প্রশ্নের মুখে বৈধ সীমান্ত বাণিজ্য, আমদানির তুলনায় রপ্তানি নামমাত্র, পরিস্থিতি চিন্তাজনক!!
রসিকতা ও রসবোধ!!

রাজনীতিকদের লইয়া, সাংবিধানিক পদাধিকারীদের লইয়া সংবাদ মাধ্যমে কৌতুক, কার্টুন,সমালোচনা কোনও নতুন বিষয় নহে।মহাত্মা গান্ধী কোনদিনই প্রশাসনিক আসনে আসেন নাই, তথাপিও তাহাকে লইয়া তাহার বিরোধী মতের লোকেরা অজস্র কার্টুন বানাইয়াছেন।মহাত্মা গান্ধীকে দশ মাথার রাবণ বানানোর ইতিহাস আজও চোখের সামনে ফুটিয়া উঠে। নেহরু, ইন্দিরা, মোরারজি, অটল বিহারী হইতে শুরু করিয়া কেহই বাদ যান নাই। আবার ব্যঙ্গ কবিদের কথায় ছত্রেছত্রে শাসকের বা বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকে লইয়া বিদ্রূপ, কটাক্ষ কখনও হাল্কা কখনও তীব্র হইতে দেখা গেছে। কৌতুক বা কার্টুন এমনি এমনি তৈয়ার হয় না। এর পশ্চাতে গভীর শিল্পভাবনার পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক বোধ কাজ করে।
আমাদের দেশে সংবাদ জগতে কে শঙ্কর পিল্লাই, আরকে লক্ষ্মণ, আবু আব্রাহামের মতন ব্যক্তিত্ব কেবল বিদ্রূপাত্মক কার্টুন আঁকিয়া দেশবাসীর জনমানসে অমর হইয়া আছেন। তাহারা সকলেই রাজনৈতিক কার্টুন বানাইতেন। তাহাদের বাইরেও অজস্র কার্টুনিস্ট আমাদের দেশের পাঠককূলকে নিত্য মানসিক খোরাক দিয়েছেন। আজ সংবাদপত্রের একচেটিয়া নাই। প্রযুক্তির কল্যাণে অন্যান্য মাধ্যমও সমান তালে আগাইতেছে। সেই সঙ্গে বদলাইতেছে কৌতুকের চেহারা। কিন্তু দেখা যাইতেছে এই সকল শিল্পের গভীরতা বা রস বুঝিতে যে রসবোধ দরকার, যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দরকার তাহার ঘাটতি যেন মারাত্মকভাবে বাড়িতেছে।রাজনীতিকেরা যেন দিন দিন অসহিষ্ণু হইতেছেন। নিজেদের ইমেজকে ইমিটেশনে মুড়াইতে গিয়া ভুলিতেছেন, রাজনীতিকেরা আসলেই জনগণের খাস সম্পত্তি। বিশেষ সাংবিধানিক পদাধিকারী যাহারা জনগণের ভোটে জিতিয়া জনসেবার প্রতিশ্রুতিতে গদিতে বসিতেছেন তাহারা জনদাস ব্যতিরেকে আর কিছুই নহেন। তাহাদের কাজকর্ম লইয়া ব্যঙ্গ বিদ্রূপাত্মক কোনও শিল্পকর্ম অসাংবিধানিক নহে। দেশের সংবিধান নাগরিককে সেই অধিকার দিয়া রাখিয়াছে।
পরিতাপের বিষয় আজ যাহারা আমাদের দেশে রাজনীতিতে আসিতেছেন তাহারা ব্যঙ্গ বিদ্রূপ, কৌতুক সহ্য করিতে পারেন না অনেকেই। কিংবা বলিতে হয়, সেই সকল শিল্পকর্ম বুঝিবার ক্ষমতা ও মানসিকতা অধিকাংশেরই নাই। তাহারা কোনভাবেই বুঝিতে চাহেন না, কৌতুক কখনোই বাস্তব নহে, ইহা কাহারো ভাবনামাত্র। এই ভাবনা অন্যের ভালো লাগিতে পারে, নাও লাগিতে পারে। ইদানীং দেশ বিদেশে ভারতীয় এক কৌতুকশিল্পী আলোচনার বিষয় হইয়াছেন। তিনি মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী শিন্ডেকে লইয়া প্যারোডি গান গাইয়াছেন। সেই অপরাধে শিল্পীকে না পাইয়া যে প্রেক্ষাগৃহে কৌতুক পরিবেশন করিয়াছিলেন এক হোটেলের সেই প্রেক্ষাগৃহ ভাঙচুর করিলেন শিন্ডে সেনার সমর্থকরা। দেখা গেল হোটেলের সেই প্রেক্ষাগৃহে দুই আড়াইশোর অধিক দর্শকের সংকুলান অসম্ভব। কিন্তু ভাঙচুরের ঘটনার পর সেই কৌতুক কয়েক লক্ষ মানুষ দেখিয়া ফেলিয়াছেন, এখনও বাড়িতেছে এর দর্শক। সামাজিক মাধ্যমে সেই ভিডিও এতটাই জনপ্রিয় হইয়াছে যে কুণাল কামরা নামের সেই কৌতুক শিল্পীর আচমকাই রোজগার বাড়িয়া গিয়াছে।
শিন্ডে সেনার দাবি ছিল, এই ধরনের ব্যঙ্গ করিবার দায়ে শিল্পীকে ক্ষমা চাইতে হইবে। পণ্ডিচেরীতে বসিয়া শিল্পী জানাইয়াছেন, তিনি ক্ষমা চাইতে রাজি নহেন। টেলিফোনে তাহাকে প্রাণপাতের হুমকিও দেওয়া হয়। নেটিজেনরা শিল্পীর এই ধরনের সাহসিকতায় পুলকিত। বিদেশে যে সকল ভারতীয় ব্লগার, ইউটিউবার রহিয়াছেন, তাহারা সকলে এই কৌতুক শিল্পীর পাশে দাঁড়াইয়াছেন। এই সময়ে শিল্পীর বিরুদ্ধে মামলা চলিতেছে। পুলিশ তাহার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কাগজপত্র পরীক্ষা করিতেছে। এই শিল্পী বাস্তবে কাহারো / কোনও শক্তির এজেন্ট কি না সেই সকল বিষয় পরীক্ষা করিবে পুলিশ। একজন ব্যঙ্গ শিল্পীকে, কৌতুককারীকে দেশের প্রশাসন কীভাবে লইবে তাহা দেশের নীতি প্রণেতারাই স্থির করিবেন। কারণ কোনও নাগরিকই দেশের সার্বিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে নহেন। তবে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী বারংবার বলিতেছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়, রীতিনীতিতে আলোচনা সমালোচনা থাকিবে। তিনি আক্ষেপ করিয়াছেন, আজকাল সেই রকম সমালোচনা হইতেছে না।
তবে এই কথা ঠিক যে কুণাল কামরা নামে কৌতুক শিল্পীর রাতারাতি বিখ্যাত বা বিতর্কিত হইয়া উঠিবার এই পর্যায়ে বিশ্রাম পাইতেছে আওরঙ্গজেবের সমাধি। সেই সমাধি মহারাষ্ট্রের সীমানার বাহিরে ছুড়িয়া ফেলা হইবে কি না, তা লইয়া এখন আর কাহারও মাথাব্যথা নাই। যেন হঠাৎই ঝড় থামিয়া অন্যত্র বর্ষণ শুরু হইয়াছে। মহারাষ্ট্রের রাজনীতি সপ্তাহকাল ধরিয়া ঘুরপাক খাইতেছে কেবল কুণাল কামরাকে ঘিরিয়া। ৩৬ বৎসর বয়সি এই মুম্বাইবাসী কৌতুকশিল্পীকে ছিঁড়িয়াখুঁড়িয়া ছারখার করিয়া দিতে কোমর কষিয়াছে শিন্ডে সেনারা। কেবল শিবসেনারাই নহে, কুণালের পেছনে নামিয়া পড়িয়াছে পুলিশও। কারণ মুখ্যমন্ত্রী ফাডনবিশও কৌতুক শিল্পীর কৌতুকের নিন্দা করিয়াছেন। ফলে ঔরঙ্গজেবকে সময় দিতে পারিতেছেন না কেহই।
রাজনীতিবিদদের লইয়া নিছক কৌতুকে একনাথ শিন্ডের নাম উল্লেখ না করলেও শিল্পী শিন্ডের এলাকা থানে, তাহার দাড়িসর্বস্ব মুখ ও চোখের চশমা, রাজনীতিতে আসিবার আগেকার তাহার অটোচালকের পেশা উল্লেখ করিয়া গানের কথায় শিন্ডেকে তিনি ‘গাদ্দার বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। পৌনে এক ঘন্টার ভিডিওতে নরেন্দ্র মোদি, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতো রাজনীতিকদের পাশাপাশি শিল্পপতি আম্বানি, আনন্দ মাহিন্দ্রাদের লইয়া ঠাট্টা-মশকরায় ধর্মান্ধতা, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের ভন্ডামির কথা বলিয়াছেন। তাহার কথায়, এই গানে তিনি ‘বিকশিত’ ভারতের ছবি আঁকিয়াছেন। অনুষ্ঠানের শেষে রাহুল গান্ধীর কায়দায় সংবিধানের হ্যান্ডডবুক হাতে লইয়া কুণাল বলিয়াছেন, দেশের মানুষকে বাকস্বাধীনতা দিয়াছে এই সংবিধান। কুনাল তখন কি জানিতেন তাহার নিছক কৌতুকের কারণে শিন্ডে বলিবেন,’কৌতুক আমরাও বুঝি। বিদ্রূপও।কিন্তু সব কিছুর একটা সীমা থাকিবে। সীমা অতিক্রমের সাজা ভুগিতে হয়।’