রাজ্য সরকারের সব সিদ্ধান্ত আমরা মানতে বাধ্য না : প্রদ্যোত!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্য সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে তা আমরা মানতে বাধ্য না। এ ধরনের কোনও চুক্তি আমাদের হয়নি। ত্রিপুরায় নির্বাচনের সময় মহারাজাদের নামে ভোট চাইবেন, আর উপজাতি আবেগকে সামনে এনে ক্ষমতায় বসবেন, এরপর মহারাজা ও উপজাতি জনসমাজকে ভুলে যাবেন, এমনকী রাজ্যের রাজন্য স্মৃতি, ইতিহাসকে ব্যবসার জন্য বিক্রি করে দেবেন আর তা আমাদের মাথা পেতে স্বীকার করতে হবে – এসব হবে না। শনিবার রাজধানীর পুষ্পবন্ত প্রাসাদে (পূর্বতন রাজভবন) রাজ্য সরকারের পাঁচতারা হোটেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত ঘিরে রাজ্য সরকারকে এমনভাবেই বিঁধলেন তিপ্রা মথার সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ।
তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, শুক্রবার পর্যটনমন্ত্রী মহাকরণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে যে ভাষায় ত্রিপুরার মহারাজা, রাজ পরিবার, আমাকে ব্যক্তিগত হামলা করেছেন, তা মোটেও ভালো হয়নি। এ বিষয়টি আমি এবং রাজ পরিবার সহ রাজ্যের উপজাতি জনসমাজ মনে রাখবেন। তা আমরা ভুলবো না। শনিবার ঠিক একই সুরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রাজ পরিবারের বিরুদ্ধে যে ধরনের কথা বলেছেন তা মোটেও ঠিক হয়নি। সঠিক সময়ে এর উত্তর পাবে তারা – বলেন প্রদ্যোত। প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে রাজ পরিবারের মার্জার চুক্তি হয়েছে। তাই আমরা জবাব কেন্দ্রীয় সরকারকে দেবো। রাজমাতা মহারাণী বিভু দেবীর সাথে পর্যন্ত এরা এই সিদ্ধান্ত নেবার পূর্বে একবারও আলোচনার প্রয়োজনবোধ কি করলো না। আমার কথা তো ছেড়েই দিলাম। আমরা কি বলেছিলেম আমাদের সাথে আলোচনায় বসা হোক। রাজ্য সরকারের এত ভয় কেন আমাদের সাথে আলোচনায় বসতে?
তিনি বলেন, ১৯৪৯ সালে রাজমাতা কাঞ্চনপ্রভা দেবী পুরাতন রাজভবনটি বিনামূল্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে দিয়েছিলেন। শুধুমাত্র রাজ্যপাল যাতে পুষ্পবন্ত প্যালেসে থাকতে পারেন। এখানে হোটেল খোলার কোনও চুক্তি হয়নি। ২০১৮ সালে বিজেপি-আইপিএফটি সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুষ্পবন্ত প্যালেসে মহারাজাদের ইতিহাস সংরক্ষিত রাখার জন্য পাবলিক লাইব্রেরি নির্মাণের ঘোষণা হয়। এমনকী ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর পুষ্পবন্ত প্রাসাদে ত্রিপুরার প্রথম ডিজিটাল জাদুঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এর জন্য মোটা অঙ্কের অর্থও মঞ্জুর করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার, যা আজ পর্যন্ত হয়নি।
তিনি বলেন, রাজ্যের পর্যটনের উন্নয়ন হোক। রাজ্যের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের আমরা বিরোধিতা করছি না। তবে পুষ্পবন্ত প্যালেসে পাঁচতারা হোটেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত কেন হলো? রাজ্যের অন্য জায়গায় হোটেল নির্মাণ হোক। রাজ্য সরকারকে জায়গা প্রয়োজনে আমি দেবো। তবে রাজন্য আমলের ইতিহাসকে আর রাজ্যে ধ্বংস করতে দেওয়া হবে না। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি রাজ্যবাসীকে রাজপথে নামার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ১৯৪৯ সালে মার্জারের মাধ্যমে রাজবাড়ি, পুষ্পবন্ত প্যালেস বিনামূল্যে ভারত সরকারকে প্রদান করা হয়েছিল। একইভাবে জগন্নাথবাড়ি, শিববাড়ি, চতুর্দশ দেবতা বাড়ি, লক্ষ্মীনারায়ণ বাড়ি, দুর্গাবাড়ি, ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরও প্রদান করা হয়েছে। এগুলি শুধুমাত্র মানুষের ব্যবহারের জন্য। তা হলে এখন সবগুলি স্থানে রাজ্য সরকার কি হোটেল বানিয়ে নেবে? তিনি বলেন, মাণিক্য কোর্ট, মালঞ্চ নিবাস, মাণিক্য এনক্লেভ এগুলি প্রাসাদ নয়- এসব বলে রাজ্যবাসীকে বিভ্রান্ত করতে পারবেন না মুখ্যমন্ত্রী এবং পর্যটনমন্ত্রী সহ রাজ্য সরকার। তাহলে কি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে হোটেল বানিয়ে ফেলা হবে? তিনি বলেন,১৯১৭ সালে মহারাজা বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্য দ্বারা নির্মিত এই প্রাসাদটি এই রাজ্যের বহু উজ্জ্বল ঐতিহ্যের সাক্ষী। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাতবারের ত্রিপুরা ভ্রমণে ১৯২৬ সালে শেষবার যখন ত্রিপুরায় এসেছিলেন তখন তাঁর আস্তানা হয়ে উঠেছিল এই পুষ্পবন্ত প্রাসাদ।১৯৪১ সালের মে মাসে মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য এই প্রাসাদেই এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮০তম জন্মদিন পালন করেছিলেন।এসব ইতিহাস মুছে দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে রাজ্য সরকার। এদিকে,শনিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনেও রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেছে তিপ্রা মথার ছাত্রযুবরা। মথার ছাত্রযুবরা রাজ্য সরকারকে পাঁচ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন।যদি এর মধ্যে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হয় তবে রাজ্যব্যাপী পথ অবরোধ আন্দোলনে যাবেন তারা।