ত্রিপুরার সাহিত্য চর্চায় নয়া ইতিহাস রচনা করেছে উড়ান: জয় গোস্বামী।।
রাজনৈতিক ঝুঁকি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- অদূরে কড়া নাড়ছে জাতীয় নির্বাচন। সেই আবহে প্রকৃতই রাজনৈতিক ঝুঁকি নিল কংগ্রেস। গত আড়াই সপ্তাহ ধরে বিস্তর টানাপোড়েন, দলের মধ্যে চুলচেরা বিশ্লেষণের পরে অবশেষে আগামী ২২ জানুয়ারী রামমন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত কংগ্রেস গ্রহণ করেছে, তাকে ‘সাহসী’ বলতে দ্বিধা নেই। রামমন্দির তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের তরফে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, কংগ্রেসের সংসদীয় দলনেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানানো “হয়েছিল। কংগ্রেস তিনজনেইর আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছে। এর পাশাপাশি অযোধ্যার অনুষ্ঠানকে দলের তরফে ‘বিজেপি’- আরএসএসের কর্মসূচি’ বলে কংগ্রেস যে তকমা দিতে চেয়েছে, তা আরও বড় রাজনৈতিক ঝুঁকি রামমন্দির নিয়ে বিজেপির হিন্দু ভাবাবেগ উস্কে দেওয়ার কৌশলের মোকাবিলায় কংগ্রেস পাল্টা অভিযোগ তুলেছে, দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসক হিসাবে নরেন্দ্র মোদির ‘ব্যর্থতা’ ধামাচাপা দিতে ভাবাবেগকে আশ্রয় করতে চলেছে। রাজীব গান্ধীর আমলে লোকসভায় সর্বোচ্চ আসনে জয়ী হয়েছিল কংগ্রেস। ৫৪৩ টি আসনের মধ্যে ৪১৪ টি। ১৯৮৫ সালে শাহ বানো মামলায় সুপ্রিম কোর্ট তার স্বামীকে খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ দিলে মুসলিম কট্টরপন্থীদের খুশি করতে রাজীব শীর্ষ আদালতের রায় খারিজ করে নতুন আইন জারি করেছিলেন। আবার অন্যদিকে, হিন্দু কট্টরপন্থীদের তুষ্ট করতে ১৯৮৬ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের তালাও খুলে দিয়েছিলেন রাজীব। তাতে দিনের শেষে বিজেপি- আরএসএস তথা সংঘ পরিবারেরই লাভ হয়েছিল। লালকৃষ্ণ আদবানিদের হিন্দুত্বের আন্দোলনে জল-বাতাস জুগিয়েছিল রাজীবের সেই সিদ্ধান্ত। এর পরে ১৯৯২ সালে বাবরি ধ্বংসের সময় তদানীন্তন কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাও কার্যত হাত গুটিয়ে বসে থেকে প্রচ্ছন্নে হিন্দুত্ববাদীদের সুবিধা করে দিয়েছিলেন বলেও পরবর্তীতে কংগ্রেসের অন্দরে প্রবল গুঞ্জন হয়েছিল। অবশ্য তার পরেও বারংবার কংগ্রেসকে হিন্দু-বিরোধী তকমা দিতে কোনও কসুর ছাড়েনি বিজেপি। ঘটনা হল, সেই অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আজকের সোনিয়া- রাহুলের কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শের পক্ষে দাঁড়িয়ে রামমন্দির উদ্বোধনের প্রশ্নে যে সিদ্ধান্ত নিল, তা অবশ্যই বড় রাজনৈতিক ঝুঁকি। কংগ্রেসের এ হেন অবস্থান বিজেপিকে নির্বাচনি প্রচারে বাড়তি সুবিধা করে দেবেই। প্রচারে তারা কংগ্রেসকে রাম-বিরোধী বলে তুলে ধরবেই। দেশকে মনে করাবে, এই কংগ্রেসের সরকারই আদালতে হলফনামা দিয়ে রামকে ‘কাল্পনিক চরিত্র’ বলেছিল। এখন তারা রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে সনাতন হিন্দু ধর্মকেই অপমান করেছে ইত্যাদি। অবশ্য কংগ্রেসের আগেই অখিলেশ যাদব, সীতারাম ইয়েচুরি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অযোধ্যার অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ফলে, গোটা ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চকেই সনাতন ধর্ম-বিরোধী বলে প্রচারে ঝড় তোলার সব সুযোগই প্রধানমন্ত্রী ও তার
দল কাজে লাগাবেই।প্রশ্ন হল, কংগ্রেস যে প্রশ্নে অযোধ্যার অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বাস্তবতা কতখানি? শঙ্করাচার্যরাও বলেছেন, রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে অসম্পূর্ণ মন্দিরের উদ্বোধন করা হচ্ছে। পুরীর শঙ্কারাচার্য নিশ্চালন্দ সরস্বতী বলে দিয়েছেন, তিনি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যাবেন না। বলেছেন, মোদির হাতে যেখানে ভগবানের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে, সেখানে তিনি কি হাততালি দিতে যাবেন? উত্তরাখণ্ডের শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতীও বলেছেন, রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে অসম্পূর্ণ মন্দিরের উদ্বোধ করা হচ্ছে। কংগ্রেস সনাতন ধর্ম- বিরোধী তা না হয় প্রচারের মহিমায় সিদ্ধ হবে, কিন্তু শঙ্করাচার্যদের ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ শুনলে কাষ্ঠের পুত্তলিকাও অট্টহাস্য করবে। ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ রাষ্ট্রকে সমস্ত প্রকার ধর্মীর প্রসঙ্গের সংশ্রব বাঁচিয়ে চলতে হবে, তা কিন্তু নয়। বরং রাষ্ট্রকে যতক্ষণ অবধি বিভিন্ন ধর্ম ও ধর্মগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়,তা যেন মূলত সমদর্শী ব্যবহারের ভিত্তিতে হয়, তা সুনিশ্চিত করতে হবে। এখানে ‘সমদর্শী ব্যবহারের ভিত্তি’ কথাটি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্র স্বয়ং যখন জনগণের প্রতি সমদর্শন থেকে বিচ্যুত হয় তখন তা সাধারণের পক্ষে বিপজ্জনক বার্তা বহন করে। অথচ আধুনিক ভারতীয় রাজনীতি বারংবার প্রমাণ করছে যে, ধর্মই তার বেঁচে থাকার অক্সিজেন। বর্তমান ভারতে সেকুলারিজম সোনার পাথরবাটির মতো এক ধারণায় পর্যবসিত। এ ক্ষেত্রে কংগ্রেস বলতেই পারে, নীতিগত আদর্শ রক্ষায় তারা দ্বিচারিতা করেনি। আবার এটাও ঠিক, বিজেপির কট্টর হিন্দুত্বের মোকাবিলায় নরম হিন্দুত্ব অনুসরণের নীতি কংগ্রেসের ফলদায়ী হয়নি।