রং বদলাচ্ছে বাঘের, হলুদ ডোরাকাটার বদলে সোনালি-কালো!!

 রং বদলাচ্ছে বাঘের, হলুদ ডোরাকাটার বদলে সোনালি-কালো!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-মহারাষ্ট্রের সোলাপুরে ২০১২ সালে ওয়াইল্ডলাইফ বায়োলজিস্ট অমোলকুমার লোখান্ডে এবং সমীর বাজারু প্রথম ক্যামেরাবন্দি করেন কালো নেকড়ের।ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার ময়ূরেশ হেন্দ্রে ২০১৯ কাজিরাঙা ন্যাশনাল সালে পার্কে ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন অসমের একমাত্র কালো-সোনালি রয়‍্যাল বেঙ্গল টাইগারকে।বছর সাতেকের মধ্যে বাঘের রঙের এই বদল দেখেই বিজ্ঞানের পাতা ওল্টাতে শুরু করেছেন প্রাণীবিজ্ঞানীরা।আর তারপরেই উঠছে দু’টি প্রশ্ন। প্রথমটি হল; তাহলে কি মিলিয়ে যাচ্ছে বাঘের শরীরের হলদে-কালো ডোরাকাটা দাগ?আর সেই সঙ্গে দ্বিতীয় প্রশ্নটিও মাথাচাড়া দিচ্ছে। তাহল; তাহলে কি বদলাচ্ছে পরিচিত রয়‍্যাল বেঙ্গল টাইগাররের গায়ের রং? সম্প্রতি বিরল কালো এবং ডোরাকাটা সোনালি দাগের বাঘের দেখা মেলার খবর স্বীকার করে নিয়েছেন ব্যাঘ্র গবেষক ঊমা রামকৃষ্ণণ। তিনি এপ্রসঙ্গে একটি রিপোর্ট কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ দফতরে জমাও দিয়েছেন বলে খবর।তার রিপোর্টে কেবল সোনালি আর কালো রয়‍্যাল বেঙ্গল টাইগারের কথাই উল্লেখ নেই।আছে কালো নেকড়ের কথাও।কিন্তু জঙ্গলে পাওয়া এই জন্তুগুলো বিরল না কোনও নতুন প্রজাতির, তা নিয়েও জোর জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।সাতের দশকে ওডিশায় বেশ কিছু কালো বাঘ দেখা গিয়েছিল।চোরাশিকারিদের হাত থেকে ন’য়ের দশকে কালো বাঘ উদ্ধার করাই ছিল সেই রাজ্যের প্রধান চ্যালেঞ্জ। কারণ সোনালি-কালো ডোরাকাটা বাঘ এবং কালো নেকড়ে আগে কখনও ভারতে দেখা যায়নি।তবে সম্প্রতি ওডিশা, অসম এবং মধ্যপ্রদেশে এই বিরল বাঘ ও নেকড়ে দেখা গিয়েছে।আর এই খবরে শীলমোহর দিয়েছে বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্স এবং দেরাদুনের ওয়াল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া।
ওডিশার সিমলিপাল জঙ্গলে যখন কালো নেকড়ের হদিশ মিলেছিল তখন তা নিয়ে বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের পেশ করা রিপোর্টে সেই ঘটনাকে উল্লেখ করা হয়েছিল;এইটি সিউডো মেলানিস্টিক বাঘ।যার অর্থ জিনের পরিবর্তনে বাঘের শরীরের মেলানোসাইট হরমোনের তারতম্যের জন্য এই পরিবর্তন।
রয়‍্যাল বেঙ্গল টাইগারগুলির রং কালো হলেও আবছাভাবে হলুদ ডোরাকাটা ভাবও কিন্তু বজায় রয়েছে। ২০২১ সালে বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্স গবেষণায় জানতে পারে জিনগত পরিবর্তনের কারণেই এই বাঘগুলির গায়ের রং বাকিদের থেকে ভিন্ন। বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের
মলিকুলার ইকোলজিস্ট উমা রামকৃষ্ণণ বলেন, ‘এই ধরণের বাঘের শরীরে দু’রকমের জিন থাকে।একটি প্রচ্ছন্ন এবং অপরটি প্রকট।এতদিন প্রকট বৈশিষ্ট্যটিই প্রকাশ পেয়েছে। গত এক দশক ধরে বাঘের শরীরে প্রচ্ছন্ন জিন ক্রমে প্রকাশ পাচ্ছে।বিচ্ছিন্নভাবে থাকার কারণে এদের বংশবিস্তারও ঘটছে দ্রুত।’
ওডিশার মুখ্য বনসংরক্ষক এবং ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেন সুশান্ত নন্দ বলেন, ‘২০১৪ সালে সিমলিপালের ছ’জন পুরুষ বাঘের মধ্যে একটি ছিল আবছা কালো রংয়ের। ২০১৮-১৯ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২-তে। ২০২৩-২৪ সালে তা পৌঁছে গিয়েছে ১৬-তে।’২০১৯ সালে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার ময়ূরেশ হেন্দ্রে কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্কে ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন অসমের একমাত্র সোনালি রয়‍্যাল বেঙ্গল টাইগারটিকে।কোন জিন থেকে বাঘের গায়ের রং এমন সোনালি হল তা এখনও গবেষণায় পাওয়া যায়নি। কাজিরাঙা থেকে এই মর্মে নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। খণ্ডিত কোনও ব্যাঘ্র প্রজাতি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বসবাস করতে শুরু করার পর জিনগত এমন পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করছেন উমা।
গত সত্তর বছরের ইতিহাসে ভারতে কোনও কালো নেকড়ে ছিল না। ফলে এই বিরল প্রজাতির নেকড়ে নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন বিশেষজ্ঞরা। মহারাষ্ট্রের সোলাপুরে ২০১২ সালে ওয়াইল্ডলাইফ বায়োলজিস্ট অমোলকুমার লোখান্ডে এবং সমীর বাজারু প্রথম কালো নেকড়ে ক্যামেরাবন্দি করেন।বারো বছর পর চলতি বছর এপ্রিল মাসে পর্যটন ব্যবসায়ী রূপেশ কুকাড়ে মধ্যপ্রদেশের পান্না জাতীয় উদ্যানে তিনটি কালো নেকড়ে দেখতে পান যার রেকর্ড রয়েছে বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সে।
বৃহৎ মাংসাশী প্রাণীদের নিয়ে গবেষণারত বিলাল হাবিব বলেছেন, ‘ভারতে কোনও কালো নেকড়ে নেই।ফেরার বা ফ্রি রেঞ্জিং কুকুরের প্রজাতির সঙ্গে ক্রস ব্রিডিংয়ের ফলেই এই সঙ্কর প্রজাতির নেকড়ের জন্ম হয়ে থাকতে পারে। নেকড়ের সংখ্যা কমে যাওয়ার জন্য এমন সঙ্কর প্রজননের ব্যবস্থা হয়ে থাকতে পারে। তবে দেখতে হবে কী ভাবে এই কালো নেকড়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের স্বভাবও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন অথবা ভবিষ্যতে অন্য নেকড়ের জন্য তারা ক্ষতিকারকও হয়ে উঠতে পারে।’

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.