রাজনৈতিক প্রজ্ঞাহীন নেতৃত্ব

 রাজনৈতিক প্রজ্ঞাহীন নেতৃত্ব
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সামনেই ২০২৪ – এর লোকসভার নির্বাচন । ২০১৪ সালে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের পতনের পর কংগ্রেসের রক্তক্ষরণ সমানে চলেছে । এবার ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই হয়তো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে শতবর্ষ প্রাচীন এই দলটির । তাই অস্তিত্বের সঙ্কটে ন্যুব্জ কংগ্রেসকে দাঁড় করানোটাই এই মুহূর্তে দলীয় নেতৃত্বের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ । এই চ্যালেঞ্জকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায় তার রোডম্যাপ তৈরি করতেই সম্প্রতি রাজস্থানের উদয়পুরে আয়োজন করা হয় কংগ্রেসের চিন্তন শিবির । কিন্তু এই চিন্তন শিবির থেকে দলের সুস্বাস্থ্য যে ফিরছে না সেটা আঁচ করতে পারছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই । সেই অর্থে উদয়পুরের চিন্তন শিবির থেকে অর্থবহ কিছু বেরোয়নি সেটা একরকম পরিষ্কার । কারণ চিন্তন শিবিরের গৃহীত সিদ্ধান্ত থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট যে , সঙ্কট থেকে দলকে টেনে বের করাটা দলীয় নেতৃত্বের আসল উদ্দেশ্য নয় বরং দলের স্থিতাবস্থাটা বজায় রাখা এবং দলের লাগাম কোনওভাবেই যাতে গান্ধী – নেহরু পরিবারের বাইরে চলে না যায় সেটা নিশ্চিত করাই ছিল চিন্তন শিবিরের লক্ষ্য । আর চিন্তন শিবিরের মধ্য দিয়ে সেই ইচ্ছাতেই সিলমোহর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন গান্ধী – নেহরু পরিবারের সমর্থকরা । যে কারণে গত এক পক্ষকালের মধ্যে রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেসের ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়নি । গুজরাটের হার্দিক প্যাটেল থেকে শুরু করে সুনীল জাখরের দল ছাড়ার ঘোষণা তারই বহি : প্রকাশ । কিন্তু সবকিছুকে পেছনে ফেলে কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা এবং বিক্ষুব্ধ জি -২৩ গোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য কপিল সিবালের কংগ্রেস ছাড়ার সিদ্ধান্ত সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ।

বুধবারই উত্তরপ্রদেশের নির্দল প্রার্থী হিসাবে রাজ্যসভার সাংসদ পদের জন্য সমাজবাদী পার্টির অখিলেশকে পাশে নিয়ে মনোনয়ন পেশ করেন সিবাল । বর্তমান সময়ে কংগ্রেস দলের মধ্যে অন্যতম বাগ্মী হিসাবে পরিচিত সিবাল রাজ্যসভায় বিজেপির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব থাকতেন । কংগ্রেসের ভেতরকার ভুলত্রুটি নিয়েও সরব হয়েছেন একাধিক সময়ে । অতি সম্প্রতি দলের দৈন্যদশা নিয়ে চাঁছাছোলা ভাষাতেই দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন । মোদি সরকারের জনবিরোধী কাজকর্মের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পাশাপাশি দলের উপর থেকে গান্ধী পরিবারের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করতেও তিনি সামনে থেকে সোচ্চার ছিলেন।। সম্প্রতি দলের চিন্তন শিবির শেষ হয়েছে । কিন্তু সেখানেও সিবাল অনেকটা অপাংক্তেই থেকে গেছেন । চলতি বছর নভেম্বর মাসে গুজরাট এবং হিমাচল প্রদেশের নির্বাচন । ইতিমধ্যেই দেশের অন্যতম ভোটকুশলী হিসাবে পরিচিত প্রশান্ত কিশোর আগাম ভবিষ্যৎবাণী করেছেন— এই দুই রাজ্যেই ভোটে ভরাডুবি হবে কংগ্রেসের ।

চিন্তন শিবিরে সোনিয়া ও রাহুল

প্রশান্ত কিশোরের ব্যাখ্যা , কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে না । কংগ্রেস স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চাইছে । এই স্থিতাবস্থার অর্থ হল দলে গান্ধী পরিবারের নিয়ন্ত্রণ । আসলে স্বাধীনতার পর থেকেই কংগ্রেস ধীরে ধীরে গান্ধী – নেহরু পরিবারের পৈতৃক সম্পত্তিতে পরিণত হয়ে উঠেছিল । কংগ্রেসের বেশিরভাগ নেতাই এই দুই পরিবারের বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেননি । জওহরলাল , ইন্দিরা ও রাজীব গান্ধীর কথা বাদ দিলেও বলা যায় সোনিয়া গান্ধী পর্যন্ত সকলেই দলের সভাপতি বা সভানেত্রী হিসাবে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে পারলেও এক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন রাহুল। দলকে সঠিক দিশা দেখানোর পাশাপাশি দলকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাহুল দূরদর্শিতার কোনও ছাপই রাখতে পারেননি । সুযোগ সত্ত্বেও দলীয় নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণেই দল আসাম , উত্তরাখণ্ডে সরকার গড়তে পারেনি । বিহারের ক্ষেত্রেও ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাহুল । কংগ্রেসের রাজ্য পাঞ্জাব হাতছাড়া হয়েছে। এই অদূরদর্শী নেতাদের হাতেই দলের নেতৃত্ব থাকায় দলে দলে নেতারা কংগ্রেস ছাড়ছেন । আর যারা ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে চেহারায় মিল খোঁজে প্রিয়াঙ্কার জন্য আবেগে ভাসছেন তারা জানেন না আবেগ দিয়ে রাজনীতি হয় না । রাজনীতিতে চাই বাস্তবতা ও দূরদৃষ্টি , যা সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে প্রিয়াঙ্কা দেখাতে পারেননি । মুখের মিল দিয়ে , আর পারিবারিক উত্তরাধিকার দিয়ে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আসে না । এই ঘটনার পরেও যারা কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নে বিভোর , তাদের সামনে কংগ্রেসের নিরন্তর রক্তক্ষরণ প্রত্যক্ষ করা ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট আপাতত থাকছে না । এটাই হল সময়ের শিক্ষা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.