রুটিন হইলেও রুটিন নহে!!
রুটিন কাজ।আগরতলার সহকারী হাইকমিশনারকে ঢাকায় ডাকিয়া লওয়া হইয়াছে রুটিন কাজে। একইভাবে কলকাতার উপ-হাইকমিশনারকেও রুটিন কাজে ডাকিয়া পাঠানো হইয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে। সূত্র অবশ্যই নির্ভরযোগ্য। আবার সহকারী হাইকমিশনার কিংবা উপ- হাইকমিশনারের বক্তব্যও অনুরূপ। আরও জানা গিয়াছে আগরতলা কিংবা কলকাতার দূতাবাস বন্ধের কোনও ভাবনাচিন্তা এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের নাই। এই খবরটি প্রতিবেশী দুই দেশের জন্যই সুসংবাদ।কেহই চাহিবে না সম্পর্ক খারাপ থাকুক।কারণ সম্পর্ক খারাপ হইলে উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত হইতে হইবে।
অন্যদিকে,আগামী সপ্তাহে দুই দেশের বিদেশ সচিব পর্যায়ে বৈঠক বসিতেছে ঢাকায়।ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি ঢাকায় যাইবেন।বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রক বা পররাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষে মোহম্মদ জসিমউদ্দিন ওই বৈঠকে কথা বলিবেন।বলা হইতেছে ইহাও একটি রুটিন বৈঠক।দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কে অতীতে কিংবা অদূর অতীতে যে সকল প্রকল্প গ্রহণের কথা ভাবা হইয়াছিল,সেই সকল প্রকল্পের বাস্তবায়ন কিংবা যে সকল প্রকল্পের কাজ চলিতেছে সেই সকলের অগ্রগতি লইয়া ওই বৈঠকে আলোচনা করিবে দুই পক্ষ।উল্লেখ্য যে, শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং ইউনুসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার কার্যভার গ্রহণের পর এই প্রথম দুই দেশের মধ্যে কোনও বৈঠক হইতেছে সরকারী স্তরে।এই দিক হইতে প্রস্তাবিত বৈঠক যতটা না গুরুত্বপূর্ণ তাহার চাইতে অধিক থাকিবে কৌতূহল। এই কথা অনস্বীকার্য যে, শেখ হাসিনার উৎখাতের পর ঢাকা ও নয়াদিল্লীর মধ্যে নানান ভাবে দূরত্ব বাড়িয়াছে। ঢাকার বর্তমান সরকারের কাছে ‘ফ্যাসিস্ট’ হিসাবে পরিগণিত এবং ‘গণহত্যার অপরাধী’ শেখ হাসিনাকে ভারতের আশ্রয়দান মোটেও গ্রহণযোগ্য বিষয় নহে। তাহার উপর দিল্লীতে বা দিল্লীর আশ্রয়ে বসিয়া শেখ হাসিনা বাংলাদেশ লইয়া যে সকল বিবৃতি দিয়া চলিয়াছেন তাহাও ঢাকার জন্য চরম গাত্রদাহের কারণ হইয়া উঠিয়াছে। ফলে সম্পর্ক পিচ্ছিল হইয়াছে।সর্বশেষ চিন্ময় কৃষ্ণ গ্রেপ্তার এবং এই পারে বাংলাদেশ কূটনীতি ভবনে হামলার ঘটনা সব মিলিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কেঁচে গণ্ডুষ অবস্থায় চলিয়াছে। ঠিক এই মুহূর্তে বিদেশ সচিবদের বৈঠককে রুটিন বৈঠক বলা হইলেও ইহা আর রুটিন থাকিতেছে না, বিশেষ হইয়া দাঁড়াইয়াছে।
যে মতে আগরতলার বা কলকাতার কূটনৈতিক অফিসের কর্তাদের ডাকিয়া লওয়া নিতান্ত রুটিন কাজ নহে সেই প্রকারে বিদেশ সচিব স্তরের বৈঠক তো একেবারেই রুটিন কার্য হইবে না। বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠকের দিকে নজর থাকিতেছে দুই দেশের মানুষের। হয়তো এই বৈঠকেই মিলিতে পারে স্বাভাবিকতার ছন্দ। পাঁচ আগষ্টে হাসিনার দেশত্যাগের পর বাংলাদেশ বারংবার শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরাইয়া দিবার কথা বলিলেও সরকারীভাবে ভারতের নিকট এই আর্জি জানায় নাই। অন্যদিকে, নয়াদিল্লী বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের স্পর্ক চালাইয়া যাইতে তার আগ্রহের কথা বলিলেও ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানি তাহার বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া মিটাইবার দাবি জানাইয়াছে ঢাকার নিকট। অন্যদিকে, ঢাকা আদানির সহিত বিদ্যুতের চুক্তি পুনর্বিবেচনার কথা শুনাইয়াছে।
দুই দেশের মধ্যে এই দুইটি বড় ঘটনা ব্যতিরেকে বাকি থাকিতেছে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি। এই লইয়া দুই দেশের সরকার পাঁচ আগষ্টের পর বারবার কথা বলিয়াছে। নয়াদিল্লী যতবার উদ্বেগ জানাইয়াছে ঢাকা ততবারই নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়াছে। সকল আশ্বাস যে শূন্যগর্ভ ছিল এমন নহে। বাংলাদেশে দুর্গোৎসব নির্বিঘ্নে কাটিয়াছে। সরকার দুর্গোৎসবের ছুটি একদিন হইতে বাড়াইয়া দুইদিন করিয়াছে। অর্থাৎ পাঁচ আগষ্টে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর যে সংখ্যালঘু নির্যাতন শুরু হইয়াছিল দুর্গোৎসবের মুখে তাহা আসিয়া থামিয়াছিল প্রথম দফায়। দ্বিতীয় দফায় নির্যাতন শুরু হয় সনাতনী ঐক্যমঞ্চের আট দফা দাবি পূরণ লইয়া আন্দোলনের পর। যাহার পরিণতি এখনও চলিতেছে।
এই কথা অনস্বীকার্য যে বাংলাদেশের সহিত ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ হইয়া গেলে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রহিয়াছে যে এক খণ্ড বাংলা সেই বাংলা অঞ্চলেরও প্রভূত ক্ষতি হইবে। বলা চলে ক্ষতির গোনাগুনতি শুরু হইয়া গিয়াছে। আর এই বাংলার বাহিরে পররাষ্ট্রগতভাবে নয়াদিল্লীর যে বন্ধু দেশ সেই সংখ্যাটি এখন কত এই লইয়াও কথা শুরু হইতেছে। প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গেই মধুরতম সম্পর্ক ছিল নয়াদিল্লীর। এই বন্ধুত্বকে চিরতরে হারাইয়া ফেলাও কূটনৈতিকভাবে দূরদর্শী কোনও সিদ্ধান্ত নহে। কিন্তু সম্পর্কের সাবলীলতা ফিরিবে কোন্ পথে? কীমতে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিরূপদ্রবে থাকিবে? সেই সকল প্রশ্ন আজ সামনে আসিতেছে, বিশেষত দুই দেশের বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠকের মুখে। সকলেরই প্রত্যাশা এই বৈঠক হইতে কোনও সফল সমাধানসূত্র সম্মুখে চলিয়া আসে। দ্রুত ফিরিয়া আসে দুই নিকট প্রতিবেশীর স্বাভাবিক সম্পর্ক।