রাজ্যকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে বীর বিক্রমের ভূমিকা অপরিসীম!!

 রাজ্যকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে বীর বিক্রমের ভূমিকা অপরিসীম!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের এমন কোনও স্থান নেই সেখানে বীর বিক্রমের স্মৃতি জড়িত নেই।তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থেই আধুনিক ত্রিপুরার রূপকার।রাজ্যকে নতুন আঙ্গিকে গড়ার লক্ষ্যে তিনি বহুবার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমন করেছেন। রাজ্যকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুরের অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে।সোমবার আগরতলা রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ২ নং হলে মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুরের ১১৬তম জন্মবার্ষিকী উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা এমনই বলেন।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মহারাজার জীবন দর্শন ও উন্নয়নশীল চিন্তাধারাকে আগামী প্রজন্মের কাছে নিয়ে যেতে পারলেই মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুরের জন্ম দিবস উদ্যাপনের সার্থকতা থাকবে।
এ দিন গোটা রাজ্যজুড়ে মহারাজা বীর বিক্রমের জন্মদিবস পালন করা হয়। রবীন্দ্রভবনে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী এবং উপস্থিত অতিথিগণ মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুরের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষাক্ষেত্রের বিকাশে ও ত্রিপুরার গৌরবময় সংস্কৃতি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বিধায়ক রামপদ জমাতিয়াকে মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪ প্রদান করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী ডা.মানিক সাহা পুরস্কার স্বরূপ বিধায়ক রামপদ জমাতিয়ার হাতে পুস্পস্তবক, শাল, মানপত্র, স্মারক ও ১ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর ত্রিপুরাকে নতুন আঙ্গিকে গড়ে তুলতে বিশ্বের বহু রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের সাথে সাক্ষাৎ করেন।সেই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ত্রিপুরা রাজ্যে তাঁর অভিজ্ঞতা বাস্তবায়িত করতে প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন। তিনি বহু মূল্যবান বই লিখে
গেছেন। যা সমাজকে এখনও সমৃদ্ধ করে। মহারাজা বীর বিক্রম আগরতলায় বিমানবন্দর স্থাপন করেছিলেন। যা বর্তমান সরকার মহারাজার প্রতি সম্মান জানিয়েমহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুরের নামে করেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন,মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য ভূমি সংস্কার আইন বলবৎ করেছিলেন। তিনিই প্রথম জনজাতিদের জুম চাষের পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষবাষে উৎসাহিত করেন। তিনি কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, সংস্কৃতি ক্ষেত্রে একাধিকপরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন।অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার ত্রিপুরার রাজ পরিবারের প্রকৃত মূল্যায়ন করেছে। বর্তমান সরকার রাজ পরিবার এবং জনজাতিদের উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে এসে আগরতলা বিমানবন্দরে মহারাজার পূর্ণাবয়ব মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেছেন। আগরতলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে কামান চৌমুহনী সংলগ্ন মহারাজা বীর বিক্রম চৌমুহনীর জিরো পয়েন্টে মহারাজা বীর বিক্রম মাণিক্য বাহাদুরের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের বর্তমান সরকারই রাজ্যের জনজাতিদের প্রকৃত সম্মান দিয়েছে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার জনজাতিদের উন্নয়নে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে। বর্তমানে রাজ্য সরকার ইতিহাসকে সম্মান দিতে জানে। যা বিগত দিনে লক্ষ্য করা যেত না। তিনি বলেন, রাজ্যের জনজাতি ছেলেমেয়েদের মেধার অভাব নেই। তারা তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব পি কে চক্রবর্তী স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর ছিলেন প্রথম রাজ পরিবারের সদস্য যিনি রাজ পরিবারের গণ্ডি পেরিয়ে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষালাভ করেন। মহারাজা বীর বিক্রম শাসন ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও স্থাপত্যক্ষেত্রে অবদান রেখে গেছেন। বর্তমান রাজ্য সরকার তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁর জন্মদিনকে সরকারী ছুটি ঘোষণা করেছে। ২০২০ সাল থেকে মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর স্মৃতি পুরস্কার চালু করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি সাংসদ কৃতি দেবী দেববর্মণ বলেন, ত্রিপুরাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নুতন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। এটাই ছিল মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুরের মূল দৃষ্টিভঙ্গি। ত্রিপুরা রাজ্যে অগ্রগতির মূল শক্তি রাজ্যের আগামী প্রজন্ম। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. সৌরিশ দেববর্মা। তিনি মহারাজা বীর বিক্রমের জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এছাড়া বক্তব্য রাখেন রাজ্যভিত্তিক সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত চক্রবর্তী। উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা তপন কুমার দাস।এদিকে প্রদেশ কংগ্রেস ভবনে এ দিন এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ভারসাম্য মর্যাদার সাথে পালন করা হলো মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুরের ১১৬ তম জন্মজয়ন্তী। আধুনিক ত্রিপুরার রূপকারের জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে পিসিসি সভাপতি আশিস কুমার সাহা সহ অন্যান্য বরিষ্ঠ নেতা, শাখা সংগঠনগুলির পদাধিকারী, কর্মী-সমর্থকরাও উপস্থিত ছিলেন। মহারাজার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধাও নিবেদন করেন তারা।
তেলিয়ামুড়া তথ্য সংস্কৃতির দপ্তরের উদ্যোগে এবং পুর পরিষদের ব্যবস্থাপনায় সোমবার মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্যের ১১৬ তম জন্মজয়ন্তী প্রতিপালন করা হয়।
তেলিয়ামুড়া চিত্রাঙ্গদা কলা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনা করতে গিয়ে তেলিয়ামুড়া পুর পরিষদের চেয়ারম্যান রূপক সরকার মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্যের দুরদর্শিতায় ত্রিপুরা রাজ্য অনেক দূর এগিয়ে গেছে বলে দাবি করেন।পাশাপাশি রূপক সরকার দাবি করেন অতীতে রাজ্য সরকার মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য সম্পর্কে উদাসিনা থাকলেও বর্তমান সরকার শুরু থেকেই মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্যকে বর্তমান তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে মরিয়া প্রয়াস চালায়। অনুষ্ঠানে শুরুতেই অতিথিরা মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্যের প্রতিকৃতিতে ফুল মালা দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.