রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ করেও পরাজয় রোখা যাবে নাঃ মানিক

 রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ করেও পরাজয় রোখা যাবে নাঃ মানিক
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রাষ্ট্রীয় শক্তি অনৈতিক প্রয়োগ করছে শাসক বিজেপি। ক্ষমতায় টিকে থাকতে পুলিশ প্রশাসনকে বিরোধী দল, সাধারণ মানুষ, উপজাতি জনসমাজ, ছাত্র ছাত্রী, বেকারদের উপর লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কারণ শাসকদল বিজেপি বর্তমানে পুরোপুরি জনবিচ্ছিন্ন । ২৩-এর বিধানসভা নির্বাচনে এদের পরাজয়ও নিশ্চিত। তাই মানুষের ভোটাধিকার হরণের লক্ষ্যে বাইকবাহিনীর মতো রাষ্ট্রীয় শক্তিরও অনৈতিক প্রয়োগে ব্যস্ত বিজেপি। তবে এসব করেও বিজেপি তাদের পরাজয় রুখতে পারবে না । এ মন্তব্য করেছেন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। বৃহস্পতিবার
মেলারমাঠ সিপিএম রাজ্য কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিজেপি দল যদি ভাবে এরা ২৩-এর বিধানসভা নির্বাচনে পঞ্চায়েত, লোকসভা, পুর ও নগর ভোট এবং উপভোটের মতো ভোট লুট করবে, তবে বিজেপি দল মূর্খের স্বর্গে বসবাস করছে। কারণ আসন্ন নির্বাচনে শাসকদল বিজেপিকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়া হবে না ।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা প্রশ্নের মুখে। কারণ পুলিশ প্রশাসন তার দায়িত্ব পালন করছে না। উল্টো শাসকদল বিজেপি নেতৃত্বের নির্দেশে চলছে পুলিশ প্রশাসন। যদিও বামফ্রন্ট সরকারের সময় রাজ্যের মানুষকে সাথে নিয়ে ত্রিপুরা পুলিশ সন্ত্রাসবাদ দমন করেছিল। ফলে দেশব্যাপী সুনাম অর্জন সহ রাষ্ট্রপতি কালার্স সম্মানে ভূষিত হয় ত্রিপুরা পুলিশ। কিন্তু বিজেপির ৫৫ মাসের শাসনে ত্রিপুরা পুলিশের অস্তিত্ব বিপন্ন। রাজ্যের মানুষের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হতে চলছে পুলিশ প্রশাসন। কারণ পুলিশরাজ কায়েম করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছে বিজেপি। তিনি বলেছেন, সম্প্রতি ১০৩২৩ শিক্ষক শিক্ষিকাদের বিধানসভা অভিযান, বেকার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বেকার, জেআরবিটি পরীক্ষার্থী এবং অন্য বেকারদের উপর পুলিশ প্রশাসন রাষ্ট্রীয় শক্তির অপব্যবহার প্রমাণিত।।।।হয়েছে। পুলিশের এই বর্বরতা হল স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্টসুলভ শাসনের নিদর্শন। শুধু তাই নয়, রাজ্যে গত ১৯ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মহিলা, শিশু কন্যার উপর বর্বরোচিত অত্যাচার চলেছে। কুমারঘাট, কল্যাণপুর, সাব্রুম, খোয়াই, আগরতলার যোগেন্দ্রনগর সহ সবগুলি ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হল শাসকদল বিজেপির সন্তান ও অন্যান্য নেতৃত্ব। কিন্তু অবাক করার বিষয় হল, একটি ঘটনায়ও পুলিশ দোষীদের গ্রেপ্তার করছে না। উল্টো শাসকদল আশ্রিত দোষীদের বাঁচানোর জন্য দিনরাত কাজ করছে। ২০১৮ সালের ৩ মার্চ থেকেই রাজ্যব্যাপী এসব চলছে। তপন চক্রবর্তী, ভানুলাল সাহা, রতন ভৌমিককে পাশে বসিয়ে বিরোধী দলনেতা পুলিশ-প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, মেরুদণ্ড সোজা করুন। আইন মোতাবেক কাজ করুন। না হলে পুলিশের বিরুদ্ধে মানুষের ঘৃণা ও জনবিক্ষোভ বাড়বে। তাই অবিলম্বে পুলিশ প্রশাসনকে নিজেদের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার করা দরকার। তিনি বলেছেন, বিজেপি দল, ২০১৮ সালে কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ককে পুঁজি করে এবং আইপিএফটিকে দিয়ে উপজাতি ভোট ব্যাঙ্ক আদায় করে ক্ষমতা দখল করেছে। কিন্তু এখন মাত্র ৫৫ মাসে আইপিএফটির অস্তিত্ব বিপন্ন। উপজাতি ভোট ব্যাঙ্ক বিজেপির শূন্য। অন্যদিকে, কংগ্রেস থেকে ভাড়া করে আনা সমতলের ভোট ব্যাঙ্ক ও বিজেপির বর্তমানে শূন্য। ফলে তাদের পায়ের নিচের মাটি নেই। রাতের ঘুম পর্যন্ত উবে গেছে। মূলত এই কারণে মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের অধিকার দমনের জন্য এরা এখন রাষ্ট্রীয় শক্তির অনৈতিক প্রয়োগে ব্যস্ত। তবে শাসকদল বিজেপিকে বিদায় জানাতে রাজ্যের মানুষ ঘরে ঘরে প্রস্তুত রয়েছেন। এখন জনবিস্ফোরণ হবে। পুলিশ প্রশাসন, বাইকবাহিনী, সমাজদ্রোহীদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন রোখা যাবে না। গ্রাম, পাহাড় এবং শহরে একটাই স্লোগান— বিজেপি হটাও ত্রিপুরা বাঁচাও।
বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, বিশালগড়ে বিরোধী দল কংগ্রেসের কর্মসূচিতে পুলিশের উপস্থিতিতে বিজেপির দুর্বৃত্তরা হামলা করেছে। তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। পাশাপাশি তার অভিযোগ, বৃহস্পতিবার বিলোনীয়াতে ডিওয়াইএফআইর ৪৩তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিভাগীয় কমিটির সম্পাদক তাপস দত্তের বাড়িতে চলা রক্তদান শিবিরেও হামলা করেছে বিজেপি দুর্বৃত্তরা। কিন্তু পুলিশ নীরবদর্শক। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য রাজ্যের সবগুলি ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক দলকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি এদিন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সকলকে রাজপথে নামার জন্য তিনি আহ্বান জানান ।
এদিকে, ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজে ৪৫ লক্ষ টাকা ফি বৃদ্ধির নিন্দা জানিয়ে মানিক সরকার বলেন, এতে গরিব মেধাবী ছেলে-মেয়েরা এমবিবিএস পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.