রাজ্যেও শাসক-বিরোধী বিতর্কে রাজনীতির পারদ এখন তুঙ্গে!!

 রাজ্যেও শাসক-বিরোধী বিতর্কে রাজনীতির পারদ এখন তুঙ্গে!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে শনিবার।এদিন সন্ধ্যাতেই দেশের তামাম সমীক্ষক সংস্থা এবং বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমগুলি তাদের বুথফেরত সমীক্ষা প্রকাশ করেছে।২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের মাধ্যমে দিল্লীর ক্ষমতায় কে আসতে চলেছে, তার পূর্বাভাস দিয়েছে। সেই পূর্বাভাস মোতাবেক ফের একবার দেশের ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট।শনিবার সেই বুথফেরত সমীক্ষা প্রকাশ হতেই গোটা দেশ জুড়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে।তাতে রাজনৈতিক উত্তাপ চরমে উঠেছে।সেই উত্তাপ থেকে বাদ যায়নি উত্তর- পূর্বের ছোট রাজ্য ত্রিপুরাও।রাজ্যে দুইটি লোকসভা আসন হলেও, এখানেও রাজনৈতিক উত্তাপ কোনও অংশে কম নয়। স্বাভাবিকভাবেই এই রাজ্যেও শাসক-বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব, তাদের নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান থেকে বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

রবিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা বলেছেন, মোদিজীর নেতৃত্বে দেশ কোন দিকে যাচ্ছে, তারই বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে বুথফেরত সমীক্ষায়।প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং আমাদের দল শুরু থেকেই বলে এসেছে, এইবার ৪০০ পার।বুথফেরত সমীক্ষা তারই ইঙ্গিত দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি গত ১০ বছর যেভাবে দেশ পরিচালনা করেছেন, দেশবাসীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিকাঠামোগত উন্নয়নের উপর সবথেকে বেশি জোর দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি দেশের জনগণকে চারটি ভাগে ভাগ করে কাজ করেছেন। গরিব, কৃষক, যুব সমাজ এবং মহিলা।এই চারটি ক্ষেত্রকে সামনে রেখে সকলের সার্বিক উন্নয়নে নিরলস কাজ করে. গেছেন।প্রধানমন্ত্রী ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ার স্লোগান দিয়েছেন। সেই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এবং আমাদের দল নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়েছে। বিরোধীদের কাছে তেমন কোনও লক্ষ্য ছিল না।দেশবাসী সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।বুথফেরত সমীক্ষার যে আভাস, তা দেশের জন্য, দেশের সুরক্ষা, দেশের নিরাপত্তা, সার্বিক উন্নয়নের জন্য ভালো হবে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।

রাজ্য বিজেপির বরিষ্ঠ নেতা, তথা রাজ্য মন্ত্রিসভার বরিষ্ঠ সদস্য রতন লাল নাথ নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, বর্তমানে দেশে বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী মোদিকে প্রতিহত করতে পারে এমন কোনও বিরোধী শক্তি নেই।বিরোধীদের তেমন কোনও সংগঠন নেই। বিরোধীদের কোন লক্ষ্য নেই। ব্যক্তিগত এবং পরিবারের লাভালাভের জন্য বিরোধীদের রাজনীতি।এটা দেশের মানুষ বুঝতে পারছে।বুথফেরত সমীক্ষায় তারই ইঙ্গিত রয়েছে।রতনবাবু আরও বলেন, দেশে বিজেপির নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রী মোদিজীর নেতৃত্বে গত দশ বছর সরকার চলছে। এই দশ বছরে সারা বিশ্বে ভারতের গরিমা, মর্যাদা অনেক উপরে উঠেছে। দেশের মানুষ মনে প্রাণে চাইছিল একটা স্থিতিশীল ও শক্তিশালী সরকার।যা একমাত্র বিজেপিই দিতে পারে। তারই প্রতিফলন দেখা গেছে সমস্ত বুথ ফেরত সমীক্ষায়।প্রকৃত উন্নয়ন বলতে যা বোঝায়,তা গত দশ বছর ধরে দেশবাসী উপলব্ধি করে চলেছে।মানুষ
চাইছে এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক।
একইভাবে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন,২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে বিকশিত ভারত গড়ার গ্যারান্টি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। দেশবাসী মোদিজির সেই গ্যারান্টিতে আস্থা রেখেছেন। বুথ ফেরত সমীক্ষা সেই আভাসই দিয়েছে।শুধু শাসক দলই নয়, বিরোধী দলের পক্ষ থেকেও বুথ ফেরত সমীক্ষা নিয়ে নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে।সিপিআই (এম) পলিটব্যুরোর সদস্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার শুক্রবার দৃঢ়তার সাথে বলেছিলেন, বিজেপি এবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না। শনিবার বুথ ফেরত সমীক্ষা প্রকাশের পর রবিবার তার গলায় অন্য সুর শোনা গেল।
তিনি বলেন, চ্যানেলগুলো যেমন বুথ ফেরত সমীক্ষা দিয়েছে, আবার ইন্ডিয়া জোটের পক্ষ থেকেও বৈঠক করে নেতৃত্ব একটা সংখ্যা দিয়েছে। সকলের মতো আমরাও চার তারিখের অপেক্ষায় থাকলাম।

অন্যদিকে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরীর কণ্ঠেও নরম সুর শোনা গেল।তিনি বলেন, বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমের প্রকাশিত বুথফেরত সমীক্ষার আভাস অনেকবারই মেলেনি। এমন ঘটনা আছে।২০০৪ সালে এমন ঘটনা ঘটেছে। এখন সংবাদ মাধ্যমে দেখিয়েছে ঠিক আছে, কিন্তু ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের পর মল্লিকার্জুন খাড়গে যে কথা বলেছেন, তাকে কী করে ফেলে দেওয়া যাবে?তিনি আরও বলেন, বামপন্থীরা নির্বাচনকে একটি রাজনৈতিক সংগ্রাম হিসাবে নেয়।সেখানে পিছিয়ে পড়লে মন খারাপ হয় ঠিকই, তবে তা সাময়িক।কারণ বামপন্থীদের কাছে জয়ের আনন্দ আর পিছিয়ে পড়ার জন্য মন খারাপ, সবটাই সাময়িক। মানুষের পাশে থাকাটাই বামপন্থীদের মূল লক্ষ্য। জিতেন্দ্রবাবু আরও বলেন, এবার নির্বাচনে কোনও দলের পক্ষেই কোনও হাওয়া ছিল না। ফলে চার তারিখের জন্য অপেক্ষা করতেই হবে।

অপরদিকে কংগ্রেস নেতা বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ অবশ্য এই বুথফেরত সমীক্ষার আভাস মানতে নারাজ। তিনি স্পষ্টতই বলেন, এই বুথ ফেরত সমীক্ষা বানানো। এর কোনও ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, কোনও কোনও রাজ্যে এত আসনে প্রার্থী দেয়নি এমন দলকে বেশি আসনে জয়ী হবে বলে দেখানো হয়েছে। তামিলনাডুতে যত আসনে প্রার্থী দিয়েছে, তার চাইতে বেশি আসনে জয় দেখানো হয়েছে বলে দাবি করেন সুদীপবাবু।সব মিলিয়ে দাবি, পাল্টা দাবিতে রাজনীতির পারদ এখন তুঙ্গে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.