রাম রাখি না ভোট!
অনলাইন প্রতিনিধি :-ভারতীয় রাজনীতির চালু প্রবাদ, গো-বলয় যার দিল্লী তার। সেই বৃহত্তর বলয়ে হিন্দু ভোট হারানোর ঝুঁকি নিয়েও রামমন্দিরের অনুষ্ঠানকে প্রত্যাখ্যান করেছে কংগ্রেস। রামমন্দিরে বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে কংগ্রেস নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ পাঠানো ছিল দাবার বোর্ডে কিস্তিমাতের চাল।কংগ্রেস নেতারা তাতে যোগ দিলে দলের ধর্মনিরপেক্ষ বহুত্ববাদী অবস্থানে বড় মাপের ধাক্কা লাগতো।আবার সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিলে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পাপের দায়ভাগও নিজের ঘাড়ে নিতে হতো।বিজেপিও বিলক্ষণ জানত,সেটাই হয়েছে। বিজেপিও এমন সুবর্ণসুযোগ হাতছাড়া করেনি।পত্রপাঠ কংগ্রেসকে তারা ‘হিন্দুবিরোধী’ বলে দেগে দিয়েছে।একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ‘কংগ্রেসের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচিত হল’ মর্মে বয়ান দিয়েছেন।এই পর্যন্ত রাজনীতি তার স্বাভাবিক গতিপথেই এগিয়েছে।কিন্তু বাকি বিরোধীদের বাইশ জানুয়ারী নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট না করে বরং ‘রাম রাখি না ভোট রাখি’ দোলাচল দেখে মনে হচ্ছে, নির্বাচিন ক্যালেন্ডারের চেয়ে তাদের কাছে অধিক অভিপ্রেত শাসক দলের অনুগ্রহের অনুপান লাভ। কারণ এমন কথা কোনও বিরোধী নেতা-নেত্রী এখনও বলেননি যে,ভারত নামক রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় মন্দির উদ্বোধন নিয়ে এমন আতিশয্য সংবিধানের মূল কাঠামোর পরিপন্থী।বলেননি বা বলতে পারেননি তার কারণ,সকলেই ছুটেছেন ভোটের মেরুকরণের মোহে। দলিত নেত্রী মায়াবতীও রামমন্দির নিয়ে রাজনৈতিক দোলাচলে ভুগছেন।’রাম রাখি না ভোট রাখি’ দশা তারও। মন্দির প্রতিষ্ঠাকেও স্বাগত জানাতে ভুলছেন না,আবার ওইদিন সশরীরে অযোধ্যায় যাচ্ছেনও না।নিরাপদ অবস্থানে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন,বিএসপি ধর্মনিরপেক্ষ দল, মন্দির এবং মসজিদ কোনও কিছু নিয়েই তাদের সমস্যা নেই। অন্যদিকে বিরোধী জোটের ঘোষিত কুশীলব যেমন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলেই অত্যন্ত সতর্ক।
কলকাতায় মমতা যেমন বাইশ জানুয়ারী পাল্টা সম্প্রীতি মিছিলের ডাক দিয়েছেন।ওই দিন সকালে তিনি কালীঘাটের মন্দিরে পুজো দিয়ে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত পার্ক সার্কাস ময়দান পর্যন্ত মিছিলে হাঁটবেন এবং শেষে সেখানে সভা করবেন।বঙ্গে ত্রিশ শতাংশের উপর সংখ্যালঘু ভোট, সে ভোটে তৃণমূলের অংশীদারিত্ব সর্বজনবিদিত। ফলে তিনি যদি বিজেপির বিরুদ্ধে রামমন্দিরের অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিকরণ আখ্যার অভিযোগ তোলেন, একই অভিযোগ তার বিরুদ্ধেও উঠতে পারে।
সত্য এই যে, রাম নিয়ে হিন্দুত্বের পথে হাঁটছেন বিএসপির মায়াবতী,এসপির অখিলেশ, আপ-এর কেজরীওয়ালও। রামমন্দির নিয়ে হিন্দুত্বের ঝড় উঠবে, উঠবেই।কতটা করবে সেটি বলা মুশকিল,কিন্তু সে ঝড় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবেই। সেই ঝড় তাদের উড়িয়ে দিতে পারে, এমন আশঙ্কা বিরোধী শিবিরের রয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।সবিশেষ আতান্তরে পড়েছেন একদা ‘মৌলা মুলায়ম’-পুত্র অখিলেশ সিংহ যাদব।একাধারে তিনি উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা,আবার সেখানকার সংখ্যালঘু সমাজের বড় অংশের কাছে কার্যত মসিহাঁ।তিনি রামমন্দিরের অছি পরিষদের জেনারেল সেক্রেটারিকে কয়েকদিন আগে একটি চিঠি লিখে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য।সেই চিঠিটি তিনি আবার এক্স(সাবেক টুইটার)হ্যান্ডেলে পোস্টও করেছেন।ওই বার্তায় তিনি বলেছেন,বাইশ জানুয়ারীর পরে একদিন তিনি অবশ্যই সপরিবারে মন্দির দর্শনে যাবেন।আবার একই সঙ্গে অনুষ্ঠানের সাফল্য প্রার্থনাও করেছেন।তা হলে হিসাব দাঁড়ালো এই যে,বাইশ জানুয়ারী অযোধ্যায় যাবেন না বলে একদিকে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ককে বার্তা দিয়েছেন, অন্যদিকে ওই চিঠি লিখেছেন যাতে সংখ্যাগুরু ভোটব্যাঙ্ক রুষ্ট না হয়।কেজরিওয়াল ঘোষিত বজরংবলীর ভক্ত। তিনিও বাইশ তারিখ এড়িয়ে চলছেন।তার বক্তব্য, রামমন্দির নিয়ে আমাদের কোনও প্রশ্ন নেই।রামমন্দির নির্মাণ আমাদের কাছে আনন্দ এবং গর্বের বিষয়।এই সব দেখেশুনে জনগণের মনে হয়তো এই প্রশ্নটাই জাগছে যে,নির্বাচনের আগেই যেসব জোটসঙ্গী একতা বজায় রাখতে পারছেন না, ক্ষমতায় এলে তারা সরকারটাকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন তো?কেন্দ্রীয় সরকারের ভিত নড়বড়ে হলে চলবে না,একটা দৃঢ় ভিতের উপর সেই সরকারকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।দেশে আগেও কয়েকটা জোট সরকার এসেছে,কিন্তু স্থায়ী হয়নি।এ বিষয়ে ভারতের জনগণের অভিজ্ঞতা খুব সুখকরও নয়।