রামকৃষ্ণ মিশনকে দান ১.২৫ লক্ষ টাকা,বন্যাপীড়িতদের পাশে দৈনিক সংবাদ!!

 রামকৃষ্ণ মিশনকে দান ১.২৫ লক্ষ টাকা,বন্যাপীড়িতদের পাশে দৈনিক সংবাদ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভয়াবহ
বন্যায় বেহাল গোটা ত্রিপুরা। চতুর্দিকেই বিদ্যমান শুধু ধ্বংসের ছবি।সর্বত্রই অসহায়,দুর্গত ও আর্ত মানুষের হাহাকার।লাখো পরিবার আজ কার্যত বাস্তুহারা। কারো বাড়ি বন্যায় সম্পূর্ণভাবে ভূপাতিত।কারো বা বাড়ির অস্তিত্ব ভাগ্যক্রমে দাঁড়িয়ে থাকলেও সম্পূর্ণ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে।কাদা-বালি পলিতে একাকার।মাঠের সোনালী চাষের জমিও কার্যত বন্যার তোড়ে অস্তিত্বহীন।মাঠের পর মাঠ ধান- সবজির সবুজের সমারোহ আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।মাঠের পর মাঠ কাদা পলিতে একাকার হয়ে গেছে।অন্ধকার ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় দিন গুনছেন বন্যাদুর্গত অসহায় মানুষ। কোনও দিনই যাদের সমাজ বা সরকারের কাছে হাত পাততে হয়নি, বন্যায় তাদের
পরিস্থিতি এতটাই বীভৎস ও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে আজ তাদেরও বাঁচার জন্য পথ চেয়ে থাকতে হয়।এমন অনেক পরিবার রয়েছে যাদের ত্রাণ সংগ্রহ করতে বিবেকে বাঁধছে।কিন্তু বন্যার করাল গ্রাসে আজ তারা সর্বস্বান্ত।সোমবার দৈনিক সংবাদের তরফে রামকৃষ্ণ মিশনের কাছে সেই দুর্গতদের
সাহায্যের জন্য ১.২৫ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়েছে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।এই অনুষ্ঠানে ভূপেন দত্ত ভৌমিক ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সঞ্জয় পাল বলেছেন, জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে এক কাপড়ে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে বহু মানুষকে। আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণ শিবিরে।এমনও বহু পরিবার রয়েছে যারা কখনও ভাবেননি তাদের জীবনে এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতি নেমে আসবে।কিন্তু বন্যাজনিত কারণে সেই অকল্পনীয় পরিস্থিতি নেমে এসেছে তাদের জীবনে।এ পরিস্থিতি সরকারী- বেসরকারী সংস্থা, সংগঠন থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ ত্রাণসামগ্রী সহ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে এক্ষেত্রেও একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী ও সুযোগসন্ধানী মাঠে রয়েছে যাদের কারণে বহু ক্ষেত্রে প্রকৃত দুর্গতদের কাছে ত্রাণসামগ্রীসহ সাহায্য পৌঁছাচ্ছে না।যাতে এ ধরনের স্বার্থান্বেষী ফড়েদের খপ্পরে পড়ে ফের সরকারী সাহায্য- পনর্বাসন থেকে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা বঞ্চিত না হন তা খতিয়ে দেখে পুনর্বাসনের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে রাজ্য সরকার যেন সর্বদলীয় কমিটি গঠন করে।সোমবার
সন্ধ্যায় নতুননগরস্থিত দৈনিক সংবাদ অফিসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে
বন্যাদুর্গতদের সাহায্যার্থে রামকৃষ্ণ মিশনের বিবেকনগর শাখার সম্পাদক
স্বামী শুভকরানন্দ মহারাজের হাতে দৈনিক সংবাদের পক্ষ থেকে এক লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়েছে। চেক তুলে দেন ট্রাস্টের
চেয়ারম্যান সঞ্জয় পাল।তিনি
সাম্প্রতিক বন্যার ভয়াবহতা নিজের চোখে দেখে বন্যাবিধ্বস্তদের বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন এদিন।আলোচনা করতে গিয়ে চেয়ারম্যান শ্রীপাল বলেন, প্রয়াত সম্পাদক ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিকের আদর্শ এবং প্রদর্শিত পথেই সর্বদা অসহায়-দুর্গত ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যেই রামকৃষ্ণ মিশনের
হাতে ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিক ট্রাস্ট এক লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকার চেক
প্রদান করা হয়।শ্রীপাল দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, রামকৃষ্ণ মিশনের মাধ্যমেই প্রকৃত দুর্গত ও বিপন্নদের কাছে ত্রাণসামগ্রী ও সাহায্য সঠিকভাবে পৌঁছাবেই সেই বিশ্বাস ও নিশ্চয়তার কারণে রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে এই চেক তুলে দেওয়া।
এদিকে রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকনগর শাখার সম্পাদক স্বামী শুভকরানন্দ মহারাজ সংশ্লিষ্ট আলোচনায় বলেন, বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে দৈনিক সংবাদের পক্ষ থেকে এক লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকার চেক রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ প্রশংসনীয়।দৈনিক সংবাদ শুধু সংবাদ পরিবেশনের দায়িত্বেই নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে দুর্দিনে ও প্রয়োজনের সময়ে দুর্গত-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় আজকের অর্থরাশি প্রদানই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
কিছুদিন আগেও রাজ্যের দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়ে
তাদের পড়াশোনার জন্য আর্থিকভাবে সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দিয়েছে।ভবিষ্যতেও সাধারণ ও দুর্গত-অসহায়
মানুষের পাশে দৈনিক সংবাদ
নির্ভীকভাবে থাকবে।’জীব সেবাই শিব সেবা’ -সেই মন্ত্রেই কাজ করছে দৈনিক সংবাদ। আলোচনায় স্বামী শুভকরানন্দ মহারাজ রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে তার সরেজমিনে
দেখা অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন।স্বামী শুভকরানন্দ মহারাজ বলেন,
রামকৃষ্ণ মিশন তার সাধ্যমতো সবসময় বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করে।বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে দুর্গতদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া যাতেভসুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সেদিকে সংবাদমাধ্যমকে নজরদারি রাখতে হবে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসী স্বামী ভক্তিসুধানন্দ মহারাজ বলেন, তিনি নিজে অমরপুর, চেলাগাং গিয়ে বন্যার যে ভয়াবহতা ও ক্ষতির বহর দেখেছেন তা অবর্ণনীয়।বহু পরিবার সম্পূর্ণভাবে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে।চেলাগাং এলাকার ন্যূনতম পাঁচটি গ্রামে কার্যত তেমন কোনও পাকাবাড়ি পর্যন্ত নেই।যেসব মাটির ঘর ছিল তার সিংহভাগই ভেঙে পড়েছে।আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন মানুষ। বেঁচে থাকার জন্য পুলিশ ফাঁড়ি ও স্কুলে মাথা গোঁজেছেন। ত্রাণের উপর ছিল নির্ভরশীল জীবন। মানুষ এক দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে পড়েছেন।এ পরিস্থিতিতে রামকৃষ্ণ মিশনের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো তাদের সাহায্য করার প্রয়াস নেওয়া হয়। দৈনিক সংবাদের এই অর্থরাশি থেকে রামকৃষ্ণ মিশন আরও কিছু অসহায় মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারবে।তিনি দৈনিক সংবাদের এই অর্থদানের জন্য ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিক ট্রাস্টকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি স্বপন চন্দ্র দাস বলেন, রামকৃষ্ণ মিশন বরাবরই অসহায়, দুর্গত মানুষের জন্য কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, দৈনিক সংবাদ বন্যাদুর্গতদের সাহায্যার্থে যে অর্থবাশি রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে
তুলে দিয়েছে তা রামকৃষ্ণ মিশনের মাধ্যমে প্রকৃত দুর্গতদের কল্যাণে লাগবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে হেডলাইন্স ত্রিপুরার সম্পাদক প্রণব সরকার বলেন, দৈনিক সংবাদের প্রয়াত সম্পাদক ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিকের আদর্শ ও প্রদর্শিত পথে চলছে ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিক ট্রাস্ট। শ্রীসরকার বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে দৈনিক সংবাদের পক্ষ থেকে রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে অর্থরাশি তুলে দেওয়ায় ট্রাস্টকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়াও বক্তব্য রাখতে গিয়ে ট্রাস্টের সদস্য ডা. পার্থপ্রতিম সাহা বলেন, ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিক সবসময় অসহায়-দুর্গত মানুষের স্বার্থে কাজ করে গেছেন।বর্তমান ট্রাস্টও তাঁর আদর্শকে সামনে রেখে মানুষের স্বার্থে কাজ করছে।ভবিষ্যতেও দৈনিক সংবাদ দুর্গত ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে।তিনি ট্রাস্টের এ ধরনের সার্বিক উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তাছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টের সচিব তথা – দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক প্রদীপ দত্ত ভৌমিক ট্রাস্ট সদস্য বিরাট দও ভৌমিক,নর্থ ইস্ট কালার্স পত্রিকার সম্পাদক সঞ্জীব দেব প্রমুখ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.