রাজার চালাকি!!
গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড- এটা আসলে কী? এটা কি একটি শব্দবাক্য ? নাকি একটি দাবি ?এই দুই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ভোটের মুখে রাজ্য রাজনীতিতে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কেননা, গত দেড় বছর ধরে এই একটি বিষয় তথ্য প্রযুক্তির হাত ধরে গোটা দুনিয়ায় পৌঁছে গেছে। তোলপাড় হচ্ছে গোটা রাজ্য। পাল্টে গেছে রাজ্য রাজনীতির সমীকরণ। অথচ অদ্ভুত বিষয়। আজ পর্যন্ত স্পষ্ট হলো না ‘গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড’ আসলে কী ? খায় না মাথায় দেয়। সবথেকে বড় কথা, যিনি এই ‘গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড’ নামক শব্দ, স্লোগান বা দাবির প্রবক্তা – তিনি নিজেও এ বিষয়ে রহস্যজনকভাবে নীরব। তিনি নিজেও এ ব্যাপারে আজও কিছু খোলসা করেননি।
অথচ ‘চিলে কান নিয়ে গেছে’ প্রবাদের মতো সকলেই গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ডের পিছনে ছুটছে। এই ছোটার আগে কেউই খতিয়ে দেখছে না এটা আসলে কী।ভোটের মুখে এই আলোচনা আরও জোর পেয়েছে এই কারণে যে, ‘গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড’ এডিসি নির্বাচনের মতো ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনের অন্যতম প্রধান ইস্যু। এই ইস্যুতেই এবার পাহাড়ে ভোট হতে চলেছে। আর এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজ্যের চিরাচরিত ঐতিহ্য আজ সঙ্কটে। রাজ্যের জাতি-জনজাতির পরম্পরাগত ঐক্য ও সংহতির মধ্যে নতুন করে একটা অবিশ্বাস, বিভাজন তৈরি হয়েছে গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ডের নামে। জনজাতি সমাজকে উসকে দেওয়া হয়েছে। তাদের বোঝানো হয়েছে, ত্রিপুরা নামক রাজ্যটিতে তারা নিজেরাই পরবাসী।
তাদের বারে বারে বলা হয়েছে, এখনও তাদের মগজধোলাই করা হচ্ছে এই বলে যে, ত্রিপুরা রাজ্যে বসবাসকারী বাংলাভাষীরা বহিরাগত, অনুপ্রবেশকারী। তারা বাংলাদেশি। এভাবেই গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ডের নাম করে রাজ্যের জনজাতিদের মনে এবং মগজে বিদ্বেষের বিষ ঢালা হয়েছে। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ তথাকথিত রাজার ভাষণ গোগ্রামে গিলেছে। আবেগমথিত হয়ে স্বপ্নের দুনিয়ায় ভেসে বেড়িয়েছে। ভিতরে ভিতরে উগ্র জাত্যভিমানের আগুনে নিজেকে পুড়েছে। কিন্তু অস্তিম সময় যখন সামনে এলো, তখন দেখা যাচ্ছে সবই শূন্য।দেশে রাজতন্ত্র শেষ হয়ে যাওয়ার পরও যিনি নিজেকে আচমকা স্বঘোষিত রাজা আখ্যা দিয়ে, রাজ্যের তেরো লক্ষ জনজাতিদের কথা অধিকার আদায়ের কথা বলে বিদ্বেষের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন,বাস্তবে দেখা গেল সবই ফাঁকা।
স্পষ্টভাবে বললে, স্বঘোষিত রাজা রাজ্যের তেরো লক্ষ জনজাতি মানুষের সাথে বড় ধরনের প্রতারণা করেছেন। তিনি তাদের আবেগ ও আত্মমর্যাদা নিয়ে খেলেছেন। তিনি তাদের স্বাভিমানে আঘাত করেছেন। তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। স্বঘোষিত রাজার বিরুদ্ধে এতগুলো কথা, এতগুলো অভিযোগ তোলার পিছনে একটাই কারণ- তা হলো, তিনি এতদিন ধরে যা বলে এসেছেন সবই তার কথার কথা। তিনি রাজ্যের জনজাতিদের অসত্য বলেছেন। তাদের মিথ্যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তিনি মুখে বলেছেন ‘গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড’ নামে পৃথক রাজ্য চাই। পৃথক রাজ্য হলে তিপ্রাসাদের অধিকার অর্জিত হবে। তিপ্রাসাদের সুদিন ফিরবে। অথচ বাস্তবে দেখা গেল তার এই দাবিই নেই।
শব্দের চাতুরি করে তিনি সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছেন পৃথক রাজ্যের দাবি। যা তিনি এতদিন বলে বেড়িয়েছেন। যা বলে তিনি জনজাতিদের খেপিয়ে তুলেছেন। তিনি আদতে কী চাইছেন? সেটাও স্পষ্ট করলেন না ভোটের মুখে। বারবার বলেছেন লিখিত চাই, তবেই সমঝোতা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন – কোন্ দাবি, কীসের দাবি পূরণের লিখিত প্রতিশ্রুতি চাইলেন তিনি? তবে কি অতিচালাকি করতে গিয়ে স্ব- ঘোষিত রাজা নিজেই বিভ্রান্তির শিকার? এর জবাব পেতে এবং পরিণতি দেখতে অপেক্ষা তো করতেই হবে।