বিভৎস ট্রেন দুর্ঘটনা, ছিটকে গেল চলন্ত তিনটি মালগাড়ির কামরা!!
রাজ্যে মেডিকেল ইউনিভার্সিটি গড়ার চিন্তাভাবনা মুখ্যমন্ত্রীর

রাজ্যের দ্বিতীয় আয়ুষ হাসপাতালের উদ্বোধন হলো শনিবার উদয়পুরে। একই দিনে শান্তিরবাজারে সূচনা হলো নতুন ট্রমা সেন্টারের। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা এর উদ্বোধন করে বলেন রাজ্যের সবকটি জেলা হাসপাতালগুলিতে সর্ব সুবিধাযুক্ত হাসপাতালে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। রাজ্যের রাজধানী হাসপাতালগুলিতে যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা রয়েছে এই সমস্ত সুযোগ সুবিধাগত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে সরকারের চিন্তাভাবনা রয়েছে। ভবিষ্যতে হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ত্রিপুরা রাজ্যে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

ইতিমধ্যে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ডেন্টাল মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন। এডিসি এলাকায় একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জায়গা দেখা হয়ে গেছে। সবমিলে রাজ্য একটি মেডিকেল হাব গড়ে তোলা হবে। একই সঙ্গে মেডিকেল ইউনিভার্সিটি করা যায় কি না রাজ্য সরকারের চিন্তাভাবনা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও বলেন, দেশকে সুরক্ষিত রাখা ও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া মানুষকে সুস্থ রাখা খুবই প্রয়োজনীয়। দেশের কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার এই দিশা নিয়ে কাজ করছে। দেশের জন্য কাজ করাই হলো আমাদের মূল লক্ষ্য।

উদয়পুরের চন্দ্রপুর এলাকায় পুরাতন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দশ শয্যা বিশিষ্ট আজ রাজ্যের দ্বিতীয় আয়ুষ হাসপাতালের পথ চলা শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য ২০১২ সালের ছাব্বিশ ডিসেম্বর চন্দ্রপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তপন চক্রবর্তী। দীর্ঘদিন এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চন্দ্রপুর এলাকাবাসীদের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে গেছে। এই প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির সঙ্গে আরও ৬৭টি সাব সেন্টার যুক্ত ছিল। কোভিড চলাকালীন সময়ে এটিকে ডেডিকেটেড কোভিড সেন্টার হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর দীর্ঘদিন এই সেন্টারটি বন্ধ ছিল।এই পুরানো চন্দ্রপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে আয়ুষ হাসপাতাল হিসাবে নতুন করে পরিষেবা দেওয়ার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শনিবার এর সূচনা করেন।

যদিও আয়ুষ হাসপাতালের যে ধরনের পরিকাঠামো প্রয়োজন কোনও রকমের পরিকাঠামো ছাড়াই নির্বাচনের আগে আয়ুষ হাসপাতালের গ্রহণ করার উদ্যোগকে কেন্দ্র করে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা দেবাশিস বসু জানান, এই আয়ুষ হাসপাতালটি চব্বিশ ঘন্টা খোলা থাকবে। চারজন চিকিৎসক এই পরিষেবা দেওয়ার জন্য যুক্ত থাকবেন। এদের মধ্যে তিনজন আয়ুষ চিকিৎসক এবং একজন হোমিও চিকিৎসক। জানা গেছে, অন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ডেপুটেশনে এনে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যে স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে চিকিৎসকদের আনা হয়েছে সেগুলি একপ্রকার বন্ধই থেকে যাবে।

এদিনের আয়ুষ হাসপাতালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, জেলা পরিষদের সভাধিপতি স্বপন অধিকারী, বিধায়ক বিপ্লব কুমার ঘোষ, উদয়পুর পুরো পরিষদের চেয়ারম্যান শীতল চন্দ্র মজুমদার, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা শুভাশিস দেববর্মা প্রমুখ। এই অনুষ্ঠানের পৌরহিত্য করেন মাতাবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান সুজন কুমার সেন।শান্তিরবাজার প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, এদিন শান্তিরবাজারে দক্ষিণ জেলা হাসপাতালে ট্রমা কেয়ার সেন্টারের উদ্বোধন হয়েছে। উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা।তিনি বলেন, ট্রমা মানে ইমার্জেন্সি বিষয়।

সড়ক দুর্ঘটনা সহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা, সোশ্যাল ভায়োলেন্স ইত্যাদি কারণে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত মানুষের তৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্যই দরকার ট্রমা সেন্টারের। জেলায় এ ধরনের চিকিৎসা কেন্দ্র থাকলে অনেকের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। তার জন্যই চিকিৎসা পরিষেবা উন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। দূরত্বের কারণে জখমপ্রাপ্ত মানুষ রাস্তাতেই প্রাণ হারায়। এখন থেকে এখানে চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হবে। স্টেট হাসপাতালে যে সকল চিকিৎসা পরিষেবার সুযোগ সুবিধা রয়েছে সেগুলি জেলা হাসপাতালেও যাতে উপলব্ধ হয় তার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জেলা হাসপাতালে এখন অনেক ধরনের সফলতার সাথে বিরল অস্ত্রাপচার হচ্ছে। এই বিষয়গুলি সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে মানুষকে অবগত করা দরকার। চিকিৎসকরা যাতে এই কাজটা করেন। তাহলে জেলার গরিব জনসাধারণ উপকৃত হবে। রাজধানীতে ছুটতে হবে না তাদের। তিনি বলেন, চিকিৎসা বিষয়ে অনেক সময় রোগীর পার্টি চড়াও হয় ডাক্তারদের উপর। ডাক্তাররা সব সময়ই চান তার বেস্ট-টা রোগীকে দিতে। এটা সবাইকে বুঝতে হবে। ডাক্তারদের উপর ভরসা রাখতে হবে। আবার ডাক্তাররাও আশ্বস্ত করতে হবে রোগী ও তার পরিজনদেরকে।আজ, শনিবার ইংরেজি বর্ষের শেষদিনে শান্তিরবাজার মহরুমায় তিনটি সরকারী ও একটি দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী।

প্রথমে ট্রমা সেন্টারের উদ্বোধনের পর চলে যান বাইখোড়ায়।সেখানে বাইখোড়া ইংলিশ মিডিয়াম দ্বাদশ স্কুলের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন তিনি।এরপর উদ্বোধন করেন জোলাইবাড়ি কৃষি তত্ত্বাবধায়ক অফিসের। শেষে জোলাইবাড়ি স্কুল মাঠে যুবমোর্চা আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেন।বাইখোড়ায় স্কুল ভবন উদ্বোধনের পর মুখ্যমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, ইংরেজি মাধ্যমে স্কুল হয়েছে ভালো বিষয়। কিন্তু নিজের ভাষা ছাড়া কখনও নিজেকে সমৃদ্ধ ও উন্নত করা যায় না।কিছু সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ভিন্ন পথে চলে যায়। নেশায় আসক্ত হয়। শিক্ষকরা সিলেবাসের বাইরে গিয়েও ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করার জন্য ক্লাস করতে হবে।

জোলাইবাড়ি স্কুল মাঠে প্রকাশ্য সভায় ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদের কেউ কেউ সারাজীবন বিরোধীতা করে গেছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে তাদের কোনও ভাবনা নেই। দক্ষিণ জেলায় সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে সাতটিই বিজেপি জয়ী হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিগত পাঁচ বছরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ ও প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি। এর আগে ভাষণ দেন কৃষিমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, বিধায়ক শঙ্কর রায় প্রমুখ।ট্রমা সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সচিব দেবাশিস বসু, স্বাস্থ্য অধিকর্তা সুভাশিস দেববর্মা, এডিএম অসীম সাহা, বিধায়ক প্রমোদ রিয়াং, শঙ্কর রায়, সিএমও সুব্রত দাস প্রমুখ।
