বিভৎস ট্রেন দুর্ঘটনা, ছিটকে গেল চলন্ত তিনটি মালগাড়ির কামরা!!
রাজ্যে বেকার, শিক্ষক কর্মচারী কৃষক বিপাকে, পথে নামুন: মানিক!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যে জন
বিরোধী সরকারের একনায়ক রাজত্ব চলছে। গত সাত বছর ধরে রাজ্যে সরকার বলে কিছু নেই। তবে জনগণের ভোটে ক্ষমতা দখলের আনন্দে বিভোর মন্ত্রিসভার প্রতিনিধিরা উন্নয়নের অর্থে উল্লাসে ব্যস্ত রয়েছেন। তাই রাজ্যে গ্রাম পাহাড়ে হাহাকার চলছে। বেকারের চাকরি নেই। রাজ্যের শিক্ষক কর্মচারীদের কেন্দ্রীয় বেতন, শ্রমিক, কৃষক, জুমিয়াদের কাজ খাদ্য নেই। কারণ একটাই – রাজ্যে সাইন বোর্ডে পরিণত হচ্ছে বিজেপি সরকার। আজ ঠিক এভাবেই বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকার।
শুক্রবার আগরতলা টাউন হলে ৮০তম জনশিক্ষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত হলসভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার রাজ্যে উন্নয়ন, বেকারের চাকরি বন্ধ করে দিয়ে এদের এখন প্রধান কাজ হল রাজ্যব্যাপী সংগীত জলসার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার আদ্যশ্রাদ্ধ করা। আমি শুনতে পারলাম এক রাতের গানের জন্য সাত কোটি টাকা রাজ্যের কোষাগার থেকে গায়ের হয়ে গিয়েছে। আবার এই সরকারের কাছে অনিয়মিত, চুক্তিবদ্ধ কর্মচারীদের নিয়মিত করার জন্য টাকা নেই। তবে এসব সঙ্গীত সন্ধ্যায় আবার মন্ত্রীরা ছিলেন কিন্তু নেচেছেন কিনা তা জানতে পারলাম না আমি।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার প্রয়াত দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আমরা ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি ত্রিপুরায় এসেছেন।তবে আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সব
কাজ করছেন সেটা যেমন ঠিক নয়, আবার কিছুই করেননি সেটিও ঠিক নয়। তিনি বেশ কিছু উন্নয়নমূলক ব্যবস্থাও নিয়েছেন। জনশিক্ষা আন্দোলন সম্পর্কে বলতে গিয়ে মানিক সরকার বলেন, ৪৫-এ জনশিক্ষা আন্দোলন ৪৬-এ নৌ বিদ্রোহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রায় শেষ দিকে দেশ স্বাধীন হওয়ার লক্ষ্যে ভারত এগিয়ে চলেছে ওই সময় এই জনশিক্ষা আন্দোলন ত্রিপুরার গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।
তিনি বলেন, রাজ্যে কংগ্রেস – যুব সমিতির সরকার পতনেও এই আন্দোলন বড় ভূমিকা নিয়েছিল। জনশিক্ষা সমিতির মূল লক্ষ্য ছিল ভাষা ও সুন্দর ব্যবস্থার ত্রিপুরা গঠন।এক দেশ এক ভোট বিল আনার তীব্র বিরোধিতা করে তিনি বলেন,পুরোটাই
বিভ্রান্তিতে ভরা,যা সংবিধানের মৌলিক অধিকারের বিরোধী। এরপর কী আনবে এরা এক দল এক নেতা। সংসদে সংবিধান প্রণেতা আম্বেদকরের সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন তা ঠিক হয়নি। মনু সংহিতাকে সংবিধানে জায়গা দিতে চাইছে, এটা পরিকল্পনামাফিক আক্রমণ। মহিলাদের সম্পর্কে তাদের বক্তব্য কী? মেয়েরা কথা বলতে পারবে তো? তিনি বলেন, রাজ্যে বন্যায় ৩৯ জনের মৃত্যু হল। রাজ্যের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে তাদের কোনও হুঁশ নেই। মানিকবাবুর অভিযোগ, সরকারটা দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়ে গিয়েছে। তাই অর্থ ছাড়া কোনও কাজ হয় না। রাজ্যে এডিসির আরও বেহাল দশা। জনগণের একতা ভাঙতে এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বিপথগামী করতে ত্রিপুরার বুকে বিজেপি ও তিথা মথা নিজেদের মধ্যে দায়িত্বভাগ করে নিয়েই যে এগোচ্ছে তা এখন রাজ্যবাসী বুঝে গিয়েছেন।রাই এদের শেষরক্ষা হবে না। তার দাবি বিধানসভা নির্বাচনের পর বিজেপি বুঝতে পেরেছে রাজ্যের বৃহত্তর অংশ বিজেপির প্রতি আস্থা হারিয়েছে। তিপ্রা মথা উপজাতি ভোটারদের বিভ্রান্ত করে বিজেপির পরাজয় ঠেকিয়েছে। একসময় তিপ্রা মথা বিজেপিবিরোধী মুখোশ পরে উপজাতিদের আবেগ জালে ফাঁসিয়েছিল। এখন সেই মুখোশ খসে পড়েছে। এই ছলনা,প্রলোভন, এই ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের আর এস এস সরাসরি ব্রিটিশদের সাহায্য করছে। তারা জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত মানতে চায় না। তিনি বলেন, তারা নির্বাচন কমিশনকে বগলদাবা করে ফেলেছে, নির্বাচনের একাধিক সুযোগসুবিধা সাধারণ মানুষ পেতো সেগুলো সব কেড়ে নিয়েছে।তাই এদের বিরুদ্ধে তিনি রাজ্যবাসীকে রাজপথে নামার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে গণমুক্তি পরিষদের সভাপতি নরেশ জমাতিয়া বলেন, একসময় উপজাতিরা মুধ্যযুগীয় অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, সেখান থেকে জনশিক্ষা আন্দোলনই আলোর পথ দেখিয়েছে। গণমুক্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাধাচরণ দেববর্মা বলেন, তিপ্রা ল্যান্ড থেকে গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের দাবি ভুল পথে উপজাতিদের চালিত করার চেষ্টা হচ্ছে। গণমুক্তি পরিষদের সহসভাপতি অঘোর দেববর্মা বলেন, শিক্ষা ছাড়া কোনও জাতীয় বিকাশ ঘটে না সেটা উপজাতিদের মধ্যে বিরাজ করেছে, কেন না রাজসিংহাসন ধরে রাখতে রাজারা অশিক্ষাকেই এগিয়ে দিয়েছিলেন, তারা শুধু রাজপরিবারের মধ্যেই শিক্ষা চালু রেখেছিল, জনশিক্ষা আন্দোলন ওই প্রথাকে রুখেছিল আর জনশিক্ষা আন্দোলনের ফলে উপজাতিদের মধ্যে শিক্ষা প্রবেশ করতে পেরেছে।
উল্লেখ্য এদিন টাউন হলে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।