রুদ্রসাগরের বিবর্ণ জলাশয়ে ঝুঁকির মুখে পর্যটন

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রুদ্রসাগর জলাশয় তুমি কার ?এই প্রশ্নই আজ ভাবিয়ে তুলছে অগণিত পর্যটককে । যে জলাশয়কে ঘিরে রয়েছে রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র নীরমহল । চতুর্দিকে বিস্তীর্ণ জলরাশির মাঝে অবস্থিত দ্বীপভূমিতে গড়ে উঠেছে হিন্দু ও মোগল স্থাপত্য শিল্পের অনুকরণে একটি প্রাসাদ । বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যার নামকরণ করেছিলেন ‘ নীরমহল ‘ । সেই পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে থাকা রুদ্রসাগর জলাশয়ের আজ কী বিবর্ণ দশা তা চাক্ষুষ না করলে বিশ্বাস করা কঠিন । বর্ষাকালে এই জলাশয় ফিরে পায় তার যৌবন । শুখা মরশুমে এই জলাশয় হারিয়ে যায় ধানচাষের জমির মধ্যে । জলের গভীরতা থাকে মাত্র দুই হাত , বর্ষাকালে যে জলের গভীরতা ন্যূনতম দশ হাত । বর্তমানে বর্ষাকাল । রুদিজলা আজ পরিপুষ্ট জলরাশিতে । কিন্তু এই জলরাশি ঢাকা পড়ে গেছে কচুরিপানা , নানা জলজ উদ্ভিদে । জলাশয় পরিষ্কার করার দায় নেই কোনও পক্ষের । রুদ্রসাগর সমবায় সমিতির দাবি এই জলাশয়ে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত । জলাশয়কে ঘিরে দুই হাজার মৎস্যজীবী পরিবারের জীবনজীবিকা জড়িয়ে রয়েছে । বর্ষাকালে মাছ ধরা , শুখা মরশুমে ধান চাষের উপরই দুই হাজার পরিবার নির্ভরশীল । আর নৌকাযোগে অগণিত পর্যটকদের নীরমহল প্রাসাদে নিয়ে যাবার মধ্য দিয়ে এই সমবায় সমিতি তাদের আর্থিক তহবিলকে মজবুত করে চলছে । যাকে ঘিরে পর্যটকদের স্বপ্ন , রাজ্য সরকার যাকে সাজিয়ে তোলার জন্য নানা সময়ে নানা স্বপ্নের জাল বুনে এই পর্যটন কেন্দ্রকে গোটা ভারতে এক বিশেষ স্থানে নিয়ে যাবার জন্য বদ্ধপরিকর , সেই জলাশয়ের আজ কী দশা তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন পর্যটকরা ।

প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক পর্যটক বিনোদনের মাধ্যম হিসাবে বেছে নেন নীরমহলকে । রুদ্রসাগরের ঘাট থেকে প্রাসাদে যাবার জন্য রয়েছে মোটরচালিত নৌকা , যার মধ্যে ১০০ জন সওয়ার হতে পারেন । বর্তমানে রুদ্রসাগরের প্রধান ঘাট থেকে নীরমহল প্রাসাদ পর্যন্ত গোটা জলাশয় ঢেকে গেছে কচুরিপানায় । যার ফলে একে জলাশয় ভাবা অতিকঠিন । শুখা মরশুমে জল কমে গেলে কিংবা বর্ষাকালে প্রধান ঘাট থেকে প্রাসাদ পর্যন্ত জলাশয়ে একটি পথ চিহ্নিত করে নৌকা চলাচল করতো । কিন্তু বর্তমান সময়ে কচুরিপানা এই পথসহ নীরমহল প্রাসাদের সামনের অংশ থেকে গোটা জলাশয়কে গ্রাস করে নিয়েছে । ফলে বিস্তীর্ণ জলরাশির রূপ সৌন্দর্য বিলীন হয়ে গেছে । জল আর দেখা যায় না । যেদিকে চোখ যায় সর্বত্রই কচুরিপানার দাপাদাপি । অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নৌকা চালিয়ে এখন আর পর্যটকদের সরাসরি নীরমহল প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না । নৌকা আর জলাশয়ের দখল নিয়ে রাখা কচুরিপানার মধ্যে চলে লুকোচুরি খেলা । ১০০ আসন বিশিষ্ট নৌকা কচুরিপানা ঠেলে বা সরিয়ে এগিয়ে যেতে পারে না । নৌকার মাঝি জলাশয়ে খুঁজে বেড়ায় কোথায় কচুরিপানার মধ্যে ফাঁক রয়েছে । এই ফাঁক দেখে দেখে অতিশ্লথতায় নৌকা পাড়ি দেয় নীরমহলের উদ্দেশে । প্রধান ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে । সরীসৃপের মতো এঁকেবেঁকে জলাশয়ের এক প্রান্ত থেকে ডানদিক , কখনও বাঁদিক এভাবে এগিয়ে যায় । যেকোনও সময় কচুরিপানার বেড়াজালে নৌকা আটকে গেলে কচুরিপানার আস্তরণ সরিয়ে নৌকা বা পর্যটকদের নিরাপদে নিয়ে আসা অতি কঠিন । বিপজ্জনকভাবে কচুরিপানার আস্তরণ পাশ কাটিয়ে এঁকেবেঁকে নৌকা চালিয়ে পর্যটকদের নীরমহল প্রাসাদে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে যে ঝুঁকি রয়েছে একে উপেক্ষা করেই রুদ্রসাগর সমবায় সমিতি নৌকা চালনা করছে ।

কেননা এক্ষেত্রে অর্থ যে বড় দায় । প্রতি পর্যটকপিছু নৌকা ভাড়া ৫০ টাকা । পর্যটকদের নীরমহল প্রাসাদে নিয়ে যাবার জন্য রুদ্রসাগরের জলকেই মাধ্যম হিসাবে নিয়েছে সমবায় সমিতি । কিন্তু জলাশয়কে রক্ষণাবেক্ষণের দায় নিতে নারাজ সমবায় সমিতি। জলাশয় ঢেকে গেছে কচুরিপানায় । তা নির্মূল করে জলাশয় পরিষ্কার করার প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা লক্ষ্য করা যায় না । কেবলমাত্র নৌকা পরিচালনার জন্য কিছু বাঁশ জলাশয়ে পুঁতে কচুরিপানাকে আটকে রাখার প্রয়াস সফলতা পাচ্ছে না । বর্তমানে বর্ষাকাল হওয়ায় রাসাগর জলাশয়ে জলস্তর প্রতিনিয়ত বাড়ছে । কচুরিপানার দৌলতে যেভাবে নৌকা চালিত হচ্ছে তাতে যেকোনও সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে । গভীরতা সমৃদ্ধ বর্তমান জলাশয়ে বিপজ্জনকভাবে নৌকা সরীসৃপের মতো এঁকেবেঁকে যাবার ফলে পর্যটকদের বিপদের ঝুঁকি পদে পদে । পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই লাইফজ্যাকেট । যে ক’টি রয়েছে তাও পর্যটকরা গায়ে চাপাতে চান না । নেই কোনও প্রশাসনিক বাধ্যবাধকতা । নামসর্বস্বতায় লাইফজ্যাকেট নৌকায় রাখা হলেও পর্যটক পিছু যথেষ্ট সংখ্যায় নেই । রুদ্রসাগর জলাশয়কে কচুরিপানামুক্ত করার জন্য কোনও উদ্যোগ এ পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়নি । এই জলাশয় রামসা সাইট হিসাবে স্বীকৃত । রামসা বা বন দপ্তরের কোনও উদ্যোগ নেই । তেমনি নির্বিকার রুদ্রসাগর সমবায় সমিতি । ফলে রুদ্রসাগর জলাশয় শ্রী হারিয়ে তার আঙ্গিক শোভাবর্ধন করছে কচুরিপানা । গোটা জলাশয়ের দখল নিয়ে এই জলজ উদ্ভিদ পর্যটন কেন্দ্রকে করে তুলেছে হাসির খোরাক । কেবলমাত্র জলাশয়কে কেন্দ্র করে অর্থ রোজগারই একমাত্র লক্ষ্য । একে পরিষ্কার করা , স্বচ্ছতায় রাখার দিকটি একেবারেই উপেক্ষিত । অথচ রুদ্রসাগর জলাশয়ের নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য দশ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয় করা হয়েছে ফিনল্যান্ড থেকে আনা ড্রেজিং মেশিন ওয়াটার মাস্টার । যা ভূমিষ্ঠ হবার পর থেকেই অকেজো । সম্প্রতি তা সংস্কার করা হয়েছে বলে জল সম্পদ দপ্তর দাবি করলেও এই মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে না । রুদ্রসাগর জলাশয়ের পাড়ে সামনের জায়গাকে পর্যটকদের কাছে দৃষ্টিনন্দন করার জন্য প্রায় দশ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে । শুরু হয়েছে নির্মাণকাজ । যাকে ঘিরে স্থলভূমিতে সৌন্দর্যায়নের প্রয়াস , সেই জলাশয়ের বিবর্ণতা হতশ্রী , বিষময় রূপ কী বার্তা দেবে অগণিত পর্যটকদের কাছে সেই জিজ্ঞাসাই তারা করছে সকলকে ।

Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

19 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

19 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago