যুদ্ধের গন্ধ বাতাসে!!

পহেলগাঁও হামলার প্রত্যাঘাত এতটা জোরালো এবং ভয়াবহ হতে পয়ল পারে সেটা নিশ্চয়ই পাকিস্তানের ভাবনার মধ্যেই স্থান পায়নি।আর সেই কারণেই মঙ্গলবার মধ্যরাতে ২৫ মিনিটের ভারতীয় বাহিনীর দাপুটে প্রত্যাঘাতে আক্ষরিক অর্থেই পাকিস্তানকে ‘দিশাহারা’ অবস্থাতেই দেখা গেছে।কিন্তু ভারতের জবাবের পর প্রাথমিক ধাক্কা সামলে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ সেদেশের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে ‘দিল্লীকে মুখের উপর জবাব’ দেওয়ার হুংকার দিয়েছিলেন।কিন্তু কথার হুংকার এবং বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে আকাশ-জমিন ফারাক রয়ে গেছে সেটা একটু একটু করে সন্ত্রাসীদের লালন ও পালন কর্তা পাকিস্তান উপলব্ধি করতে পারছে।আর সে কারণেই প্রথমে হুমকির পর এখন ভারতীয় অভিযান নিয়ে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি কুড়োনোর চেষ্টায় নেমেছে শাহবাজ সরকার। ভারতের অভিযান নিয়ে বিশ্ব জনমতকে কাছে পেতে ইসলামাবাদ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সমস্ত ঘটনার বিবরণ দিয়েছে। পাকিস্তানের একনিষ্ঠ বন্ধু তুরস্ককেও ভারতীয় অভিযান সম্পর্কে বিবরণ দিয়েছেন সেদেশের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার। কিন্তু তারপরেও হালে তেমন পানি না পেয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধি দলকে মুজাফরাবাদ নিয়ে যায় শরিফ সরকার। সেখানে ভারতীয় অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী মসজিদ এবং মাদ্রাসা ঘুরিয়ে দেখানো হয় রাষ্ট্রসংঘের প্রতিনিধিদের। আর্থিকভাবে ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে থাকা পাকিস্তানের পাশে সেরকমভাবে চিনকেও দেখা যাচ্ছে না। ভারতের প্রত্যাঘাতের পর যেমনটা আশা করা গিয়েছিল, তেমনটা প্রতিক্রিয়া নেই চিনের। সবমিলিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে নালিশ আর সহানুভূতি আদায়ের জন্য সম্ভাব্য সব রকমের কৌশল ও অপপ্রয়াস সত্ত্বেও পাকিস্তানের ৬ মের রাতের বিভীষিকা কাটছে না। তাই এবার কূটনৈতিক পথেও হাঁটতে চলেছে ইসলামাবাদ। ভারতের প্রত্যাঘাতের পর যুদ্ধ আবহের মধ্যেই ভারতকে নিরস্ত করতে আন্তর্জাতিক মহলেরও দ্বারস্থ হচ্ছে শাহবাজ সরকার। পূর্বঘোষিত সফর ছাড়াই বুধবার সৌদি বিদেশপ্রতিমন্ত্রী আচমকা ভারতে এলেন এবং ভারতের প্রতিনিধির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলেন। কূটনৈতিক এই দৌড়ঝাঁপ এখানেই থেমে থাকেনি। বৃহস্পতিবার ভারত-পাক উত্তেজনার আবহেই নয়াদিল্লী এলেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী সৈয়দ আবাদ আরাগচি। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আচমকা বিশ্বনেতাদের এই দৌড়ঝাঁপকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন।
একটা কথা এখানে বলে রাখা আবশ্যক যে, মঙ্গলবার পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতের অভিযান কোন ভাবেই যুদ্ধ নয়। এ নিঃসন্দেহে ভারতের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের একটি পর্যায় মাত্র।সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্রহিসাবে পাকিস্তানের বিশ্বজুড়ে পরিচিতি রয়েছে। খোদ পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন সেনার অভিযান এবং লাদেনকে নিকেশ করার ঘটনাক্রম হচ্ছে এর অন্যতম জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। পাকিস্তানের সন্ত্রাসী কাজের সবচেয়ে বড়মাত্রায় শিকার ভারত। বেশি অতীতের দিকে না তাকিয়েও বলা যায়, ২০১৬ সালে জম্মু কাশ্মীরের উরিতে ১৯ ভারতীয় সেনা হত্যা, ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় ৪০ ভারতীয় আধা সেনাকে হত্যার ঘটনা, মুম্বাই তাজ হামলা, সংসদ ভবন আক্রমণ থেকে শুরু করে সর্বশেষ জম্মু কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভারতীয় পর্যটকদের উপর যে নারকীয় সন্ত্রাস পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসীরা চালিয়েছে, শেকড় সহ তাকে উপড়ে ফেলার জন্য ভারতের সামনে অপারেশন সিঁদুর এর চেয়ে পরিমিত, সুনির্দিষ্ট এবং অপ্ররোচনামূলক বিকল্প আর খোলা ছিল না। হয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া সহ তাবড় বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহ নানা ভাবে ভারত-পাকিস্তানের মতো দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রকে সংযত হওয়ার, আরও সংঘাতে জড়িয়ে না পড়ার এবং উত্তেজনা কমানোর পরামর্শ দিতেই পারে। কিন্তু একটা কথা সকলের জানা থাকা দরকার। উত্তেজনা কমানোর কথা বলা যত সহজ, করা ততই কঠিন। সেদিক থেকে পাকিস্তানের আকাশে দুর্যোগের কালো মেঘ আরও অপেক্ষা করছে তা বলাই বাহুল্য।