এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

১৮৮১ সালে ঔপনিবেশিক শাসনের সময় থেকে ভারতে জনগণণা শুরু হলেও আর্থ-সামাজিক জাতি-সুমারি হয়েছিল ১৯৩১ সাল পর্যন্ত। মূলত একটি সরকার,নীতি নির্ধারক, শিক্ষাবিদ এবং বিভিন্ন গবেষকদের দ্বারা ভারতীয় জনসংখ্যার রূপ, কাঠামো, সম্পদের ব্যবহার
সামাজিক পরিবর্তন, সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি অনুশীলন ও পর্যালোচনা পরিচালনা করার জন্যই জনগণকে ব্যবহার করে থাকে। জনগণনাকেন সামনে রেখেই দেশের পরিকল্পনা ও রূপরেখা তৈরি করা হয়।কিন্তু
জনগণনাতে জাতি সুমারিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দেশে দাবি ও পাল্টা দাবি তৈরি হচ্ছে।যার স্পষ্টীকরণ ও বিতর্কের অবসান এখনও হয়নি। ভারতের বর্ণ ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহের একটি দীর্ঘ ইতিহাস
রয়েছে, যাতে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত বর্ণভিত্তিক ভারতীয় সমাজ-অর্থনীতির তথ্য অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল।মূলত এদেশে জাতি সুমারি পরিচালিত হয়েছিল যে উদ্দেশ্য নিয়ে সেই লক্ষ্যটি ছিল বঞ্চনার সূচকগুলো চিহ্নিত করা এবং গ্রামীণ ও শহর উভয় ক্ষেত্রেই ভারতীয় পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার তথ্য সংগ্রহ করা। এটি বিভিন্ন বর্ণ গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবস্থার মূল্যায়ন করার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট কাস্ট বা বর্ণের নামের উপর তথ্য সংগৃহীত হয়েছিল।এটা মনে রাখতে হবে যে জনগণনা একটি দেশের জনসংখ্যার
একটি সাধারণ প্রতিকৃতি প্রদান করে মাত্র।অন্যদিকে আর্থ-সামাজিক জাতি সুমারী সরকারী সহায়তায় সুবিধাভোগীদের সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ১৯৫১ সালের পর থেকে বর্ণের ভিত্তিতে অর্থাৎ কাস্ট
সেন্সাসের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।বলা হয়েছিল কাস্ট সেন্সাস একদিকে যেমন বিভাজনমূলক দৃষ্টিভঙ্গিকে উৎসাহিত করছে,তেমনি জাতীয় ঐক্যের জন্যও তা প্রশ্নচিহ্ন হয়ে থাকছে।যাই হোক, বর্তমান সময়ে আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক
গতিশীলতার পরিবর্তন এবং সঠিক তথ্যের প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষিতে আবার নতুন করে দেশে একটি কাস্ট সেন্সাস প্রণয়ন করার জন্য বিভিন্ন
তরফে দাবি উঠেছে।ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় বর্ণভেদ প্রথাকে যতই অস্বীকারের চেষ্টা করা হোক না কেন, তা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ
হিসেবে এখনও টিকে আছে। যা সামাজিক সম্পর্ক, অর্থনৈতিক সুযোগ,এবং রাজনৈতিক গতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে। আবার এটাও ঘটনা, একটি জাতি সুমারি বা কাস্ট সেন্সাস ভারতীয় সমাজের বৈচিত্র্যের একটি বিস্তৃত চিত্রকেও সামনে তুলে ধরতে পারে।সামাজিক কাঠামোর
উপর আলোকপাত যেমন করতে পারে তেমনি বিভিন্ন জাতি বা বর্ণ গোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ককে স্থাপন করতে পারে।এদেশের অনেক অঞ্চলে এখনও যে বর্ণভিত্তিক বৈষম্য চালু রয়েছে,একটি কাস্ট সেন্সাসের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীগুলিকে চিহ্নিত করতে এবং নীতি
নির্ধারণের মাধ্যমে তাদের সমাজে সামনে টেনে আনতে সাহায্য করতে পারে। পাশাপাশি বিভিন্ন বর্ণগোষ্ঠীর বন্টন বোঝার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য মোকাবিলা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের লক্ষ্যে লক্ষ্যবস্তু
নীতি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।তাই সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করতে এটি নীতি নির্ধারকদের নীতি প্রণয়নে যেমন পথ নির্দেশ দিতে পারে তেমনি প্রতিটি গোষ্ঠীর নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে উন্নয়নের যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ওবিসি এবং অন্যান্য গোষ্ঠীগুলির জন্য সংরক্ষণের মতো ইতিবাচক পদক্ষেপের নীতিগুলি যেমন সামাজিক ন্যায় বিচারের লক্ষ্য নিশ্চিত করবে, একই সঙ্গে জনসংখ্যার সঠিক তথ্য ছাড়া এই নীতিগুলোর প্রভাব এবং কার্যকারিতা মূল্যায়ন করাও কঠিন হয়ে ওঠে।যদিও এর বিপক্ষেও বলা হয়ে থাকে বর্ণভিত্তিক বৈষম্য অবৈধ এবং কাস্ট সেন্সাস শুধুমাত্র বর্ণ প্রথাকেই শক্তিশালী করে। একথাও বলা হয় যে, কাস্ট সেন্সাস বা জাতি সুমারি সমাজকে আরও বিভাজনের দিকে নিয়ে যায়, যা রাষ্ট্রের জন্য হানিকর।কিন্তু এখানে এতগুলো কথা বলার একটাই কারণ,২০১১ সালের পর দেশে আর জনগণনা হয়নি। কোভিডজনিত পরিস্থিতি ২০২১-এর জনগণনাকে প্রলম্বিত করে লোকসভায় ভোট পেরিয়ে এখন ২০২৪-এর শেষপ্রান্তে উপনীত হয়েছে।জানা যাচ্ছে, আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই দেশে জনগণনার কাজ শুরু হবে এবং ২০২৬-এর মার্চ নাগাদ এর ফল প্রকাশ করা হবে। এই জনগণনার সঙ্গে একত্রে জাত গণনা বা কাস্ট সেন্সাসের সম্ভাবনা নিয়েও গুঞ্জন চলছে। হয়তো রাজনৈতিক কারণে বিরোধীদের উত্থাপিত দাবিকে মেনে নিয়ে নিজেদের পালে হাওয়া টানতে এই পথে হাঁটতে পারে মোদি সরকার।যেমনটা নয়া পেনশন স্কিমের সঙ্গে অভিন্ন পেনশন স্কিম জুড়ে দেওয়ার বিকল্প খোঁজা হয়েছে।এক্ষেত্রেও যদি তেমনটা হয় আখেরে তা দেশের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও রূপায়ণেই কাজে লাগবে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

এ কে-৪৭ ও প্রচুর কার্তুজ সহ ৬ বৈরী ধৃত মিজোরামে, চাঞ্চল্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি:- বাংলাদেশ থেকে কাঞ্চনপুর মহকুমার ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে মিজোরামে যাওয়ার পথে মামিত জেলার…

3 hours ago

ফাইফরমাশ খাটছেন টিএসআর জওয়ানরা !!

অনলাইন প্রতিনিধি :- নিরাপত্তার কাজে নয়, টিএসআর জওয়ানদের খাটানো হচ্ছে আর্দালি হিসাবে। পুলিশ আধিকারিকদের ও…

3 hours ago

ইন্ডিগো আরও একটি দিল্লীর বিমান চালু করছে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- ইন্ডিগো আগরতলা- দিল্লী রুটের উভয় দিকে যাতায়াতে আরও একটি বিমান চালু করছে।…

3 hours ago

ইন্দ্রপ্রস্থে ভোট!!

দিল্লীর বিধানসভা ভোট নিয়ে সরগরম দিল্লী। দিল্লীতে এবার এক আঙ্গিকে বিধানসভা ভোট হচ্ছে। গত পরিস্থিতির…

3 hours ago

বহিঃরাজ্যে গেল “ধানি লঙ্কা”ওরফে ধান্না মরিচ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরায় উৎপাদিত" অর্গানিক বার্ড আই চিলি " স্হানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ধানি…

1 day ago

কুম্ভ ইকনমি

২২জানুয়ারী,২০২৪।এক বছরের ব্যবুধানে ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি।গত বছরের মেগা ইভেন্টের আসর বসেছিল অযোধ্যায়। এবার মেগা…

1 day ago