রিমার হাত ধরে চাঁদের মাটিতে হাঁটছে‘আদরের ছেলে’ প্ৰজ্ঞান।

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- টানা ৭২ ঘন্টা চোখের পাতা এক করতে পারেন নি। নিজের ‘ছোট্ট ছেলেটা’ যে হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটতে শিখছে। তাই ভয় হয়, কখন যেন হোঁচট খেয়ে উল্টে না পড়ে। আর যদি দৈবাৎ এমন দুর্ঘটনা ঘটে পড়েও প্রজ্ঞান তাহলে তাকে কীভাবে উঠে দাঁড়াতে হবে তার কৌশলও হাতের মুঠোয়। রেখেছেন রিমা। রোভার বিক্রম থেকে যখন ছয় চাকা বিশিষ্ট ‘প্রজ্ঞান’ গড়গড়িয়ে নেমে এল তখন তিন লাখ কিলোমিটারের বেশি। দূরে ইসরোর বিজ্ঞানী রিমা নিজেকে আর স্থির রাখতে পারেন নি। সজল নয়নে হাততালি দিয়ে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছেন ‘ছোট্ট ছেলে’টিকে।মিশন চন্দ্রযান ৩-এ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের কন্যা রিমার। এই মুহূর্তে চন্দ্রযানের যে রোভারটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ঘোরাঘুরি শুরু করেছে, সেই ‘প্রজ্ঞান’ এর নিয়ন্ত্রণে ইসরোর যে দলটি কাজ করছে তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন রিমা। রোভার কাজ শুরু করার পাঁচ দিন পরে বেঙ্গালুরু থেকেই রিমা জানালেন, ‘প্রজ্ঞান আমার সন্তানের মতো। নিজের সন্তানকে চাঁদের মাটিতে হাঁটতে দেখছি, এই অনুভূতি বলে বোঝানো যায় না।”আর রিমার এই কীর্তিতে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত তার পরিবার। বিশেষ করে তার বাবা।তিনি বলেন, ‘মেয়ে বরাবরই দূরদর্শী, খুব বড়ো লক্ষ্য নিয়ে কেরিয়ারের পথে এগিয়েছে। চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্য তারই প্রমাণ। আসানসোলের এজি চার্চ স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন রিমা। রাতারাতি তিনি গোটা আসানসোল শহরের গর্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।এখন রিমা ঘোষের ভাই কুণ্ডল আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলি কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান পদে রয়েছেন।আসানসোলের হিলভিউ এলাকায় বাড়ি রিমা ঘোষের। বাবা চন্দন কুমার ঘোষ ছিলেন কন্যাপুর পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষক। মা শারীরিকভাবে অসুস্থ।রিমার ভাই কুণ্ডল ঘোষ। দিদি ও ভাই দু’জনই উচ্চশিক্ষিত। কিন্তু মায়ের শারীরিক কারণে কুলবাবুকে আসানসোলেই থাকতে হচ্ছে। দিদির কীর্তি নিয়ে তিনি বলছেন, “আমি রিমার ভাই হিসেবে প্রচণ্ড গর্ব অনুভব করছি। তবে শুধু এটা আমার বা আসানসোলবাসীর গর্বের বিষয় নয়। এটা সারা দেশের গর্ব। আমার দিদি খুব কষ্ট করে কাজ করেছে। বিক্রম ল্যান্ডার আর প্রজ্ঞান রোভারের ওপর বিশেষভাবে কাজ করেছে।’১৪ দিন ধরে প্রজ্ঞান রোভার যে ডাটা সংগ্রহ করবে, খনিজ সংগ্রহ করবে, আরো নানা তথ্য সংগ্রহ করবে, তার নিয়ন্ত্রণ করছে রিমাদের দল। রিমা ঘোষের পঠনপাঠন ও বেড়ে ওঠা নিয়ে কুন্তল ঘোষ জানালেন, “আমার দিদির কলকাতায় জন্ম হলেও আসানসোলেই তার বেড়ে ওঠা। জীবনের প্রথম বড়ো পরীক্ষায় আসানসোলের মধ্যে ‘দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন। পরবর্তীকালে লা মার্টিনিয়ার কলেজে পড়াশোনা হায়ার সেকেন্ডারি পর্যন্ত। কিন্তু জয়েন্টে ভালো র‍্যাঙ্ক হয়নি। তখন আসানসোলে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজও ছিল না। তাই মহারাষ্ট্রে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে চলে যায় দিদি। সেখান থেকে বি টেক করার পর জলপাইগুড়িতে বেশ কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন। পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এম-টেক করেন। এরপর টেকনো ইন্ডিয়াতেও বেশ কিছুদিন চাকরি করছেন। তারপর পরীক্ষায় পাশ করে ইসরোতে যোগ।”২০০৮ সাল থেকে ইসরোতেই বিজ্ঞানী হিসেবে রয়েছেন রিমা। চন্দ্রযান ৩-এর সফল অবতরণের পরেও প্রজ্ঞান রোভারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এখন ব্যস্ত রয়েছেন বিজ্ঞানী রিমা। তার ভাইকে যদিও জানিয়েছেন, পুজোর সময় আসানসোলে আসবেন রিমা। আর গোটা আসানসোল অপেক্ষায়, সোনার মেয়েকে বরণ করে নেওয়ার জন্য।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে ইন্ডিয়ান আইডল জয়ী পবনদীপ,অবস্থা আশঙ্কাজনক!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে ইন্ডিয়ান আইডল জয়ী সিজন ১২ এর পবনদীপ রাজন ৷ উত্তর…

6 hours ago

শবরীমালা মন্দির পরিদর্শনে দ্রৌপদী মুর্মু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-আগামী ১৮ মে দু'দিনের জন্য কেরল সফরে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ৷ সেই…

8 hours ago

মহাকালেশ্বর মন্দিরে বীভৎস আগুন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-উজ্জ্বয়ন মহাকালেশ্বর মন্দিরে বিভীষিকাময় আগুন। মন্দিরের উপর থেকে গলগল করে নির্গত হচ্ছে কালো…

9 hours ago

হত্যা মামলায় ‘গ্রেপ্তার’ বাংলাদেশে জেলবন্দি চিন্ময় প্রভু!

অনলাইন প্রতিনিধি :-জেলবন্দি সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী ওরফে চিন্ময় প্রভুকে নতুন করে আবার হত্যা…

9 hours ago

নিখোঁজ হয়ে ছিলেন কুড়ি বছরে বাড়ি ফিরে এলেন ৬৩ বছর পর!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্য থেকে প্রায় ৬৩ বছর আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন অড্রে ব্যাকেবার্গ নামে…

9 hours ago

সোলার জাগরণ চাইলেন রতন, ৭০জন গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে বিদ্যুৎ বিক্রির অর্থ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-ত্রিপুরার গৃহস্থালি বিদ্যুৎ গ্রাহকদের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।একদিকে যেমন বিদ্যুৎ বিল হচ্ছে…

10 hours ago