রোগীর মৃত্যু ঘিরে স্বাস্থ্য সচিবের বৈঠক, তদন্ত কমিটি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের প্রধান
সরকারী রেফারেল হাসপাতাল জিবির চিকিৎসা পরিষেবার হাল যে ক্রমেই আরও বেহাল দশার দিকে যাচ্ছে বুধবার সুভাষ দাস (৫৮) মৃত্যুর ঘটনায় তা চোখে আবারও আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এমনটাই অভিমত ব্যক্ত করছেন রোগী, রোগীর আত্মীয় ও হাসপাতালের একাংশ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। তা না হলে স্ট্রোকে আক্রান্ত সুভাষ দাসকে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুই নং ইউনিটে রাত পৌনে দুটোয় ভর্তি করানো হয়। তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই ওয়ার্ড থেকে অনকলে নিউরোলজিস্ট চেয়ে বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসককে এই রোগীর চিকিৎসায় দ্রুত হাসপাতালে আসার জন্য ডাকা হলেও কেন রাতে আসেননি তা নিয়েই বৃহস্পতিবারও দিনভর হাসপাতাল জুড়ে নানা মন্তব্য চর্চা চলছেই।রাতে সিধাই মোহনপুর থেকে স্ট্রোকে আক্রান্ত সুভাষ দাসকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় জিবিতে আনা হয়। মেডিকেল কলেজে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট (পিজি) পাঠরত ছাত্র চিকিৎসক রোগীকে দেখে চিকিৎসা পরিষেবা দেন। রাতভর ও সকাল ১১টা সাড়ে এগারোটায় মৃত্যুর আগে পর্যন্ত পিজি ছাত্র জুনিয়র চিকিৎসকরা রোগীকে দেখেন। কিন্তু অনকলে ডাকার পরও শুধু যে নিউরোলজিস্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হাসপাতালে এসে রোগী দেখেননি তাই নয়,কোন সিনিয়র চিকিৎসকও রাতভর মেডিসিন বিভাগে খুঁজে পাননি উদ্বিগ্ন রোগীর আত্মীয়রা। তারপরই সুভাষ দাসের মৃত্যুর পরই শোকাহত ও ক্ষুব্ধ পরিবার, আত্মীয়স্বজন চিকিৎসার অবহেলা ও গাফিলতিতে রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতালে তুমুল বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। নার্সের অসহযোগিতা ও ব্যবহার নিয়েও অভিযোগ তোলেন।চিকিৎসকদের তরফেই একটি বড় মহল প্রশ্ন তুলেছেন অনকল দেওয়ার পরও কেন নিউরোলজিস্ট বিশেষজ্ঞ রোগী দেখতে আসেননি।তাহলে হাসপাতালে অনকলে চিকিৎসক ডাকা সিস্টেম চালু রেখে কি লাভ- সেই প্রশ্ন উঠেছে রোগী ও রোগীর আত্মীয়দের মধ্যেও।সুভাষ দাস কোনও মন্ত্রীর বা প্রভাবশালীর পরিচয়ধারী না হওয়ায় কি রাতে অনকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আসার প্রয়োজনবোধ করেননি। রোগীর মৃত্যুর
পর সেই প্রশ্নও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। কেন হাসপাতালে এই বেহাল দশা কায়েম হয়েছে প্রশ্ন সেখানেও। রাতে চিকিৎসক ও নার্সরা সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কাজ করছে কিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা, স্বাস্থ্য আধিকারিকরা, স্বাস্থ্য সচিব নজরদারি ও দেখভাল করছে কিনা তা নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। রাতে ও গভীর রাতে হাসপাতাল ম্যানেজমেন্টের কর্তারা বা স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারা কেউ হাসপাতালে এসে সারপ্রাইজ ভিজিট করেন না বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার হালহকিকৎ নিয়েও ক্রমশ ক্ষোভ বাড়ছে বলে বহুদিন ধরেই এই অভিযোগ উঠছে।বুধবার সুভাষ দাসের মৃত্যুর পর হাসপাতালের ভূমিকায় সেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ চরমে উঠেছে বলেই হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি।জিবি হাসপাতাল রাজ্যের মানুষের চিকিৎসা পরিষেবার একমাত্র ভরসার স্থান। অভিযোগ, রাজ্যের মন্ত্রী, বিধায়ক, আমলারা অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য দিল্লী, কলকাতা ও দক্ষিণ ভারতে নামীদামি হাসপাতালে ছুটে যান। কিন্তু রাজ্যের সাধারণ ও গরিব অংশের মানুষকে চিকিৎসার জন্য জিবিতেই ছুটে আসতে হচ্ছে। আর জিবির চিকিৎসা পরিষেবার হাল যদি বেহাল হয় তাহলে রাজ্যের অসহায় সাধারণ ও গরিব মানুষ কোথায় যাবেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাসপাতাল মেডিকেল সুপার ডা. শংকর চক্রবর্তী জানান, চিকিৎসায় অবহেলা ও গাফিলতিতে সুভাষ দাসের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠায় তার তদন্তে জিবি তথা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. জেএল বৈদ্যকে তদন্ত কমিটির প্রধান করে দুই অ্যাসোসিয়েট প্রফেসার সহ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।তদন্ত কমিটি ৫ দিনের মধ্যে তদন্তকার্য সম্পন্ন করে হাসপাতাল মেডিকেল সুপারের কাছে তদন্তের রিপোর্ট বন্ধ খামে করে জমা দেবে।সেই তদন্ত রিপোর্ট স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা হয়ে স্বাস্থ্য সচিবের কাছে যাবে।তারপর রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নেয় সেই সিদ্ধান্ত জানাবে। এদিকে সুভাষ দাসের মৃত্যুর পর হাসপাতালে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সেই কারণে বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য সচিব কিরণ গিত্যে হাসপাতালে ছুটে আসেন। কলেজ ভবনে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় বৈঠক করেন।বৈঠকে স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিক, কলেজ আধিকারিক, হাসপাতাল আধিকারিক সহ চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে স্বাস্থ্য সচিব সুভাষ দাসের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠায় সঠিক তদন্তের নির্দেশ দেন। স্বাস্থ্য সচিব হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার হাল উন্নত করার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ারও নির্দেশ দেন।