রাখিবন্ধন ( রক্ষাবন্ধন ) ভারতের এক ঐতিহ্যবাহী উৎসব । আমাদের দেশে ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবগুলির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো রাখিবন্ধন উৎসব । এই উৎসব হলো ভাই ও বোনের উৎসব । ভাইয়ের হাতে বোন রক্ষাসূত্র পরিয়ে দিয়ে ভাইয়ের দীর্ঘ জীবন কামনা করে । ভাই – বোনের সম্পর্কের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করতেই রাখিবন্ধন উৎসব পালন করে থাকি আমরা । রাখির সুতোয় আরও গভীর বন্ধনে আবদ্ধ হয় ভাই – বোনের সম্পর্ক । রাখিবন্ধন উৎসব হিন্দুধর্ম , জৈনধর্ম ও শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যেও পালন করা হয় । ইসলাম ধর্মের অনেক ভাই-বোন এই উৎসব পালন করে থাকে । রাখি কেবলমাত্র একটি সুতো নয় । রাখি পরানোর মাধ্যমে দিদিরা বোনেরা ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে এবং ঈশ্বরের কাছে ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করে । অপরদিকে ভাইয়েরা দিদিরা বোনের রাখি পরার সময় তাদের আজীবন সম্ভ্রম রক্ষা করার শপথ নেয়। ভারতবর্ষে এই উৎসব শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার দিন পালন করা হয় । এজন্য অনেক সময় রাখিবন্ধন উৎসবকে রাখিপূর্ণিমাও বলা হয় । ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখিবন্ধন ( রক্ষাবন্ধন ) উৎসব পালন করেছিলেন । ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের ১৯ জুলাই বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব ঘোষণা করলেন । সেই সময় অবিভক্ত বাংলা মানে এখনকার বাংলাদেশ , পশ্চিমবঙ্গ , বিহার , আসাম মিলে যে ভূখণ্ড , আর সেই বিশাল বাংলাকে শাসন করা ছিল ব্রিটিশের কাছে এক বড় সমস্যা । প্রশাসনিক অসুবিধার অজুহাতে ধর্মের ভিত্তিতে বাংলাকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো । ঠিক হলো যে অঞ্চলে , যে ধর্মের মানুষের সংখ্যা বেশি সে হিসেবে বিভাজন করা হবে বঙ্গকে । হিন্দু আর মুসলিম জনসংখ্যা অনুযায়ী দুই সম্প্রদায়কে আলাদা করে দেওয়া হবে । আসলে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের আঁতুড় ঘরে পরিণত হয়েছিল বাংলা । তাই ইংরেজ শাসকের উদ্দেশ্য ছিল বিশাল বাংলাকে ভাগ করে বিদ্রোহের গতি কমিয়ে ফেলা । ১৯০৫ সালের জুন মাসে লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৯০৫ সালের আগষ্ট মাসে বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব পাস করা করা হয় । এই আইন কার্যকর করা হয় ১৬ অক্টোবর , ১৯০৫ । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ করার জন্য রাখিবন্ধন ( রক্ষাবন্ধন ) উৎসব পালন করেছিলেন । তিনি কলকাতা , ঢাকা ও সিলেট থেকে হাজার হাজার হিন্দু ও মুসলিম ভাই ও বোনকে আহ্বান করেছিলেন একতার প্রতীক হিসেবে রাখিবন্ধন উৎসব পালন করার জন্য । সেই সময় দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা চরম পর্যায়ে ছিল । কিন্তু একশ বছরেরও বেশি সময় আগে হিন্দু ও মুসলিম এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একতা আনার জন্য রাখিবন্ধন উৎসব পালন করা হয়েছিল । ঊনিশ শতকে আমাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন চরম পর্যায়ে ছিল যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কাছে অপরিমিত ভয়ের কারণ । এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করার জন্য ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় তারা বাংলাকে দুইভাগে ভাগ করবে । সেই সময় রবীন্দ্রনাথ সহ গোটা ভারতের বিভিন্ন নেতৃত্বরা এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন এবং বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে । ১৯০৫ সালের আগষ্ট মাসে বঙ্গভঙ্গের আইন পাস করা হয় । শ্রাবণ মাসে হিন্দু ভাই – বোনদের মধ্যে রাখিবন্ধন উৎসব পালন করা হয় । অদ্ভুতভাবেই তখন রাখিপূর্ণিমা ছিল । ফলে প্রথা মেনে হিন্দু ঘরের মেয়েরা তাদের দাদা – ভাইয়ের হাতে রাখি বাঁধবে । সেই ভালোবাসার বন্ধনের দিনটিকে অন্যরকমভাবে কাজে লাগাতে চাইলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । তিনি হিন্দু মুসলমানের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধন পাকা করতে রাখিবন্ধনের কথা ভাবলেন । ফলে রাখিবন্ধন কেবলমাত্র ভাই – বোনের সম্পর্কের মাঝেই আটকে রইল না , হয়ে উঠল হিন্দু – মুসলিমের সম্প্রীতির বন্ধন । এক মহান উৎসব। রবীন্দ্রনাথ সকল ধর্মের বর্ণের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করলেন । এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষের হাতে রাখি বেঁধে দিচ্ছেন । ভালোবেসে একে অপরকে জড়িয়ে ধরছেন । এভাবেই রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশদের দিকে প্রতিবাদের আগুন ছুড়ে দিয়েছিলেন । এদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে বিশাল মিছিল গঙ্গার উদ্দেশ্যে পথে নামে । সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিছিলে সমাজের গণ্যমান্য নামী ব্যক্তিরাও । সমস্ত দোকানপাট বন্ধ ছিল । গাড়ি ঘোড়াও বন্ধ ছিল । মিছিলের মানুষজন গঙ্গায় ডুব দেওয়ার পর একে অপরে হাতে হলুদ রঙের সুতো বেঁধে দিয়েছিলেন । তাঁর এক ডাকে ধর্ম – বর্ণ – জাতি নির্বিশেষে সারা বাংলার মানুষ পথে নেমেছিলেন । একাত্ম হয়েছিলেন । গোটা বাংলার আকাশে বাতাসে সেদিন এই গান ধ্বনিত হয়েছিল , কলকাতার অনেক জায়গাতেই এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল । এই প্রতিবাদ ইংরেজ শাসকের টনক নাড়িয়ে দিয়েছিল । প্রতিবাদ ধীরে ধীরে চরম পর্যায়ে মাত্রা নিয়েছিল । অবশেষে ছয় বছর পর ১৯১১ সালে ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ রদ করে বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব ।
অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমান যুগে হৃদরোগ জনিত সমস্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।এর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও জীবনঘাতী…
অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমানে রাজ্যেনয়টি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন রয়েছে।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই নয়টি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশনকে…
অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনেও আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলেই, আমাদের…
অনলাইন প্রতিনিধি:-তপন স্মৃতি নকআউট ক্রিকেটের দ্বিতীয় দল হিসাবে সেমিফাইনালে হার্ভেকে নকআউট করে তপনের সেমিতে সংহতি!!খেলার…
নজিরবিহীন গরমের মুখোমুখি রাজ্য। মার্চ মাসের শেষ দিকে গরমের এই প্রকোপ এককথায় নজিরবিহীন।এজন্য আবহাওয়া দপ্তরকে…
অনলাইন প্রতিনিধি :-"ঈদুল ফিতর" যার অর্থ হলউপবাস ভাঙার আনন্দ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের…