রাজনৈতিক কৌশল!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- পশ্চিমবঙ্গের দুই জেলা এবং পাশ্ববর্তী বিহারের চার জেলা-এই মোট ৬টি জেলাকে নিয়ে দেশে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের দাবি ঘিরে জাতীয় রাজনীতির হাওয়া আবারও উথাল-পাতাল বইতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সংসদে ক্ষমতাসীন বিজেপি দলেরই এক এমপি জিরো আওয়ারে এই দাবি তুলছেন। সংসদে যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ কিংবা জনস্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়ে সাংসদরা তাদের বক্তব্য বা দাবি জানাতেই পারেন। কিন্তু রাজ্য ভাগ কিংবা পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের মতো দাবি যখন খোদ শাসকদলের এক সংসদের মুখ থেকে উচ্চারিত হয়-তখন এই দাবিকে কোনও ভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। বিশেষ করে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের আদিবাসী এলাকা গোড্ডা কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে সাংসদ পদে নির্বাচিত নিশিকান্ত দুবে যখন এই ধরনের সংবেদনশীল দাবি উত্থাপন করেন তখন এর গুরুত্ব একটু আলাদাই মাত্রা পায়। কারণ এই নিশিকান্ত দুবে হচ্ছেন বিজেপির সেই ‘ডাকাবুকো’ সাংসদ যিনি পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস এমপি মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে সংসদের ঘুসের বিনিময়ে প্রশ্ন করার অভিযোগ তুলেছিলেন। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা রাতারাতি মহুয়া মৈত্র সাংসদ সদস্য পদ হারিয়েছিলেন। যদিও ২০২৪ এর লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর লোকসভা আসন থেকে আবারও সাংসদ হিসাবে জয়ী হয়ে আসেন মহুয়া। কী বলেছেন ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার বিজেপি এমপি নিশিকান্ত দূবে? বৃহস্পতিবার সংসদে শূন্যকালীন সময়ে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত দুই
জেলা মুর্শিদাবাদ ও মালদহ এবং পার্শ্ববর্তী বিহার রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত চার জেলা কিষানগঞ্জ, আবারিয়া, পূর্ণিয়া ও কাটিহারকে নিয়ে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ার দাবি তুলেছেন দুবে। তার বক্তব্য, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের এই ছয় জেলাতে ব্যাপকহারে অনুপ্রবেশ ঘটার কারণ এই অঞ্চলগুলোতে জনবিন্যাসের চরিত্র বদলে যাচ্ছে। অনুপ্রবেশকারীরা অর্থাৎ যারা বাংলাদেশ থেকে আসছেন তারা বিহারে আদিবাসী নারীদের বিয়ে করে পাল্টে দিচ্ছেন জনবিন্যাসের চিত্র। সাঁওতাল পরগনা বিহার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সময় ওই রাজ্যের আদিবাসী জনসংখ্যা ছিল ৩৬ শতাংশ। এখন তা নেমে দাঁড়িয়েছে ২৬ শতাংশে। অনুপ্রবেশ জনিত একই সমস্যা মালদহে ও মুর্শিদাবাদেও। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলিমরা এই এলাকাগুলোতে আসায় মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে। ভোট ব্যাঙ্ক রাজনীতির কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে তার অভিযোগ। আসলে গ্রেটার কোচবিহার রাজ্য গঠন কিংবা বাংলা ও বিহারের কিছু জেলা নিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি নতুন কোনও বিষয় নয়। কিন্তু এই দাবির পেছনে রাজনীতি যখন ডানা মেলে তখন নিশ্চয় এই দাবির উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় ও প্রশ্নচিহ্ন দেখা দেয়। কেন না সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় বাংলা ব্যবচ্ছেদের পেছনে রাজনীতির গ্রিন রুমে বসে ছক কষা নিয়ে যে অভিযোগের আঙুল উঠতে শুরু করেছে তখন এর বিতর্কের রেশ অন্যমাত্রা পাওয়া স্বাভাবিক। ঘটনাক্রমে গুলো একটু সাজিয়ে দেখলে দেখা যাবে, তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর জাফরাণী ব্রিগেডের বিরুদ্ধে অত্যন্ত সন্তর্পণে বাংলা ভাগের রাজনীতিতে ফের পেছন থেকে মদত দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। মাত্র বুধবারই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বাংলার সাংসদ সুকান্ত মজুমদার উত্তরবঙ্গকে নিজের মন্ত্রকে নিয়ে আসার প্রস্তাব দেন। সেই ঘটনায় রেশ না কাটতেই রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ অনন্ত মহারাজ পৃথক গ্রেটার কোচবিহার রাজ্যের দাবি জানিয়েছেন। আর সব কিছুকে ছাপিয়ে নিশিকান্ত দুবে বলেই দিয়েছেন ৬ জেলাকে নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়া না হলে ‘হিন্দু আর থাকবে না। বিজেপি এমপি অবশ্য এখানেই থামেননি। বলেছেন মালদা-মুশির্দাবাদে হিন্দুদের উপর জুলুম হচ্ছে। পুলিশ এসে ধমকাচ্ছে। অথচ বঙ্গ বা ঝাড়খণ্ড কোনও সরকারই এ ব্যপারে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ ব্যাপারে তার অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হলে সাংসদ পদ ছেড়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন দুবে। সব মিলিয়ে একটা বিষয় পরিষ্কার। বঙ্গ ব্যবচ্ছেদ বা পৃথক রাজ্য গঠনের নামে হিন্দু সুরক্ষার আড়ালে পেছনে রাজনৈতিক এজেন্ডাই মুখ্য। তাই নিন্দুকেরা বলছেন নির্বাচনে ধাক্কা খেয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের ইঙ্গিতেই বিজেপি সাংসদরা এই সব কথা তুলেছেন। কারণ ভাগ কর, শাসন কর এই কৌশল মেনে রাজ্য টুকরো হলেই ক্ষমতা দখলের পথ পরিষ্কার হবে। তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, বঙ্গ ভাগের এই গুঞ্জন প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো কিন্তু সবাই একজোটে কেন্দ্রের শাসকের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানো এবং বাংলা ভাগের ষড়যন্ত্রের পেছনের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের গন্ধ পাচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো আদৌ কি গেরুয়া শিবির বঙ্গ ব্যবচ্ছেদ চায় ? নাকি তৃণমূলের উপর রাজনৈতিক চাপ তৈরি করে আগামী দিনে কেন্দ্রে ক্ষমতা দৃঢ় করার লক্ষ্যে ভারসাম্যের রাজনীতিতে মমতাকে ইন্ডিয়া জোট থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে চায়া গেরুয়া শিবির? রাজনৈতিক সমীকরণ অনেক। তাই একরৈখিক ভাবনায় সিদ্ধান্তে উপনীত হলে ভ্রান্তির সম্ভাবনা থেকে থাকে। আগামীদিনেই তার স্পষ্টীকরণ মিলবে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্রমোদীর অফিসে রাহুল গান্ধি, সঙ্গে মজুত ছিলেন দেশের প্রধান বিচারপতিও!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-নতুন সিবিআই কর্তা নিয়োগ করতে হবে আর সেই উদ্দ্যেশ্যেই লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল…

3 hours ago

ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে ইন্ডিয়ান আইডল জয়ী পবনদীপ,অবস্থা আশঙ্কাজনক!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে ইন্ডিয়ান আইডল জয়ী সিজন ১২ এর পবনদীপ রাজন ৷ উত্তর…

10 hours ago

শবরীমালা মন্দির পরিদর্শনে দ্রৌপদী মুর্মু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-আগামী ১৮ মে দু'দিনের জন্য কেরল সফরে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ৷ সেই…

12 hours ago

মহাকালেশ্বর মন্দিরে বীভৎস আগুন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-উজ্জ্বয়ন মহাকালেশ্বর মন্দিরে বিভীষিকাময় আগুন। মন্দিরের উপর থেকে গলগল করে নির্গত হচ্ছে কালো…

12 hours ago

হত্যা মামলায় ‘গ্রেপ্তার’ বাংলাদেশে জেলবন্দি চিন্ময় প্রভু!

অনলাইন প্রতিনিধি :-জেলবন্দি সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী ওরফে চিন্ময় প্রভুকে নতুন করে আবার হত্যা…

13 hours ago

নিখোঁজ হয়ে ছিলেন কুড়ি বছরে বাড়ি ফিরে এলেন ৬৩ বছর পর!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্য থেকে প্রায় ৬৩ বছর আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন অড্রে ব্যাকেবার্গ নামে…

13 hours ago