রোগ সারবে তো ?

বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। একশ চল্লিশ কোটি আবাদির দেশে সংসদীয় গণতন্রের সব থেকে বড় লড়াই।আর এই লড়াইকে সামনে রেখে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতা ধরে রাখতে জাতীয় ক্ষেত্রে নয়া টিম তৈরি করে ফেলেছে বিজেপি। রাজনৈতিক মহল অবশ্য দাবি করছে এটি ‘মোদি টিম’। সে যে টিমই হোক, পদ্মশিবির যে অনেক আগে থেকেই ঘর গুছিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে,তা কিন্তু স্পষ্ট। গত ২৯ জুলাই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা জাতীয় স্তরে দলের সাংগঠনিক রদবদল করেছেন।এই রদবদল খালি চোখে দেখলে সাধারণ একটি প্রক্রিয়া মনে হলেও, একটু রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নজর রাখলে দেখা যাবে, এই রদবদলে বিশেষ ফোকাস করা হয়েছে উত্তরপ্রদেশ ও মুসলিমদের দিকে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সারা দেশের মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক এবং উত্তরপ্রদেশ, এই দুটি দিকে বিশেষ নজর দিয়ে পদ্ম শিবির এবার নতুন টিম গড়েছে। এই টিমে এবার স্থান দেওয়া হয়েছে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তারিক মনসুরকে। তাঁকে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি করা হয়েছে।যা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। বিজেপি গোটা দেশে মুসলিম সম্প্রদায়কে মনসুরের নিযুক্তির মাধ্যমে যে বিশেষ বার্তা দিতে চাইছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া, ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ চালু করা নিয়ে দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে যে শঙ্কা রয়েছে, সেই শঙ্কা দূর করতে বিজেপি তারিক মনসুরের মতো বিশিষ্ট শিক্ষাবিদকে কাজে লাগাবে। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।তাঁকে সর্বভারতীয় সহসভাপতি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে বিজেপি বোঝাতে চাইছে, তারা রাজনীতিতে বিশ্বাস করে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়।২০২৪ সালে বিজেপি ফের ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া। সেই লক্ষ্যেই টিম সাজিয়েছে। শুধু তাই নয়, ক্ষমতা ধরে রাখতে বিজেপি উত্তরপ্রদেশকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।যোগী রাজ্যে ৮০ টি লোকসভা আসনই জিততে চায় বিজেপি। তাই নির্বাচনের আগে জাত-পাতের সমীকরণকে মাথায় রেখে খুবই সুচিন্তিত এবং পরিকল্পনা মতো টিম তৈরি করেছে। যেখানে ব্রাহ্মণ, কুর্মি থেকে শুরু করে সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিকে স্থান দিয়েছে নয়া টিমে।শুধু লোকসভা নির্বাচনই নয়, চলতি বছরের শেষভাগে দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে অনুষ্ঠিত হবে বিধানসভা নির্বাচন। ওই রাজ্যগুলিতেও সাংগঠনিক শীর্ষস্তরে সভাপতি, সংগঠন মহামন্ত্রী স্তরে রদবদল করেছে বিজেপি। যাবতীয় অংক কষে এই রদবদল করা হয়েছে বলে খবর। খবরে প্রকাশ, আগামী কিছুদিনের মধ্যে আরও বেশ কয়েকটি রাজ্যে সাংগঠনিক রদবদল করা হতে পারে। যে কয়টি রাজ্যে ইতিমধ্যে সাংগঠনিক শীর্ষস্তরে রদবদল করা হয়েছে, তার মধ্যে উত্তর পূর্বের ছোট রাজ্য ত্রিপুরাও রয়েছে।এই রাজ্যেও দলের সংগঠনমন্ত্রী হিসাবে এতোদিন দায়িত্ব পালন করেছেন আসামের ফণীন্দ্র নাথ শর্মা। একই সাথে তিনি আসাম প্রদেশের সংগঠনমন্ত্রী পদেও ছিলেন। তাঁকে এবার ত্রিপুরা ও আসামের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে হরিয়ানাতে পাঠানো হয়েছে। হরিয়ানার রাজ্য প্রভারি হিসাবে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। সেই হরিয়ানা থেকেই এবার আসাম ও ত্রিপুরায় দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে নিযুক্তি দেওয়া হয়েছে বরিষ্ঠ নেতা জিআর রবীন্দ্র রাজুকে।
এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, সাংগঠনিক শীর্ষস্তরে এই রদবদল এবং নতুন ভাবে গড়া টিম ২০২৪ সালে পদ্ম শিবিরকে পুনরায় ক্ষমতার মসনদে বসাতে পারবে তো? এই প্রশ্ন উঠার পিছনে অন্যতম কারণ হলো, সদ্য কর্ণাটকের নির্বাচন। কর্ণাটকে নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলে বিএসল সন্তোষের মতো তাত্ত্বিক নেতা। সেই বিএল সন্তোষ কিন্তু নাড্ডার নবগঠিত টিমে আগের পদেই রয়েছেন। তাই একেবারে চোখ বুজে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তার উপর রয়েছে, রাজ্যে রাজ্যে দলের গোষ্ঠী বিবাদ। এই বিবাদে সব চেয়ে বড় উদাহরণ ত্রিপুরা। বর্তমানে রাজ্যে শাসক দল আড়াআড়িভাবে দ্বি-খণ্ডিত। এই পরিস্থিতিতে সামনে দুই কেন্দ্রে উপনির্বাচন এবং ২৪ -এর লোকসভা নির্বাচন। তার আগে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ত্রিপুরা বিজেপিকে কতটা ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন, আদৌ পারবেন কিনা তার উপরই নির্ভর করবে দলের আগামী ভবিষ্যৎ। ত্রিপুরায় দলের অন্দরে যে অসুখ বাসা -বেঁধেছে, অসুখ সাধারণ ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগে সারবে বলে মনে হয় না। রাজ্য রাজনীতির হাঁড়ির খবর যারা রাখেন, তারা খুব ভালো করেই জানেন। ফলে, শুধু সাংগঠনিক সম্পাদকের মুখ বদলে রাজ্য বিজেপির অসুখ সারবে কিনা তা এখনই হলপ করে বলা যাবে না। তার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে।