে পারে না । তাহাছাড়া যুদ্ধ কেবল যুদ্ধক্ষেত্রের জয় পরাজয় নহে কোনও কালেই । স্বাধীনতার পর আমেরিকা নামক দেশটি ৯০ খানা লড়াই করিয়াছিল কেবল শত্রু বিজয়ের জন্য নহে । বরং সারা বিশ্বে যেইসকল দেশের বিরুদ্ধে তাহারা যুদ্ধ করিয়াছিল সেইসকল দেশের প্রায় কেহই আমেরিকাকে আক্রমণ করে নাই । এই ক্ষেত্রে আলকায়দার টুইন টাওয়ার হামলাকে হিসাবে রাখিলেও এই কথাই বলিতে হয় , কারণ এই জঙ্গিরা কোনও দেশের প্রতিনিধিত্ব করে নাই । আমেরিকা সেই সকল যুদ্ধ লড়িয়াছিল নিজ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করিবার জন্য । সারা বিশ্বের সম্পদ তাহারা এই প্রকারে লুঠ করিয়া বিশ্বশ্রেষ্ঠ হইয়াছে । অর্থাৎ যুদ্ধ অর্থনীতিতেই ধনী আমেরিকা । সেই অর্থনীতি অন্যান্য দেশও নানান সময়ে কার্যকর করিয়াছে । ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থনীতি কোন অভিমুখে!এই কথা ঠিক যে এই যুদ্ধ হইতে ইউরোপ কোনও ফায়দা করিতে পারিতেছে না । আমেরিকার অর্থনৈতিক অবরোধের প্রস্তাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নও অর্থনৈতিক অবরোধের ডাক দিয়া মহাফ্যাসাদে পড়িল । ইউরোপের অধিকাংশ দেশ এমনকি জার্মানি , ইংল্যান্ডের মতন বড় শক্তি অবরোধ মানিতে চাহিতেছে না । তাহারা রাশিয়ার সকল শর্ত মানিয়া এমনকি রুবলেও রাশিয়ার জ্বালানি কিনিতে চাহিতেছে । আবার যেইসকল দেশ সামাজিক বা কূটনৈতিকভাবে যুদ্ধে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াইয়া রাশিয়াকে নিন্দা করিয়াছে তাহাদের দেশের গ্যাসের জোগান বন্ধ করিয়া দিয়া ইউরোপের অন্যান্য দেশকে সবক শিখাইয়াছে । যেইহেতু ইউরোপের অধিকাংশ দেশ রাশিয়ার জ্বালানির উপর নির্ভরশীল তাই তাহার অপমানজনক শর্তেও রাশিয়ার জোগান পাইতে চাহিতেছে । স্পষ্টতই রাশিয়া এই যুদ্ধে তাহার ব্যবসা নির্বিঘ্নে চালাইয়া যাইতে পারিয়াছে । বরং বলা যায় এই যুদ্ধে তাহার যে অতিরিক্ত ব্যয় করিতে হইতেছে ইহা কোনওভাবেই তাহার অর্থনীতিকে কাবু করিবে না । এই হইলো সাদা কালো হিসাব ।

কিন্তু ইহার বাহিরেও যেইসকল সংবাদ ভাসিয়া আসে , সেই সংবাদ কেবল চমকপ্রদই নহে , রাশিয়ার শত্রু বা প্রতিপক্ষ শক্তির জন্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগের । আমেরিকায় গত দুই শতাব্দীর ব্যাঙ্ক এবং শিল্প উৎপাদনের বড় প্রতিষ্ঠান জে পি মর্গান জানাইয়াছে , অবরোধ জারি করিবার পর যেমন ভাবা গিয়াছিল রাশিয়ার অর্থনীতি আগের তুলনায় বরং ভালো হইয়াছে । মন্দা সামান্যই প্রভাব ফেলিয়াছে । এই ওয়াল স্ট্রিট ব্যাঙ্ক জানাইয়াছে তাহারা ব্যবসায়ী মহলে এক সমীক্ষা করিয়া এই তথ্য জানিয়াছেন । দেশটি তাহার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দিয়াছিল লেখচিত্র বাস্তবে সেই দিকেই ধাবিত । গত মার্চ মাসে পৃথক সমীক্ষায় জে পি মর্গান বলিয়াছিল রাশিয়ার জিডিপি এই বৎসর ৭ শতাংশে থাকিবে । এইবার বিশ্ব ব্যাঙ্ক বলিতেছে প্রবৃদ্ধি সাড়ে আট শতাংশ ছাড়াইয়া যাইবে । মর্গান স্বীকার করিতেছে তাহারা মার্চ মাসে যেই পূর্বাভাস দিয়াছিল তাহার তুলনায় ভালো অবস্থায় রহিয়াছে সেই দেশের অবস্থা । প্রবৃদ্ধির হার আরও ঊর্ধ্বগামী । স্বভাবতই আমেরিকা সহ যেইসকল শক্তি ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার বিরোধী ছিল তাহারা এইবার মুখ লুকাইতে শুরু করিয়াছে । রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ইস্যুতে নিন্দা প্রস্তাব আনা যায় নাই চিনের বিরোধিতা আর ভারতের নীরবতায় । আবার আমেরিকা রাশিয়াকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করিলেও তাহার মিত্রদেশ তাহা করিল না । ব্রিটেন প্রথম হইতেই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই রাশিয়ার জ্বালানিবাহী জাহাজগুলিকে স্বাগত জানাইয়াছে । জার্মানি জানাইয়া দিয়াছে তাহারা রাশিয়া হইতে জ্বালানি কিনিবে । ইহার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সকল দেশই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করিয়া চলিয়াছে এবং রাশিয়ার কাছ হইতে জ্বালানি নিতেছে।অতএব ইহার পর ইউক্রেন যুদ্ধ আরও কিছুকাল চলিলে তাহার ইতর বিশেষ ফারাক পড়িবে না ক্রেমলিনের উপর । বাকি রহিল যুদ্ধক্ষেত্রের ফলাফল । তাহাও আর কোন সাসপেন্স রাখিতে পারিতেছে না।

Dainik Digital

Recent Posts

নি:শব্দে এগোচ্ছে চিন!!

প্রতিবেশী বাংলাদেশে গত ছয়মাস ধরে চলতে থাকা অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একেবারে নিঃশব্দে এগিয়ে…

9 hours ago

নেতা-মন্ত্রীদের বারবার ঘোষণা সত্ত্বেও গ্রুপ ডি নিয়োগ হচ্ছে না!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা করছে না সরকার। জেআরবিটির মাধ্যমে গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ নিয়ে টালবাহানা…

9 hours ago

স্মার্টসিটি প্রকল্পের কাজে বন্ধ উড়াল সেতু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যেররাজধানী শহর আগরতলার যোগাযোগ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে উড়াল সেতু। শহরের পশ্চিম…

9 hours ago

বার্ষিক পরীক্ষার সূচি নিয়ে শিক্ষা দপ্তরের রসিকতায় চরম ক্ষোভ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যেরসরকারী স্কুলে পরীক্ষার সূচি প্রকাশ হতেই রাজ্যের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের উপর জুলুমের অভিযোগ উঠেছে…

9 hours ago

রাজ্যের প্রতীকে স্বীকৃতি কেন্দ্রের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট একটি প্রতীককে ত্রিপুরা সরকারের রাজ্য প্রতীক/লোগো হিসেবে ব্যবহারের…

9 hours ago

চূড়ান্ত সীলমোহর পড়বে ১০টি সাংগঠনিক জেলা সভাপতির নামে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকালই বিজেপির দশটি সাংগঠনিক জেলার সভাপতিদের নামে চূড়ান্ত সীলমোহর পড়বে।…

9 hours ago