বিভৎস ট্রেন দুর্ঘটনা, ছিটকে গেল চলন্ত তিনটি মালগাড়ির কামরা!!
রকেট সায়েন্সের বাজেট !!

বাজেট বুঝিতে রকেট সায়েন্স জানিতে হয় না। সেই ভাবে বলিতে গেলে বাজেট কোনও বুঝিবারই বিষয় নহে। তাহা হইলে বাজেটের ভালোমন্দ কী মতে বুঝা যাইবে? এই প্রশ্নের জবাব অতি সরল। বিশেষত যেই দেশের দুই তৃতীয়াংশ মানুষকে মাঙনা চাল দিতে হয় প্রতি মাসে তাহাদের জন্য বাজেটের ভালোমন্দ যাহা হইতে পারে তাহাই মাপকাঠি। জেএনইউর অর্থনীতির মেধাবী ছাত্রী দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেট ভাষণ শুনিবার পর নানান বিশেষজ্ঞদের বাজেট বিশ্লেষণ শোনা যাইতেছে। মানুষ পড়িতেছেন সেই সকল চুলচেরা বিশ্লেষণ। এ যেন সহজ কথা কঠিন করিয়া প্রমিত ভাষায় কতটা দুর্বোধ্য করিয়া বলা যায় ইহারই প্রতিযোগিতা।এই কথা সহজেই অনুধাবন করা যায় যে মোদি জমানায় এই বাজেটর অনেকটাই ব্যতিক্রমী। এই ব্যতিক্রম মোদির আমলের অন্য সকল বাজেটে সঙ্গে ২০২৫-২৬ অর্থ বৎসরের বাজেটের। কিংবা বলা যাইতে পারে একাদশ বর্ষের এনডিএ জমানায় এই বাজেট প্রথম এনডিএ বাজেট। আগের দশ বৎসরে এনডিএ নামে থাকিলেও কার্যক্ষেত্রে বিজেপিই ছিল। এইবারই নামে ও কাজে সকল ক্ষেত্রে এনডিএ মানে এনডিএ। সকলের মত্যানুসারে বিশেষত চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতীশ কুমারের মত্যানুসারে বাজেট। এই বাজেটের সঙ্গে কেবলমাত্র মোদি-শাহ-সীতারামনের বাজেটের ব্যবধানা থাকিবেই।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কথায় কথায় মোদি সরকারের ‘ভুল’ অর্থনীতি বলিয়া থাকে বটে কিন্তু বাস্তবে মোদি সরকারের কোনও আলাদা অর্থনীতি নাই। ভারত উদারনৈতিক অর্থনীতিরই অঙ্গ। যে আর্থিক নীতির সূচনা ঘটিয়াছিল প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাওয়ের আমলে সদ্য প্রয়াত তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মন্ত্রিত্বকালে। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকার একটানা আরও দশ বৎসর উদার অর্থনীতির নামে আর্থিক সংস্কার চালাইয়াছে, তবে একবগগা নহে, গরিব মানুষের জন্য ন্যূনতম রক্ষাকবচ প্রাখিতে গিয়া সংস্কারে কিছু রাখঢাকও রাখিয়া চলিয়াছিল। ফলে অর্থনীতি উদার কিংবা উদ্যোম হইলেও আন্তর্জাতিক মন্দা সরাসরি আসিয়া ধাক্কা মারিতে পারে নাই।মোদি সরকার প্রতিষ্ঠিত হইবার পর অর্থনীতিতে আর রাখঢাক রহিল না। গরিব মানুষের জন্য রক্ষাকবচ দুর্বল হইলো। এই কথা ঠিক যে কংগ্রেস দেশবাসীর খাদ্যের অধিকার আইন তৈয়ার করিয়া গেলেও তাহার বাস্তবায়ন হয় মোদি আমলে। দেশের ১৪০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৮০ কোটি মানুষ রেশনে মাঙনা চাল পাইতেছে। অন্যদিকে তুলনায় এমজিএন রেগার কাজ কমিয়া গিয়াছে। একশো দিনের কাজের প্রকল্প প্রায় উঠিয়া যাইবার পথে। এই প্রকল্পটি দুর্বল হইয়া পড়ায় মানুষের হাতে অর্থের জোগান যেমন কমিয়া গিয়াছে, কমিয়াছে ক্রয়ক্ষমতা। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিবার অর্থ ঘরোয়া বাজার দুর্বল হইয়া যাওয়া, এককথায় বিকেন্দ্রীভূত যে পুঁজি তাহার সামনে সমূহ বিপদ ঘনাইয়া আসা। গ্রামীণ কারিগরি, কৃষিনির্ভর পরম্পরাগত স্থানীয় শিল্প-বাণিজ্য একটি দেশের অর্থনীতির শরীরে অসুখ প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈয়ার করিয়া থাকে। এইগুলিকে রক্ষা করিতে পারিলে ক্রয়ক্ষমতা অটুট বাখা যেমন সম্ভব তেমনি খাদ্যে মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতির গ্রাস কমাইয়া রাখা যায়।
দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করিবার দাওয়াই হিসাবে মোদি সরকার বরাবর আগ্রাসী উদারীকরণের পথে গা ভাসাইয়াছে। এই পথে নির্ভরতা বাড়িয়াছে দেশীয় বহুজাতিক কোম্পানিগুলির ওপর। পরিতাপের বিষয় হইলো পশ্চিমা দেশগুলির বহুজাতিক সংস্থা মহাকাশ বিজ্ঞান, সামরিক ক্ষেত্র, তথ্যপ্রযুক্তিগত বিষয়ে অধিক মনোযোগী হইয়া বিশ্বে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হইয়া উঠিয়াছে আর আমাদের দেশের কর্পোরেট সেক্টরের অধিক নজর কৃষকের মাণ্ডি, রাস্তার পার্শ্বের চা অলার পরিষেবা আর ধাবার খাবারের আন্তর্জাতিকীকরণের দিকে। ইহাতে দেশের কোটি কোটি কৃষি অনুসারী ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষ রাজপথের পার্শ্বে দোকানির জীবনজিবিকায় লাগি পড়িতেছে। সেই সকল মানুষের কথা বাজেটে আসিয়ছ কিনা, ইহাই বুঝিতে হয়। ইহাই বাজেটকে ভালোমন্দ বুঝিবার মাপকাঠি। এই বাজেট
বিজেপির বাজেট পরম্পরা হইতে অনেকটা সরিয়া আসিয়াছে বটে কিন্তু সেই সকল মানুষের কথা ভাবিবার মতন সাহস করিতে পারে নাই। কারণ সেই বিশাল সংখ্য মানুষের সামনে আজ প্রথম বিপদ হইলো মূল্যবৃদ্ধি। মূল্যবৃদ্ধি কী করিয়া কমিবে তাহার কোনও দাওয়াই কিন্তু বাজেটে স্পষ্ট নহে। বাজেট মধ্যবিত্তের ঘর অবধি আসিতে পারিয়াছে, এর নিচে নহে। যে ৮০ কোটি মানুষ মাঙনা চাল লইয়া থাকেন তাহাদের কতজন আয়করের আওতায় আসিবেন সেই হিসাব কি আমাদের আছে? তাহাদের কত শতাংশের ঘরে অ্যানড্রয়েড মোবাইল আছে যে গ্রামের সরকারী স্কুলে ব্রডব্যান্ড চালুর সিদ্ধান্তে তাহাদের সন্তানসন্ততি উপকৃত হইবে? তবে অসংগঠিত শ্রমিকদিগের জন্য প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার মতন বাজেটে কতকগুলি প্রস্তাব সরকারের সাহসিকতার পরিচায়ক।