রেগা-১০৩২৩ ইস্যুতে উত্তপ্ত বিধানসভা!!

অনলাইন প্রতিনিধি:- রেগা এবং ১০,৩২৩ ইস্যুতে শুক্রবার উত্তাল হলো বিধানসভা। শাসক এবং বিরোধী সদস্যদের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ, হট্টগোল, ওয়ালে নেমে বিরোধীদের বিক্ষোভ, ওয়াকআউট ঘিরে এদিন উত্তাল হয়েছে বিধানসভার অধিবেশন। এদিন বিরোধী সদস্য তথা সিপিআইএম দলের বিধায়ক দীপঙ্কর সেনের উত্থাপিত একটি বেসরকারী প্রস্তাবের উপর আলোচনাকালে উত্তাল হয়ে উঠে বিধানসভা। দীপঙ্কর বাবু তার উত্থাপিত প্রস্তাবের উপর আলোচনা করতে গিয়ে প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে তীব্রভাবে শাসকদলের সমালোচনা শুরু করেন। প্রতিবাদে পাল্টা সরব হয় ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরা। এরই মধ্যে দীপঙ্করবাবু ১০৩২৩ ইস্যু তুলে শাসকদলের সমালোচনা শুরু করলে, প্রথমে মন্ত্রী রতনলাল নাথ এবং পরে মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী সহ ট্রেজারি বেঞ্চের অন্যান্য সদস্যরা পাল্টা সরব হন। এ নিয়ে শুরু হয় দুই পক্ষের তীব্র বাদানুবাদ। মন্ত্রী রতন লাল নাথ এবং মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী যেভাবে বিরোধী বেঞ্চকে পাল্টা আক্রমণ করেন, তাতে বিরোধী বেঞ্চের সদস্যরা একজোট হয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলেও, খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। টান প্রায় পনেরো মিনিট ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ এবং হট্টগোল চলতে থাকে। একটা সময় পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছায় যে, প্রেস গ্যালারি থেকে কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না কে কি বলছেন। তখন অধ্যক্ষের চেয়ারে ছিলেন বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া। তিনিও হাউস নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। পরিস্থিি তখন একপ্রকার চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। মন্ত্রী রতন লাল নাথ তখন চিৎকা করে চেয়ারম্যান রামপদ জমাতিয়াকে হাউস নিয়ন্ত্রণের জন্য বলতে থাকেন। কিন্তু রামপদবাবুর পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবে তীব্র হট্টগোলের মধ্যে হাউ প্রবেশ করেন অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন। রামপদবাবু যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। অধ্যক্ষ এসেই সভা শান্ত করে সিপিএম বিধায়ক দীপঙ্কর সেনকে প্রসঙ্গের মধ্যে থেকে আলোচনার জন্য বলেন। কিন্তু দীপঙ্করবাবু আবার প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে সরকারে সমালোচনা শুরু করতেই ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠে সভা। মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন ১০৩২৩ আপনাদের পাপের ফল। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের অহংকারের ফল। আপনারা হাইকোর্টের অর্ডারকে অমান্য করেছেন বলেই ১০৩২৩ সৃষ্টি হয়েছে। সুশান্ত চৌধুরী অধ্যক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে দীপঙ্করবাবু যা যা বলেছেন, সব বিধানসভার রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়ান দাবি জানান। অধ্যক্ষ মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর দাবিকে মান্যতা দেন এবং দীপঙ্ক সেনকে এই বিষয়ে আর কথা বলার সুযোগই দেননি। এই নিয়ে ফের উত্তপ্ত হয় বিধানসভা।

এক সময় বিরোধী সদস্যরা ওয়ালে নেমে এসে অধ্যক্ষের সামনে স্লোগান দিতে থাকেন। ওই একই সময়ে ট্রেজারি বেঞ্চের কয়েকজ বিধায়ক নিজেদের চেয়ার থেকে উঠে ওয়ালের দিকে তেড়ে আসতে দেখে মন্ত্রী রতন লাল নাথ চিৎকার করে ধমক দিয়ে তাদেরকে নিজের চেয়ারে ফিল্ম যাওয়ার জন্য বলেন। রতনবাবুর ধমক খেয়ে শাসকদলের বিধায়করা অবশ্য সাথে সাথেই নিজ নিজ চেয়ারে বসে পড়েন। এরপরেই বিরোধী সদস্যরা রণে ভঙ্গ দিয়ে সভা থেকে ওয়াকআউট করেন। তখন ঘড়িতে বিকাল আলে চারটা। এরপর বিরোধী সিপিএম বিধায়করা আর কেউই হাউসে আসেননি।উল্লেখ্য, এদিন সিপিএম বিধায়ক দীপঙ্কর সেনের বেসরকারী প্রস্তাবটি ছিল রাজ্যের গ্রাম পাহাড়ে দুর্বিসহ অভাব রুখতে বছরে ন্যূনতম ২০০ দিন কাজ এবং প্রতি শ্রম দিবসে ৩৪০ টাকা মজুরি প্রদানের ব্যবস্থা করার জন্য ত্রিপুরা বিধানসভা অনুরোধ জানাচ্ছে। এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করার পরই পরিষদীয় মন্ত্রী প্রথমে প্রশ্ন তুলে বলেন, দীপঙ্করবাবুর প্রস্তাবটিই ভুল। কার কাছে অনুরোধ জানাচ্ছে? প্রস্তাবে এর কোনও উল্লেখ নেই। যদিও এই প্রস্তাবের উপর খাল দলের বিধায়ক জিতেন্দ্র মজুমদার সংশোধনী প্রস্তাব আনেন। দীপঙ্করবাবুর উত্থাপিত প্রস্তাব এবং অভিযোগ অসত্য বলে পাল্টা সমালোচনায় বিদ্ধ করেন তিপ্রা মথা বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা। পরে মুখ্যমন্ত্রী জবাব দিতে উঠে বলেন, গোয়েবলসীয় কায়দায় মানুষকে বিভ্রান্ত করা সিপিএমের বৈশিষ্ট। আমরা এসব পছন্দ করি না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রাজ্যে ৬ লক্ষ ৯১ হাজার জব ইনসি কার্ড রয়েছে। তাদের চাহিদা অনুসারে কাজ প্রদান করা হয়। এটাই এই প্রকল্পের নিয়ম। মুখ্যমন্ত্রী তথ্য দিয়ে বলেন, ২০২২-২৩ রাজ্যে ষাটদিন কাজ হয়েছে। বুদ্ধি সারা দেশে গড়ে কাজ হয়েছে ৪৮ দিন। ওই বছর সারা দেশে ত্রিপুরা ছিল করা চতুর্থ স্থান। ২০২৩-২৪ রাজ্যে গড়ে কাজ হয়েছে ৬৩ দিন, সারা দেশে গড়ে কাজ হয়েছে ৫২ দিন। ওই বছরেও সারা দেশে ত্রিপুরা ছিল চতুর্থ স্থানে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে গড়ে ৫৯ দিন। সারা দেশে গড়ে ৪৯ দিন। এখন পর্যন্ত সারা দেশে ত্রিপুরা ৭ম স্থানে। যারা কাজ চেয়েছেন এমন ৫৮, ৫০২ জন জব কার্ড হোল্ডারকে কাজ প্রদান করা হয়েছে। ফলে দীপঙ্করবাবু এখানে যেসব তথ্য এবং কথা বলার চেষ্টা করেছেন, তার কোনও ভিত্তি নেই। রেগার তথ্য এখন যে কেউই দেখতে পারে। এখানে গোপন করার কিছু নেই। আর মজুরি প্রতি বছর কেন্দ্রীয় সরকার মূল্যায়ন করেন। আমরাও চাই মজুরি বৃদ্ধি হোক।
