রাজ্যের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দেশে: মুখ্যমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-অরুন্ধতীনগরের স্টেট পঞ্চায়েত রির্সোস সেন্টারের গ্রাম স্বরাজ ভবনে শনিবার পঞ্চায়েতিরাজ দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, পঞ্চায়েতিরাজ ব্যবস্থা হচ্ছে ভারতের গ্রামীণ প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এই ব্যবস্থা গণতন্ত্রকেও শক্তিশালী করে। কারণ স্থানীয় জনগণ এর সাথে সরাসরি যুক্ত হয়ে গ্রামস্তরের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানীয় জল, রাস্তা ইত্যাদি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের রূপরেখা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
এই অনুষ্ঠান থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ভারতের উন্নয়নের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্নের বিকশিত ভারত নির্মাণের দিশায় কাজ করছে ত্রিপুরা সরকারের পঞ্চায়েত
দপ্তর।ত্রি-স্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সশক্তিকরণের মাধ্যমে ত্রিপুরা ইতোমধ্যেই দেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।বিভিন্ন প্যারামিটারে উৎকর্ষতার সূচক বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতীয় পঞ্চায়েত পুরস্কারে গত বছরেও সাতটি পুরস্কার লাভ করে তারই প্রমাণ মেলে ধরে। জাতীয় পঞ্চায়েত দিবস উদ্যাপনের অঙ্গ হিসেবে এ দিন রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের পদাধিকারীদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম, শিলং) এর সাথে একটি মৌ-ও স্বাক্ষরিত হয়। একই সাথে আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে নয়া স্মার্ট অফিস, ভিসি অফিসের উদ্বোধন, বাজ্যের সকল পঞ্চায়েতকে দিবাঙ্গজন বান্ধব পঞ্চায়েত ঘোষণা, পঞ্চায়েত দপ্তরের মাসিক মুখপত্র ‘গ্রাম সৃজন’ ও বার্ষিক রিপোর্টেরও আবরণ উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠান থেকে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা এ দিন বলেন, ২০১৪ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর গ্রামোন্নয়নের ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, গ্রামের উন্নতি ছাড়া দেশ ও রাজ্যের সার্বিক বিকাশ সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রী তাই বলেন, রাজ্যের পঞ্চায়েতগুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়নেও সেই অনুযায়ী গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। গত দু’বছরের হিসেব অনুযায়ী ৪৪টি নতুন পঞ্চায়েত ভবন, ৪টি জেলা পঞ্চায়েত রিসোর্স সেন্টার এবং আটটি পঞ্চায়েত লার্নিং সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। ১৫টি পঞ্চায়েত সহ ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিকমানের আইএসও-এর মর্যাদায় উন্নীত করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পঞ্চায়েতগুলিকে মডেল পঞ্চায়েত হিসেবে গড়ে তুলতে চিফ মিনিস্টার মডেল ভিলেজ স্কিমের মাধ্যমে সহায়তা করা হচ্ছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকাশিত পঞ্চায়েত ডিভলিউশান ইনডেক্স অনুযায়ী ত্রিপুরা দেশের মধ্যে সপ্তম স্থান দখল করেছে। যেখানে ২০১৫ সালে ত্রিপুরার স্থান ১৩তম ছিলো বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। পঞ্চায়েত ডেভেলপমেন্ট ইন্ডেক্সেও রাজ্যের ৩৬ শতাংশ পঞ্চায়েত এ-ক্যাটাগরিতে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার জন্য পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধি সহ কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এখন। বাস্তবসম্মত এবং বৈজ্ঞানিক উপায়ে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং স্থায়ী সম্পদ তৈরির মাধ্যমে পঞ্চায়েতকে সাজিয়ে তোলার জন্য মুখ্যমন্ত্রী জনপ্রতিনিধি সহ সকলকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানান।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেটে ৩ হাজার ৫০০ টি স্বসহায়ক দলকে শক্তিশালী করতে রিভলবিং ফান্ড এবং ৪ হাজার ৫০০ টি স্বসহায়ক দলকে একটি কমিউনিটি ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড প্রদান করার জন্য অর্থের সংস্থান রাখা হয়েছে। এছাড়াও আরজিএসএ-এর অধীনে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে একটি জেলা পঞ্চায়েত রিসোর্স সেন্টার গড়ে তোলার বিষয়টিও বাজেটে রয়েছে। এই অনুষ্ঠানে রাজ্যের আট জেলার জেলা সভাধিপতি সহ উপস্থিত ছিলেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (শিলং)-এর অধিকর্তা প্রফেসর নলিনি প্রভা ত্রিপাঠি, গ্রামোন্নয়ন (পঞ্চায়েত) দপ্তরের বিভিন্ন আধিকারিকরা। অনুষ্ঠানে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (শিলং)-এর সাথে পঞ্চায়েত দপ্তরের প্রশিক্ষণ বিষয়ক একটি মৌ স্বাক্ষরিত হয়। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (শিলং)-এর পক্ষ থেকে অধিকর্তা এবং রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে গ্রামোন্নয়ন (পঞ্চায়েত) দপ্তরের সচিব এই মৌ স্বাক্ষর করেন।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ এ দিন পুরস্কারও প্রদান করা হয় এই অনুষ্ঠানে। রাজ্যস্তরে উৎকৃষ্ট কাজের জন্য সেরা তিনটি ব্লকের মধ্যে রাজনগর প্রথম স্থান, হেজামারা দ্বিতীয় এবং অমরপুর ব্লক তৃতীয় স্থান হিসেবে পুরস্কার পায়। একই সাথে সেরা তিনটি পঞ্চায়েতের মধ্যে হেজামারা ব্লকের পূর্ব তমাকারি ভিলেজ কমিটি প্রথম, পদ্মবিল ব্লকের মারে হাদুক ভিলেজ কমিটি দ্বিতীয় এবং অমরপুর ব্লকের পশ্চিম ডালাক গ্রাম পঞ্চায়েত হয়েছে তৃতীয়। এছাড়াও জলবায়ু বিষয়ক এবং আত্মনির্ভর বিশেষ বিভাগে সেরা তিনটি পঞ্চায়েত, সেরা তিনজন অফিসিয়ালকেও পুরস্কার প্রদান করা হয়।