রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারী মাসে করার উদ্যোগ!!
রাজনৈতিক অস্ত্র!
দেশের সর্বত্র কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তথা ইনভেস্টিগেশন এজেন্সিগুলোকে নিয়ে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তিকে হেনস্তা করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোর বেলাগাম অপপ্রয়োগ নিয়ে সময়ে সময়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গেছে বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে। অভিযোগ হলো, ইডি-সিবিআই কিংবা আয়কর বিভাগের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে বিরোধী শিবিরের প্রতিনিধিদের হেনস্তা করছে সরকার, বকলমে শাসকদল। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অভিযোগটি হলো, কেন্দ্রে মোদি সরকারের আমলে বিগত ৮ বছরে বিরোধী দলের অগণিত সদস্যের বিরুদ্ধে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে এনফোর্সমেন্টে ডিরেক্টরেট বা ইডি।
অথচ কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থাগুলো সংশ্লিষ্ট মামলায় যতগুলি অভিযোগ আদালতে জমা দিয়েছে এর মধ্যে মাত্র সাজাপ্রাপ্তির হার হল ০.৫শতাংশ। এই পরিসংখ্যান থেকেই একটি জিনিস পরিষ্কার, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার লক্ষ্যেই হয়রানি ও রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে বিপক্ষ শিবিরকে কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে হানাদারি বা অভিযানের মতো ঘটনাসমূহ সংঘটিত করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নিরন্তর বিরোধীদের উত্থাপিত এই অভিযোগের মধ্যেই দিল্লীর সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়ার উপর কেন্দ্রীয় এজেন্সির হানাদারি নিয়ে সরব হলেন দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
প্রধানমন্ত্রীকে তারা এই ইস্যুতে একটি চিঠি দিয়েছেন আজ। চিঠিতে বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরা অভিযোগ তুলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার সিবিআই, ইডিকে ব্যবহার করছে মুড়ি মুড়কির মতো এবং তাও হচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের ক্ষেত্রে। প্রতিপক্ষ দলের রাজনৈতিক দলের নেতাদের ফাঁসাতেই এই হীন খেলায় মেতেছে কেন্দ্রীয় সরকার। অথচ বিস্ময়কর ঘটনা হলো, যেসমস্ত অভিযুক্ত এই মামলাকাণ্ডে জড়িয়ে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন তারা মামলা থেকে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন। চিঠিতে নয়জন বিরোধী নেতা লিখেছেন, আসামের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সারদা চিটফাণ্ড মামলায় তদন্ত করেছিল ইডি- সিবিআই।
অথচ তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর এখন তিনি সব কিছুর নাগালের বাইরে। একইভাবে নারদা মামলায় একসময়ের তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং মুকুল রায়ের ক্ষেত্রেই একই ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে বিরোধী দলের লালু প্রসাদ, সঞ্জয় রাউত, আজম খান, অনিল দেশমুখ থেকে এমন কোন বিরোধী নেতা নেই যাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের হয়রানি করা হয়নি। বিরোধীরা ইতিপূর্বেও এই ইস্যুটিকে উত্থাপন করে এই ঘটনাক্রমকে বিজেপির ওয়াশিং মেশিনে দুর্নীতি সাফাই বলে উল্লেখ করেছিলো। এবার ৯ বিরোধী নেতা মোদিকে লেখা চিঠিতে বলেছেন, ২০১৪ সালের পর থেকে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তা তাদের নিরপেক্ষতার উপর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
গণতন্ত্রে মানুষের মতামতই সর্বোচ্চ। তাই মানুষের মতামতেই সর্বাগ্রে সম্মান জানানো উচিত। মানুষ এমন কোনও দলের পক্ষে যদি মতামত দেয় যা কোন ব্যক্তির মত ও আদর্শ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, তাহলে গণতন্ত্রের সেই মতকে সম্মান দেখাতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রের বর্তমান সরকার কি আদৌ সেই পথে হাঁটছে? প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী নেতারা। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের নিয়োগ করা রাজ্যপাল বিরোধী দলের শাসিত রাজ্যগুলোকে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন বলে বিরোধীরা মনে করছেন। বিরোধীদের মতে যা গণতন্ত্রকে ভূলুন্ঠিত করার শামিল। লক্ষণীয় হলো, বিজেপিবিরোধী অধিকাংশ নেতারাই প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।
তালিকায় দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী,পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব, মহারাষ্ট্রের শারদ পাওয়ার, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুক আবদুল্লা শামিল হয়েছেন। অথচ এই ৯ জন নেতা নেত্রীর তালিকায় কংগ্রেস দলের কোন নেতা নেত্রী নেই। এটা কি কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপিবিরোধী নতুন জোট, প্রশ্ন উঠছে এ নিয়েও। বিরোধীবিরোধী নেতা-নেত্রীদের এই তালিকায় কংগ্রেসের কোনও মুখ না থাকা তাৎপর্যপূর্ণ হলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিসোদিয়ার গ্রেপ্তারিকে কংগ্রেস সমর্থন করেছে বলেই তালিকায় কংগ্রেস নিজেকে যুক্ত করেনি।
কিন্তু কংগ্রেসকে ছাড়া বিজেপিবিরোধী এই প্রয়াস জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে নতুন সমীকরণের বার্তা কি না এ নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। কারণ ইডি গান্ধীর বিরুদ্ধেও দুর্নীতি মামলায় তদন্ত করেছে। ইয়ং ইণ্ডিয়া অ্যাসোসিয়েট জার্নালস লিমিটেড নামক সংস্থাটি ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকা চালাতো। সেখানে ইডির কাছে অভিযোগ রয়েছে অর্থ তছরূপের। যেখানে রাহুল এবং তার মা সোনিয়াকে ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। এতসবের পরেও কংগ্রেসের এই ইস্যুতে দূরে থাকা রাজনীতিতে ধোঁয়াশা আরও বাড়ালো বলেই মনে করা হচ্ছে।