রাহুল ও প্রথম ভাষণ
লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী তার প্রথম ভাষণ রাখলেন সোমবার।রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের উপর এদিন বলতে উঠে রাহুল গান্ধী নজিরবিহীন ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করলেন।গত দশ বছর লোকসভায় কোন বিরোধী দলনেতা ছিল না। বিরোধীদের সংখ্যার জোর ছিল কম।ফলে স্পিকার এবং ট্রেজারি বেঞ্চ মিলিয়ে বিরোধীদের চুপ করিয়ে বসিয়ে দেওয়া হতো।দশ বছর পর এই প্রথম লোকসভা দেখল এক বিরোধী দলনেতা যিনি দেড়ঘন্টাব্যাপী ভাষণ দিয়েছেন।তাকে দমাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সাতজন মন্ত্রী বার কয়েক আসন ছেড়ে উঠেছেন।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তো একবার স্পিকারের ভূমিকায় কার্যত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।তিনি স্পিকারকে বলেছেন,রাহুল গান্ধীকে তিনি কেন আটকাচ্ছেন না।রাহুল গান্ধী বিনা বাধায় বলেই যাচ্ছেন।এ নিয়ে অমিত শাহ কার্যত স্পিকারের ভূমিকায় অসন্তোষ এবং হতাশ হয়েছেন।
গত দশ বছরে সংসদে এচিত্র দেখা যায়নি।এমনকী প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এদিন সংসদে বসে রাহুল গান্ধীর ভাষণ শুনেছেন।বলা ভালো হজম করেছেন। এমনকী ২ বার আসন ছেড়ে উঠে আপত্তিও জানিয়েছেন।
এদিন সংসদে বিরোধী দলনেতা হিসাবে প্রথম ভাষণ রাখেন রাহুল গান্ধী।যা নিয়ে সংসদে এদিন ব্যাপক হাঙ্গামা বাধে এবং রাহুলের ভাষণের রেশ চলে দিনভর।বিরোধীরা যে সংসদে এবার ট্রেজারি বেঞ্চের সাথে পাল্লা দিয়ে গলাবাজি করতে পারে তা প্রতি মুহূর্তেই বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে।সুতরাং একদিকে স্পিকার এবং ট্রেজারি বেঞ্চকে এবার বিরোধীদের নানা বাক্যবাণ সহ্য করতে হবে।অনেক কিছু নীরবে হজম করতে হবে যার শুরুয়াত করলেন রাহুল গান্ধী।এবারের অষ্টাদশ লোকসভার শুরুতেই সংবিধান নিয়ে এখন খুব টানাহ্যাঁচড়া হচ্ছে সংসদে। বিরোধীরা সংবিধান নিয়ে শপথ নিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী উঠে দাঁড়ালে বিরোধীরা চিৎকার জুড়েন ‘জয় সংবিধান’ বলে।স্পিকারকে প্রতি মুহূর্তেই জয় সংবিধান হজম করতে হচ্ছে।
এদিন বিরোধী দলনেতা হিসাবে রাহুল গান্ধী বলতে উঠেন জয় সংবিধান স্লোগান দিয়ে এবং হাতে সংবিধানের কপি তখন।ভাষণের শুরুতেই এদিন অযোধ্যায় রামজন্মভূমিতে কেন বিজেপির হার হয়েছে এর ব্যাখ্যা দেন সভায়।মোদিকেও কটাক্ষ করেন যে মোদি ২ বার রায় নিয়েছিলেন এবার অযোধ্যায় ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে।রাহুলের কটাক্ষ- অযোধ্যায় মোদি দাঁড়ালেও হারতেন।পাশে বারাণসীতে গিয়ে কোনক্রমে রক্ষা পেয়েছেন।সংসদে গত দশ বছরে নরেন্দ্র মোদির নাম নিয়ে তাকে আক্রমণ করেছেন এবং মোদি বসে শুনছেন- তা এককথায় নজিরবিহীন এক চিত্র।
শুধু তাই নয়, মোদির নন্ বায়োলজিক্যাল চরিত্র নিয়ে কটাক্ষের পর কটাক্ষের বন্যা বইয়ে দেন এদিন রাহুল। এদিনের রাহুলের ভাষণ ছিল কার্যত রাজনৈতিক ভাষণ। মনে হচ্ছিল কোন রাজনৈতিক সভামঞ্চে মোদি-শাহকে, বিজেপিকে একের পর এক আক্রমণ শোনাচ্ছেন এক বিরোধী দলনেতা।এদিন অবশ্য দেবাদিব শিবের ছবি নিয়ে এসেছিলেন রাহুল।তার ‘হিন্দু’ মন্তব্য নিয়ে এদিন বিতর্ক উছে।তিনি বলেছেন, বিজেপি, আরএসএস হিন্দুদের ঠেকা নিয়ে রাখেননি।হিন্দুর নামে যারা হিংসা ছড়ায়।নরেন্দ্র মোদি শুধু হিন্দু নয়।আরএসএস শুধু হিন্দু নয়।রাহুল তার ভাষণে এটাই বারবারই বোঝাতে চেয়েছেন।
এদিন গোটা ট্রেজারি বেঞ্চ রাহুল গান্ধীকে সামলাতে ব্যস্ত থেকেছে।রাহুলের ভাষণের মেজাজ এত আগ্রাসী ছিল যে সরকারের তরফে সাত মন্ত্রী তাকে সামলাতে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে।রাহুল গান্ধীর ভাষণের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২ বার আসন ছেড়ে উঠেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উঠে দাঁড়িয়েছেন ৬বার,প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং উঠে দাঁড়ান ৩ বার,, কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান উঠে দাড়ান ১ বার,সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু উঠে দাঁড়িয়েছেন ২ বার এবং মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব উঠে দাঁড়ান ৩ বার।রাহুলকে আটকাতে স্পিকার রুল বুক পড়েছেন,মন্ত্রীরা রুল বুক পড়েছেন।রাহুল গান্ধীকে দমাতে এদিন স্পিকারকে হতাশ লেগেছে।অর্থাৎ স্পিকার এদিন যেন লাগামহীন হয়ে পড়েন।বহু দিন পর শাসকর নয়,যেন সংসদের লাগাম ছিল বিরোধীদের হাতে।বলা ভালো, রাহুল গান্ধী এদিন তার প্রথম ভাষণে শাসক তথা ট্রেজারি প্রবঞ্চকে ল্যাজে খেলিয়েছেন। শুধু তাই নয়,বিজেপির ঘরে পর্যন্ত আগুন লাগানোর কাজটি করে গেছেন রাহুল গান্ধী তার ভাষণে।রাজনাথ সিং,গড়কড়ির প্রশংসা করেন রাহুল।অন্যরা মোদিকে ভয় পান বলেও শাসকের বিরুদ্ধে বান নিক্ষেপ করেন রাহুল। লোকসভায় প্রথম ভাষণে যেভাবে বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী শাসকের চিন্তার কারণ হয়ে বাড়িয়েছেন সোমবার,তা আগামীতে রাহুলকে সামলাকে শাসককে অন্য চিন্তাভাবনা এবং অংক করতে হবে- প্রথম অ্যাপিয়ারেন্সে রাহুল তা জানিয়ে রাখলেন।