রাইসিনা হিলের লড়াই
পর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সোমবার দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত হলো ১৫ তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটগ্রহণে। একদিকে এনডিএ’র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু , অন্যদিকে কংগ্রেস সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলির সম্মিলিত প্রার্থী যশবন্ত সিনহা । নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সকাল দশটা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয় । ভোটগ্রহণ চলে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত । মোট ভোটার হচ্ছে চার হাজার আটশ জন । এদের মোট ভোটমূল্য হচ্ছে দশ লক্ষ ছিয়াশি হাজার । লোকসভার সাংসদ , রাজ্যসভার সাংসদ এবং বিভিন্ন রাজ্যের বিধায়করা মিলে মোট ভোটার চার হাজার আটশ জন । এরাই নিজেদের সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী দেশের পরবর্তী ( ১৫ তম ) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ভোট প্রদান করেছেন ।
দিল্লীর সংসদ ভবন এবং রাজ্যে রাজ্যে বিধানসভা ভবনগুলিতে ভোটকেন্দ্র খোলা হয়েছিলো । সূচি অনুযায়ী আগামী ২১ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটগণনা হবে । আগামী ২৪ জুলাই বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে । পরদিন ২৫ জুলাই সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে শপথ নেবেন বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের ১৫ তম নয়া নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ।নয়া নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি । সংখ্যাতত্ত্বের নিরিখে এনডিএ জোটের প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর জয়ের সম্ভাবনাই প্রবল । তার দিকেই পাল্লাভারী ।
কেননা , শাসক বিজেপির পাশে রয়েছে বিজ়েডি , ওয়াইএসআর কংগ্রেস , বিএসপি , এআইএডিএমকে , টিডিপি , জেডি ( এস ) , শিরোমনি আকালি দল , শিবসেনা , জেএমএমের মতো দল । এছাড়াও একাধিক ছোটখাটো দল রয়েছে । যাদের সমর্থন রয়েছে এনডিএ প্রার্থীর প্রতি । রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এমপি এবং এমএলএদের ভোটের মূল্য দিয়েই ইলেক্টোরাল কলেজ নির্ধারিত হলেও , রাজ্য অনুযায়ী বিধায়কদের ভোটমূল্য নির্ধারিত হয় । যেমন , উত্তরপ্রদেশের একজন বিধায়কের ভোটমূল্য হচ্ছে ২০৮ । সিকিমের মতো ছোট রাজ্যের একজন বিধায়কের ভোটমূল্য হচ্ছে ৭ , আবার ত্রিপুরার বিধায়কদের ভোটমূল্য হচ্ছে ২৬ ।
সেই হিসেবে সব মিলিয়ে মোট ভোট রয়েছে ১০ লক্ষ্য 86 হাজার।সমর্থন ও সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে এনডিএ – র কাছে রয়েছে ৬২ শতাংশের উপর অর্থাৎ ৬ লক্ষ ৬৭ হাজারের উপর ভোট । অন্যদিকে বিরোধী জোটের কাছে রয়েছে ৪ লক্ষের মতো ভোট । সেই হিসেবে এনডিএ প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর জয় একপ্রকার নিশ্চিত । শুধু তাই নয় , এনডিএ প্রার্থী জয়ী হলে তিনি হবেন দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা , যিনি সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে আসীন হবেন । তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সারা দেশজুড়ে ক্রস ভোটিং হতে পারে বলে মনে করছেন । এর পিছনে অবশ্য বেশ কিছু কারণ রয়েছে ।
এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা । প্রথমত আদিবাসী এবং মহিলা প্রার্থী হওয়ার কারণে বেশ কয়েকটি বিরোধী দলের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে । যেমন তৃণমূল কংগ্রেস দল । দলের সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জী স্পষ্টতই বলেছেন , ‘ দ্রৌপদী মুর্মুকে প্রার্থী করা হবে জানলে আমরা ভেবে দেখতাম । ‘ মমতার এই বক্তব্য যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ । এই নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতেও বেশ শোরগোল হয়েছে । বিশেষ করে বিজেপি বিরোধী জোটে । তারই জেরে সম্প্রতি উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী নির্বাচনের জন্য বিরোধী জোটগুলোর যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে , সেই বৈঠকে কিন্তু তৃণমূলকে ডাকা হয়নি ।
ফলে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কোন দিকে যাবে সেটা কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না । অপরদিকে , বিরোধী জোটের প্রার্থী যশবন্ত সিন্হা বিবেক ভোটের আহ্বান জানিয়েছেন । তিনি এনডিএ প্রার্থী দ্রৌপদী মুমুকে নিশানা করে বলেছেন , ‘ উনি দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার নির্বাচনে লড়ছেন । অথচ দেশবাসীকে জানালেন না -কী তার অ্যাজেণ্ডা । আমি কিন্তু প্রকাশ্যে শপথ করেছি । বলেছি , সংবিধান লঙ্ঘন হলে প্রতিবাদ করবো ।
উনি সেই শপথ করেননি । ‘ যশবন্তের এই আর্জিতে গেরুয়া শিবিরের কেউ সাড়া দেন কিনা তা সময় বলবে । যদি দেয় , সেটা ভারতীয় সংসদীয় ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত হয়ে যাবে । তবে সেই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে । রাইসিনা হিলের লড়াইয়ে আগাম জয় – পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরও , জাতীয় রাজনীতির অঙ্গনে যে টানটান উত্তেজনা ও উন্মাদনা লক্ষ্য করা গেছে , তা কিন্তু বেশ তাৎপর্যপূর্ণ । এটাই মহান গণতন্ত্রের মহিমা ও ঐতিহ্য ।