রিনিঝিনি তালে তালে, দোল দোল দোদুল দোলে

 রিনিঝিনি তালে তালে, দোল দোল দোদুল দোলে
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত বিবেক দুপুরে খাওয়া – দাওয়ার পর বিছানায় একটু গড়িয়ে নিতে নিতে ভাবে পঁয়ত্রিশ বছর প্রায় হয়ে গেল তার সংসার – ধর্ম শিখার সঙ্গে , কিন্তু আজও সে ঠিকঠাক ভাবে বুঝে উঠতে পারল না তার স্ত্রীকে । তার কী যে মায়া এই সংসারের প্রতি ! একঘণ্টার ওপর হয়ে গেল সবার দুপুরের খাওয়া হয়ে গেছে , কিন্তু শিখার পাত্তা নেই । এখনও সে রান্নাঘরে ব্যস্ত কাজের মাসির সঙ্গে । বাসন ধুচ্ছে রাসমণি মাসি । যতক্ষণ না সে ধোয়া বাসন পরিপাটি করছে , দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করবে শিখা । এখন তাদের ছেলে কিশোরের বউ রনি জুড়েছে এই সংসারে প্রায় বছরখানেক হল , দিতে পারে তাকে এই তদারকির দায়িত্ব । কিন্তু দেবে না । পঁয়ত্রিশ বছর ধরে সংসারের ঘানি টানল দু’জনে । এখন একটু আরাম করার , গল্প – গুজব করার সময় । তা নয় , নিজেই সব করবে । বিবেকের মনে পড়ে যায় পঁয়ত্রিশ বছর আগে পুত্রবধূ হয়ে যখন শিখা প্রবেশ করল এই সংসারে । তাদের পুরী থেকে ঘুরে আসার পরপরই পুরো সংসার যেন হাতের মুঠোয় তুলে নিল ।

তখন হানিমুন বলতে ছিল পুরী অথবা দীঘা কিংবা মেরেকেটে দার্জিলিং । আর এখন তো বিদেশভ্রমণ না করলে নাকি হানিমুনটা কেমন যেন বিস্বাদ , ফিকে ফিকে লাগে । তারপর আবার স্টেটাস জানাতে কিসব ফেসবুক , ইনস্টাগ্রাম হয়েছে না — • ফটো ঝোলাতে না পারলে ইজ্জত থাকে না বন্ধুদের কাছে । কিশোর আর রনিও ঘুরে এসেছে আমস্টারডাম , আরও কত কি সব জায়গায়– নামটাম ঠিক খেয়াল রাখতে পারি না ! পুরী থেকে তথাকথিত হানিমুন সেরে ঘরে ঢুকতে ঢুকতেই বাবা বলেন , ‘ বউমা জানো আমার সরকারি পেনশনের কয়েক বছরের আটকানো গিঁট গতকাল খুলে গেছে তুমি আমাদের জন্য সাক্ষাৎ মা লক্ষ্মী । ‘ বাবাকে সময় করে ওষুধ এগিয়ে দেওয়া , ঘন ঘন চা বানিয়ে বারান্দায় দিয়ে আসা , বাবার পছন্দের পোস্তবাটা – ধোকার ডালনা বানানো , আরও কত কী সব যোগান দিয়ে যেত শিখা মুখের হাসিটি বজায় রেখে ।

শ্বশুরমশাইয়ের সঙ্গে বাজার যাওয়া , গ্যাসের দোকানে গিয়ে সিলিন্ডার বুক করা , রেশন তোলা — সব কাজ একে একে শিখে নেয় শিখা । মাসখানেকের মধ্যেই শ্বশুরমশাই শিখা ছাড়া আর এক পাও চলতে পারেন না । শ্বশুরমশাই তখন শিখার আঁচলের গিঁটে বাঁধা । শুধু দরকার তখন শিখার সংসারের চাবির গোছাটা হাতানো শাশুড়িমায়ের আঁচল থেকে । সহজে কী শাশুড়িমা চাবির গোছা হাতছাড়া করেন ! প্রথম প্রথম মা কাজে হাত লাগাতে গেলেই হা হা করে ছুটে আসত শিখা । বলত , ‘ মা , আপনার বয়স হয়েছে । এখন আপনার আরাম করার সময় । সারা জীবন তো এই সংসারের ঘানি টানলেন , এবার একটু বিশ্রাম করুন । আশেপাশে সইদের বাড়িতে গিয়ে গল্প – গুজব করুন । আমি সব সামলে নেব । ‘ কিন্তু শাশুড়িমা কি সহজে সংসারের কর্তৃত্ব ছাড়েন ! শ্বশুরমশাই খাওয়ার পাতে বসেই বলেন , ‘ রান্নাটা বোধহয় আজ তুমি করোনি বউমা ? ‘ বউমা পাশেই দাঁড়িয়ে , সব দেখেশুনে যত্ন সহকারে দিচ্ছে বাবাকে খেতে । বউমার নরম সুরে বিগলিত গলায় চোখ মেঝের দিকে নামিয়ে উত্তর , ‘ না বাবা , আজ মা নিজেই করেছেন সব । —— সুপ্রিয় দেবরায়

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.