রোজগারে নতুন দিশা দেখাচ্ছে লাখপতি দিদিরা: রতন!!

 রোজগারে নতুন দিশা দেখাচ্ছে লাখপতি দিদিরা: রতন!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-লাখপতি দিদিরাই এখন বদলে যাওয়া ত্রিপুরার বিজয় নিশান তুলে ধরছেন। আগে যেখানে মহিলাদের ঘরের চৌকাঠে আটকে রাখার মতো পরিস্থিতি ছিল, এখন সে পরিস্থিতি বদলে গেছে। মহিলারাই এখন পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রুজি রোজগারে সাফল্যের নজির গড়ছেন। নিজেরা হয়ে উঠছেন স্বাবলম্বী। এমনই অভিমত ব্যক্ত করলেন রাজ্যের কৃষি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতনলাল নাথ। রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা এরকম ৯১ হাজার ৮৭১ জন লাখপতি দিদিদের যেখানেই পাচ্ছেন, সেখানেই অভিনন্দন জানিয়ে তাদের সাফল্যের কথা আরও বেশি করে প্রচারের আহ্বান জানাচ্ছেন রাজ্য মন্ত্রিসভার প্রবীণতম সদস্য রতনলাল নাথ। তার বক্তব্য, এদের সাফল্যের কথা, বেড়ে ওঠার কথা, লড়াইয়ের কথা আরও যত মায়েরা, দিদিরা জানবেন, তারা প্রত্যেকেই উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে আসবেন। সরকার তাদের পাশে দাঁড়াবে। প্রতিটি বাড়িতে মহিলারা নিজেরাই হয়ে উঠবেন আত্মনির্ভর। এরকম বেশ কয়েকজন লাখপতি’ দিদির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে রাজ্যের বিদ্যুৎ, কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতনলাল নাথ শনিবার সাংবাদিকদের জানান, বিজেপি জোট সরকারের আমলে সামর্থ যতটুকুই থাক,মানসিকতার পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।আগে যেখানে বেছে বেছে লাল বাড়ির সদস্যদের শুধুমাত্র সাহায্য সহযোগিতা করা হতো,তা বদলে গিয়ে বিজেপি জোট সরকারের আমলে হয়ে গিয়েছে সার্বিক বিকাশ। এই সরকারের উদ্দেশ্য, লাল-নীল-হলুদ নয়, সকলেই ত্রিপুরাবাসী, ফলে সকলেই সমান সুবিধা পাবেন।দল যার যার, আত্মনির্ভরতা আসুক সবার। সকলের মিলিত উন্নতিতেই ত্রিপুরার অগ্রগতি। রতনবাবু এদিন জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে বিজেপি জোট সরকার দায়িত্ব নেবার আগে পর্যন্ত রাজ্যে যেখানে সহায়ক দলের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪১৪০টি, আর সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৮২৪ জন, সেখানে বিজেপি জোট সরকারের আমলে এসেছে বিরাট পরিবর্তন। এই সরকারের আমলে। মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং তাদের আর্থিক স্বনির্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। রাজ্যে বর্তমানে মোট ৫২.৩৫১টি মহিলাদের পরিচালিত স্বসহায়ক গ্রুপ রয়েছে। যার সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪,৭১,৫৮০ জন। মন্ত্রী বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক, যা রাজ্যের মহিলাদের অর্থনৈতিক উন্নতি ও তাদের সামাজিক অবস্থান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই সরকারের আমলে কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি কোনও রং দেখেনি সরকার। প্রত্যেক বাড়ির মহিলাদের নিয়েই স্বসহায়ক দল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু স্বসহায়ক দল গঠন করেই সরকার বসে থাকেনি, তাদের সরাসরি আর্থিক সহায়তা এবং ব্যাঙ্কের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে। বামফ্রন্টের সময়কালে এ রাজ্যের স্বসহায়ক দলগুলোকে যেখানে বত্রিশ কোটি সাতষট্টি লক্ষ টাকা সাহায্য করা হয়েছিল, সেখানে বর্তমান বিজেপি জোট সরকার এক ঐতিহাসিক মাইলফলক ছুঁয়েছে।
পরিসংখ্যান দিয়ে মন্ত্রী রতনলাল নাথ জানান, এই গ্রুপগুলো সরকারের পক্ষ থেকে ৫৭৭.৮ কোটি টাকা সরাসরি আর্থিক সহায়তা পেয়েছে।এই অর্থ দিয়ে স্বসহায়ক গ্রুপগুলো তাদের ব্যবসা, উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ড ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগে লগ্নি করেছে। এর ফলে মহিলারা শুধু তাদের পরিবারের আয় বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছেন তা নয়,পাশাপাশি তাদের সামাজিক অবস্থানও শক্তিশালি হয়েছে।এছাড়া, রাজ্য সরকার গ্রুপগুলিকে ব্যাঙ্ক ঋণের সুবিধাও দিয়েছে। স্বসহায়ক গ্রুপগুলো মোট ১৪৬৫.২৫ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ পেয়েছে। এই ঋণ ব্যবহৃত হয়েছে কৃষি, পণ্য উৎপাদন, খুচরা ব্যবসা এবং অন্যান্য উদ্যোগের জন্য। সরকারী সহায়তা এবং ব্যাঙ্ক ঋণের এই সমন্বয় স্বসহায়ক গ্রুপগুলির কার্যক্রমকে আরও সমৃদ্ধ এবং টেকসই করে তুলেছে। মন্ত্রী আরও জানান, রাজ্য সরকারের মূল লক্ষ্য হল প্রতিটি পরিবারকে স্বনির্ভর করে তোলা। অর্থাৎ, পরিবারগুলোর মধ্যে এমন লোকের সংখ্যা বাড়ানো, যারা তাদের জীবনযাত্রার জন্য উপার্জন করতে সক্ষম। স্বসহায়ক গ্রুপগুলো এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রাজ্য সরকার বিশ্বাস করে, যদি মহিলারা নিজেদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারে, তবে তাদের পরিবার এবং সমাজের সার্বিক উন্নতি ঘটবে। তিনি আরও জানান, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, যেখানে মহিলারা তাদের গ্রুপগুলির মাধ্যমে একে অপরকে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। সরকার স্বসহায়ক গ্রুপগুলির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং পরামর্শ প্রদান করছে, যাতে তারা আরও কার্যকরী এবং লাভজনক উদ্যোগ শুরু করতে পারে। স্বসহায়ক গ্রুপের মাধ্যমে মহিলারা শুধু অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে না, তারা সমাজে একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে। অনেক মহিলা এখন তাদের পরিবার বা গ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ব্যবসা পরিচালনা করছেন এবং সমাজে একটি প্রভাব ফেলছেন। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছে, তেমনি সমাজের সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক মানসিকতাতেও পরিবর্তন আসছে।রতনবাবু বলেন, তিনি রাজ্যের যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই লাখপতি দিদি কে আছেন, খুঁজে নেন। কারণ বিজেপি জোট সরকারের সাফল্যের প্রতীক এই লাখপতি দিদিরা।তারাই অগ্রগতির নিশান। মন্ত্রী শ্রীনাথ তথ্য দিয়ে জানিয়েছেন, গোটা রাজ্যে ৯১ হাজার ৮৭১ জন লাখ দিদি বছরে এক লক্ষ টাকার উপরে রোজগার করছেন।এটা সরকারীভাবে স্বীকৃত।এর বাইরে অনেক দিদিরা আছেন, যারা এই সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছেন। মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ধলাই জেলায় লাখপতি দিদি আছেন ৯৪৯৮ জন, গোমতী জেলায় লাখপতি দিদি আছেন ১৬,৫২৬ জন, খোয়াই জেলায় আছেন ২৫৪৮ জন, উত্তর জেলায় আছেন ৭৬২৪ জন। সিপাহিজলা জেলায় ৬৬৯৫ জন, দক্ষিণ জেলায় তাজার ২০ জন। পশ্চিম জেলায় ত্রিপুরার মুখ। গোটা দেশ তাকিয়ে দেখছে, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন নয়। ত্রিপুরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মহিলা স্বনির্ভরতায়। নারীরাই এখানে অগ্রগতির শক্তিরূপে নিজেদের তুলে ধরেছেন।এটাই বদলে যাওয়া ত্রিপুরার ছবি।অভিমত মন্ত্রী রতন লাল নাথের।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.