রাজনৈতিক ব্যঙ্গ!!

 রাজনৈতিক ব্যঙ্গ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-আজকের দিনটি ধরলে হাতে আর মাত্র চারদিন।এর মধ্যে কংগ্রেস তাদের সম্ভাব্য আসন সমঝোতার বার্তা না দিলে কী হবে, বস্তুত তা নিয়েই কেন্দ্রের শাসক শিবিরে এখন যত ঔৎসুক্য।গত ১৯ ডিসেম্বর দিল্লীতে সর্বভারতীয়স্তরে বিজেপিবিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সর্বশেষ বৈঠকে তৃণমূলের তরফে আসন সমঝোতার বিষয়ে (মূলত কংগ্রেসকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।সেটি শেষ হতে আর মাত্র চারদিন।এই আবহে আজ, বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদর দপ্তর মহারাষ্ট্রের নাগপুরে সভা করবে ‘ইন্ডিয়া’।সেখানে ওজনদার কোন্ মুখগুলি থাকবে এখনও স্পষ্ট নয়। নাগপুরের বৈঠকেও যদি আসন সমঝোতা নিয়ে জোটের নেতা-নেত্রীরা ঐকমত্যে পৌঁছতে না পারলে তাদের সার্বিক অবস্থান অনেকটাই উপহাসের পর্যায়ে চলে যাবে।তবে এটা ঠিকই যে, সারা দেশে বিরোধীদের পক্ষে আসন বিন্যাসের সূচারু সমঝোতার কাজটি অতীব দুরূহ।কারণ, রাজ্যে রাজ্যে পরিস্থিতি, রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং স্তর বিভাজন ভিন্ন।সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সেই বাস্তবতা মাথায় রেখেই আসন সমঝোতা হলে উত্তম, না হলে জোটের বিপদ আরও বাড়বে। যেমন কেরলে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও সমঝোতা অসম্ভব।একইভাবে পাঞ্জাব, দিল্লীতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের আদৌ সমঝোতা হবে কি না,বলা মুশকিল।বাংলায় কংগ্রেস কাদের হাত ধরবে, তৃণমূল নাকি বাম, তা নিয়েও ধোঁয়াশা অব্যাহত।আবার বিপরীতে কংগ্রেসের নমনীয়তার উপরে উত্তরপ্রদেশের মতো সর্ববৃহৎ রাজ্যে অখিলেশদের সঙ্গে জোটের ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়ে রয়েছে।বিহারেও নীতীশ ও তেজস্বী যাদব কংগ্রেসকে কতগুলি আসন ছাড়বে, জটিল প্রশ্ন।আসন সমঝোতা কোনও একটি বৈঠকের বিষয় নয়।সেখানে নানাবিধ দিক থাকে।দর কষাকষি চলে বিস্তর। যারা সারা বছর জোট করে চলে তাদের মধ্যেও একদিনে আসন নিয়ে বোঝাপড়া চূড়ান্ত হয় না। ফলে, মাত্র চারদিনের মধ্যে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতা বিষয়টির নিষ্পত্তি সুদূর পরাহত।পাঁচ মাস আগে নীতীশ কুমারের পৌরোহিত্যে পাটনায় যেদিন বিরোধী জোটের নামকরণ হয়েছিল, নেতা-নেত্রীদের সকলকেই উজ্জীবিত দেখিয়েছিল।মনে হয়েছিল, চব্বিশে পরাশক্তিমান নরেন্দ্র মোদির নামক ব্যক্তির বিজয় রথ রুখতে তারা সাধ্যমতো লড়াইয়ের প্রতি ব্রহ্মনিষ্ঠ। সেখান থেকে পাঁচ মাস অতিক্রান্তের পরে, তেইশের বর্ষশেষে সেই জোটের স্বরূপটিকে তামসিক মনে হচ্ছে ‘ইন্ডিয়া’ নামক মঞ্চটি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতেই নির্মিত হয়েছে, অথচ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যতই এগিয়ে আসছে, জোটবদ্ধতার চেয়ে তাদের ছন্নছাড়া ভাব বেশি প্রতীয়মান হচ্ছে। এদিকে, ক্যালেন্ডারের কাঁটা জানিয়ে দিচ্ছে, নির্বাচন আসতে আর মাস চারেক বাকি।একাধিক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের কালখণ্ডে, বিশেষত কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের কথাবার্তা বুঝিয়েছে, বিরোধী সংহতিকে তৎপরতার সঙ্গে সচল ও সক্রিয় করে তোলার বদলে বরং বিশেষ তৎপরতার সঙ্গে তারা তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখতেই সচেষ্ট !এমন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে গত ১৯ তারিখ দিল্লীতে ইন্ডিয়া নেতৃত্ব বৈঠকে বসেছিলেন বটে,কিন্তু জোটের চালচিত্রে তার নির্যাস মোটেই সুখকর ছিল না। বহুদলশোভিত এই মঞ্চে যেহেতু কোনও অবিসংবাদিত মুখ নেই, সুতরাং প্রধানমন্ত্রী নির্দিষ্ট কাউকে তুলে ধরা হবে না, এমনটাই সাব্যস্ত হয়েছিল পাটনার বৈঠকে।কিন্তু তৃণমূল এবং আম আদমি পার্টির মতো দুই দলের দুই কর্ণধার সহসা বিরোধী মঞ্চের মুখ হিসাবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের নাম প্রস্তাব করে বসেন।এহেন প্রস্তাবের গূঢ় উদ্দেশ্য কী ? কংগ্রেসে তথা বিরোধী শিবিরে রাহুল গান্ধীর ভাবমূর্তিকে দুর্বল করা?বিরোধী জোটের সূত্রধার নীতীশ কুমারের সম্ভাব্য ভূমিকাকে খাটো করা ?গত দশ বছরে মোদি যেমন নিজেকে অত্যন্ত শক্তিমান নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তা যেমন সত্য, পক্ষান্তরে এটাও সত্য যে, একটা সদ্য নির্বাচিত সরকারের প্রতি গরিষ্ঠ মানুষের যতখানি আবেগ থাকে, দিন অতিক্রান্ত হলে সেই আবেগে কিঞ্চিত হলেও শ্যাওলা জমে।তার উপর মূলত কর্ণাটক, বিহার, মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডে বিজেপিকে আগের মতো শক্তিশালী মনে হচ্ছে না। ফলে বিরোধীদের সামনে তিলার্ধ সুযোগ নেই, এমন ভাবনাও ঠিক নয়।তারা যদি চূড়ান্ত পর্বের খেলার আগেই পলায়নপর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, তাকে রাজনৈতিক ব্যঙ্গ ছাড়া আর কী বলা যায়!

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.