রাজ্যের বেকার চিত্র!!
রাজ্যে বেকারের গ্রাফ উর্ধ্বমুখী।শুধু রাজ্যে কেন, দেশে র বেকারদের চিত্র ভয়াবহ।মোদি জমানায় দিনদিনই বাড়ছে বেকার। তুলনায় চাকরিবাকরি নেই। এই অবস্থায় চাকরি নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই। কোথাও বেকার রয়েছে তো চাকরি নেই। কোথাও চাকরির পরীক্ষার পেপার লিক হচ্ছে। বেকাররা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। অন্যদিকে চাকরির প্রক্রিয়াও দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকায় বেকারদের মধ্যে হতাশা দানা বাঁধছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, বেকার সমস্যায় জর্জরিত গোটা দেশ। আমাদের রাজ্যেও এর অন্যথা হচ্ছে না। এ রাজ্যেও দিনদিন বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। রাজ্যে ২০১৮ সালে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর রাজ্য সরকার চাকরি নিয়ে তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য বাহবা কুড়াতে পারেনি। কিছু চাকরি হয়েছে শিক্ষা দপ্তরে, আর কিছু চাকরি হয়েছে জেআরবিটির মাধ্যমে। কিছু খুচরো চাকরি হয়েছে।তাও এমন চাকরি হচ্ছে পুরোপুরি চুক্তিভিত্তিক। অর্থাৎ চাকরির কোনও নিশ্চয়তা নেই। এই অবস্থায় রাজ্যে বেকারের গ্রাফও ঊর্ধ্বমুখী। কলকারখানা, শিল্পবিহীন এ রাজ্যে সরকারী চাকরির উপরই বেকাররা নির্ভর করে। এক সময় বামেরা বেকারদের নিয়ে রাজনীতি করতো। দিনের পর দিন বেকারদের মিছিলে হাঁটাতো আর বছরের পর বছর চাকরি প্রক্রিয়া জারি রাখত। বর্তমান বিজেপি সরকারও প্রায় একই রাস্তায় হাঁটছে। এখন টিপিএসসির এক চাকরি প্রক্রিয়া চলছে বছরের পর বছর ধরে। মাঝে যদি কেউ আদালতের দ্বারস্থ হয় তাহলে তো আর কথাই নেই। সরকার চাইছে মনে মনে যেন কেউ আদালতে যাক। চাকরি প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হোক তাই কি চাইছে সরকার? ভাব দেখে তো তাই মনে হয়।
সংবাদে প্রকাশ, রাজ্য সরকারের ত্রিশটি পদের জন্য চৌদ্দ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়েছে। গড়ে একটি পদের জন্য প্রায় পাঁচশটি আবেদনপত্র। ছোট এই রাজ্যের জন্য এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে কী রকম ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগোচ্ছে রাজ্যের বেকার চিত্র।
একদিকে রাজ্য সরকার প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে রাজ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া অবাহত রয়েছে। অন্যদিকে একেকটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে হতে প্রায় চার-পাঁচ বছর লেগে যাচ্ছে। এটা কী ধরনের ব্যবস্থা!এটা কি বেকারদের ঠকানো হচ্ছে না? বেকারদের জীবন থেকে অমূল্য তিন-চার-পাঁচ বছর চলে যাচ্ছে। এটা কোন্ ধরনের ব্যবস্থা। সরকার নিয়োগ প্রক্রিয়া এতো দীর্ঘায়িত কেন করছে?এটা কি সরকারের ইচ্ছেকৃত?যেমন জেআরবিটি পরিচালিত রাজ্যে পরীক্ষা হয়েছিল
২০২১ সালের আগষ্ট মাসে।এখনও জেআরবিটির গ্রুপ ডি পদে চাকরি দিতে পারেনি রাজ্য সরকার। বেকারদের নিয়ে রাজ্য সরকার কি ছিনিমিনি খেলছে?শুধু তাই নয়, অফার বিলি নিয়েও প্রচারে যাচ্ছে রাজ্য সরকার।ঘটা করে মন্ত্রীরা অফার বিলি করছে। এটা কী ধরনের ব্যবস্থা।এমনিতেই দীর্ঘায়িত চাকরি প্রক্রিয়ার পরে বেকাররা চাকরি পাচ্ছে ইতিউতি আবার সেই চাকরির অফার বিলি হচ্ছে ঘটা করে। মন্ত্রীরা অফার বিলি করছেন আর ফটোশুট হচ্ছে।
বর্তমানে টিপিএসসির চাকরি প্রক্রিয়াও তিন-চার বছর লাগানো হচ্ছে। এটা কি ইচ্ছাকৃতভাবে করানো হচ্ছে কি না তাই প্রশ্ন। টিইএস পরীক্ষা দীর্ঘদিন পর রাজ্যে অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আদালতে যায় বেকাররা। পরবর্তীতে ফলাফল পর্যালোচনা করা হয়। ফের রেজাল্ট প্রকাশিত হয়। বর্তমানে এই পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলও প্রকাশের অপেক্ষায়। অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আবার এমনও হচ্ছে যে, শূন্যপদ রয়েছে, নিয়োগের উদ্যোগ নেই। বেকারের তালিকা দীর্ঘ। রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে বেকারের স্বার্থে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কেননা বেকার চিত্র ঊর্ধ্বগতি হলে তা কখনও রাজ্যের পক্ষে সুখকর হতে পারে না। রাজ্য সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল বছরে পঞ্চাশ হাজার চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু ২০১৮ সালের পর তাও ছয় বছরে এখনও সব মিলিয়েও পঞ্চাশ হাজার চাকরি দিতে পারেনি রাজ্য সরকার। বেকারদের নিয়ে রাজ্য সরকারের এই মনোভাব কেন তা ভেবে দেখবার সময় এসে গেছে।