রাহুলের সৌজন্য রাজনীতি!!

 রাহুলের সৌজন্য রাজনীতি!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

যত দিন যাচ্ছে ততোই যেন রাজনীতিতে পরিণত এবং পরিপক্ক হতে চলেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। বিজেপি জমানায় এই রাহুল গান্ধীকে ‘পাপ্পু’ বানানোর জন্য একদিকে যেমন লাগাতার প্রচার চলছিল তেমনি রাজনৈতিকভাবেও রাহুলকে কোণঠাসা করার বেজায় পরিকল্পনা নিয়েছিলো বিজেপি।শুধু তাই নয়, রাহুলের রাজনৈতিক জীবনকেও শেষ করে দিতে তার সাংসদ পদ পর্যন্ত কেড়ে নেয় বিজেপি।কিন্তু তাতেও দমেননি রাহুল গান্ধী। রাজনৈতিকভাবে প্রবলভাবে ফিরে আসেন রাহুল গান্ধী। বিজেপি জমানায় প্রথম থেকেই মানুষের নানা মৌলিক ইস্যু নিয়ে সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।কিন্তু কে শোনে কার কথা। মিডিয়ার বৃহদাংশ তো রাহুলকে ‘পাপ্পু’ বানাতে ব্যস্ত। তাই একা রাহুল গান্ধী চেঁচিয়ে গেলেও তা শোনার লোক ছিল না।ফলে রাহুল প্রচারের অন্তরালেই নি:শব্দে তার কাজ করে যাচ্ছিলেন।২০২১ সালেই বোধহয় রাহুল তার
রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।রাহুল গান্ধী সিদ্ধান্ত নেন যে বিজেপি দেশব্যাপী যে হিংসা ও ঘৃণার রাজনীতি চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে তিনি মোহবুত কা দোকান চালু করবেন।এ জন্য তিনি কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত ভারত জোড়ো পদযাত্রাবকরার সিদ্ধান্ত নেন। এই ভারত জোড়ো যাত্রা রাহুল গান্ধীকে রাজনৈতিকভাবে মাইলেজ দেয় অনেকটা।তেমনি কংগ্রেসও রাজনৈতিকভাবে কিছুটা জমি খুঁজে পায়।এর বড় উদাহরণ হলো কর্ণাটক, তেলেঙ্গানায় কংগ্রেসের বিজয়।রাহুল গান্ধীকে নফরতের বাজারে মোহব্বতের দোকান খোলা নিয়েও কম কটাক্ষের মুখোমুখি হতে হয়নি।একদিকে বিজেপি, অন্যদিকে মিডিয়ার বৃহদাংশ।সেই
সময় রাহুল গান্ধীকে নয়া অবতারে খুঁজে পায় দেশের মানুষ।একদিকে সাদা টি শার্ট এবং কালো প্যান্ট পরা রাহুল গান্ধী যেমন আবির্ভূত হন তেমনি গালভর্তি সাদা-কালো দাড়িভর্তি মুখ নিয়ে রাহুল
গান্ধী এক অন্য রূপে ধরা দেন।এরপর ধীরে ধীরে লোকসভা নির্বাচনও এগোতে থাকে দেশে।বিরোধী দলগুলি বুঝতে পারে যে এবারের নির্বাচনে যদি কিছু একটা না করা যায় তাহলে অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে যাবে।তাই শেষ পর্যন্ত বিরোধী দলগুলি বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে নির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।কংগ্রেস বড় দল হিসাবে
অনেক নমনীয় ভূমিকা নেয়। শেষ পর্যন্ত ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে দেশের মানুষ এক ঐতিহাসিক রায় দেন।দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় পর দেশে শক্তিশালী বিরোধী পক্ষ উপহার দেয় দেশ।আর এতেই কংগ্রেস সহ বিরোধীরা বেজায় অক্সিজেন পেয়ে যায়।দশ বছর পর সংসদে বিরোধী দলনেতার ‘মর্যাদা’ পায় কংগ্রেস।লোকসভায় বিরোধী দলনেতা হন রাহুল গান্ধী।এবার যেন ফের অন্যরূপ রাহুলের মধ্যে।
২০১৯ সালের কথা।গান্ধী পরিবারের গড় উত্তরপ্রদেশের আমেথিতে হেরে যান রাহুল গান্ধী।স্মৃতি ইরানির কাছে। সস্মৃতি ইরানি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন। যেখানে স্মৃতি সেখানেই রাহুলকে ঘিরে কটাক্ষ। সংসদে কিংবা সংসদের বাইরে।স্মৃতি ইরানি যেন রাহুলকে আক্রমণের মুখ হয়ে উঠলেন বিজেপির অন্দরে। এরই মধ্যে ২০২৩ সালে ‘মোদি’ পদবি মামলায় রাহুলের দুই বছরের জেল হওয়ায় তার সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যায়।ফলে তাকে সাংসদ পদ হারাতে হয়। সরকারী বাংলোও ছাড়তে হয়।সে সময়ও স্মৃতি ইরানির কটাক্ষের মুখে পড়েন রাহুল গান্ধী। রাহুল গান্ধী বাংলোর দখল নিতে চান বলেও গান্ধী পরিবারকে নিয়ে কটাক্ষ করেন স্মৃতি।কিন্তু কথায় বলে ইতিহাস ফিরে আসে।সেই স্মৃতি ইরানি এবার আমেথিতে নিজেই হেরে যান গান্ধী পরিবারের অনুগত কিশোরীলাল শর্মার কাছে। সেই থেকে এবার কংগ্রেসের কাছে ট্রোলের শিকার স্মৃতি। গত ১১ জুলাই স্মৃতি ইরানিকে তার বাংলোও ছাড়তে হয়। এবার আরও ট্রোলের শিকার স্মৃতি।
যদিও নফরতের বাজারে মোহবুতের দোকানের কারবারি রাহুল গান্ধী তার দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের জানিয়ে রাখলেন স্মৃতিকে যেন কেউ কোনও ধরনের কটাক্ষ না করেন।কেননা কাউকে অপমান করে কটাক্ষ করে কেউ বড় হতে পারে না বরং এতে দুর্বলতাই প্রকাশ পায় মন্তব্য রাহুলের।শুধু তাই নয়, রাহুল গান্ধী বলেছেন, রাজনীতিতে হার-জিত তো লেগেই থাকে।তাই বলে কাউকে অপমান করা বা নীচু করানো ঠিক নয়।
স্মৃতির প্রতি রাহুল গান্ধীর এই মনোভাব রাজনৈতিক মহলে বেজায় প্রশংসা কুড়িয়েছে। মিডিয়ায় রাহুল গান্ধীর বেজায় প্রশংসা হচ্ছে। রাহুলের সৌজন্যতার রাজনীতি অন্যদের কাছে অনুকরণীয় বলেও মন্তব্য ভেসে আসছে।রাহুল যেন এখন আর পাপ্পু নন। প্রধানমন্ত্রী যতই তাকে ‘বালকবুদ্ধি’ বলে কটাক্ষ করুন না কেন রাহুল এখন রাজনীতিতে অনেক পরিপক্ক। লোকসভার বিরোধী দলনেতা বলে কথা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.