লক্ষ্য নবান্ন!!

 লক্ষ্য নবান্ন!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দেশে চার দফায় লোকসভা ভোট শেষ হওয়ার পর, আর মাত্র তিন দফায় নির্বাচন পর্ব সম্পন্ন হবার আশায় দেশবাসী যখন প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন,ঠিক তখনই মধ্যগগনে ভোট প্রচারে দাঁড়িয়ে বুধবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাবন্দ্যোপাধ্যায় যে বক্তব্য রেখেছেন তা দেশ জুড়ে রাজনীতির অন্দরে বড় গুঞ্জন জন্ম দিয়েছে।বুধবার চুঁচুড়াতে এক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা যে বোমা ফাটালেন তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ ও ইঙ্গিতবাহী।বললেন, লোকসভা ২০২৪এর নির্বাচনে বিজেপি-বিরোধী জোট ইন্ডিয়াকে তিনি বাইরে থেকে সরকার গড়তে সমর্থন করবেন।
ভোটের বাজারে রাজনৈতিক নেতারা অনেক ধরনের চমকপ্রদ কথা বলেই থাকেন। ভোটারদের প্রলুব্ধ করা, প্রভাবিত করা, মনস্তাত্বিকভাবে ভাসমান ভোটারদের নিজেদের পালে টানতে সব রাজ-নেতারাই কম- বেশি ভোটের বাজারে বোমা ফাটান।এটা নতুন কোন আলোচনার বিষয় নয়।কিন্তু মমতার মতো নেত্রী যখন ভোটের প্রচারে নির্বাচনি পর্ব যখন বেশ চমকপ্রদ অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে, তখন দেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আগাম নিজের অবস্থান জানিয়ে দেন এবং ভোটের সম্ভাব্য ফলাফল কী হতে চলেছে তা নিয়ে বক্তব্য রাখেন, তখন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখতে হয়।আর যাই হোক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতিতে বহু উত্থানপতনেরসাক্ষী হয়ে এবং রাজনীতির নিয়ন্ত্রণশক্তি হিসাবে বিভিন্ন সময়ে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।তাই লোকসভা নির্বাচনে ৭ পর্বের ভোটের চারপর্ব শেষ হওয়ার পর মমতার মুখনিঃসৃত এই কথার মধ্যেই অনেকেই বেশ কিছু রাজনৈতিক কৌশলী অবস্থান খুঁজে পাচ্ছেন।এটা সকলেরই জানা,দিল্লীতে ১০ বছর ধরে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য গত প্রায় ৭-৮ মাস ধরে বিজেপি-বিরোধী দলগুলোকে এক মঞ্চে নিয়ে আসার পেছনে অন্যতম ভূমিকা পালন করে চলেছেন মমতা।বহুদিন আগে থেকেই দেশে বিজেপি বিরোধী জোট গড়ার জন্য সলতে পাকানোর কাজটা শুরু করেছিলেন একদিকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং অপরদিকে বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।মমতার পরিকল্পনা মেনেই জয়প্রকাশ নারায়ণের ভিটেমাটি পাটনা থেকেই বিরোধী জোটের প্রথম বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়।সেই বৈঠকে বিরোধী দলগুলোর প্রধান মুখগুলো প্রায় সকলেই হাজির হয়েছিল।পাটনা বৈঠকের পর মুম্বাইতে বিরোধী জোটের দ্বিতীয় বৈঠক বসে এবং বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’ নামটি জোটের জন্য প্রস্তাব করেছিলেন মমতা।যদিও এরপর বিরোধী জোটের ঘরে কিছু মনোমালিন্য, দূরত্ব ও ব্যবধান বাড়তে থাকে।বিশেষ করে রাজ্যে রাজ্যে জোটের চেহারা কী হবে তা নিয়েই মমতার সঙ্গে অধীররঞ্জনের লড়াই তুমুল আকার নেয়। তারপর বঙ্গের মতোই আচমকা রাজনীতিতে সকলকে অবাক করে দিয়ে বিহারে নীতীশ কুমার বিজেপির সঙ্গে আলিঙ্গন করেন।সেই থেকেই জোট নিয়ে বেশকিছু প্রশ্ন ও শরিক দলগুলোর অবস্থান অনিবার্য্য ভাবেই প্রকাশ্যে এসে যায়। বঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’জোট কার্যত ধরাশায়ী হয়। এই পরিস্থিতির মধ্যেই দেশ যখন লোকসভার ২০২৪-এর নির্বাচনে এগোতে থাকে তখন ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেন এবং পরবর্তীতে দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারে রাজনীতির চিত্রপট ক্রমেই জটিল ও ঘোরালো হতে থাকে।রাজনীতির এই তুমুল অস্থির অবস্থানের মধ্যেই লোকসভার ভোটের চার পর্ব শেষ হতেই বুধবার মমতার এই ঘোষণাকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।মমতার ইন্ডিয়া জোটে না থেকেও আবার বাইরে থেকে সরকার গড়তে ইন্ডিয়া জোটকে সমর্থনের ঘোষণার মধ্যে অনেক বিশ্লেষক তৃণমূল নেত্রীর কৌশলী অবস্থান দেখছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, এর মধ্য দিয়ে মমতা ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় উপা সরকারকে নিয়ে বামেদের নিয়ন্ত্রক ভূমিকায় নিজেকে তুলে ধরতে চাইছেন।আবার কারো মতে সরাসরি ইন্ডিয়া জোটকে ভেতরে থেকে সমর্থন না করার অর্থই হলো মমতা বিজেপির জন্যও রাস্তা খোলা রাখছেন।ঘটনা যাই হোক, মুখে ইন্ডিয়া জোটকে নেতৃত্ব দিয়ে এখন বাইরে থেকে সবরকম সাহায্য করে সরকার গড়ার প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে মমতা মূলত পশ্চিমবঙ্গে নিজের রাজ্যপাটকে মাথায় রেখেই রাজনৈতিক অবস্থান নির্ণয় করতে চলেছেন- সেটাই এখন স্পষ্ট।এক্ষেত্রে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ‘প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে তিনি নেই’ এই বক্তব্যের সঙ্গে মমতার বুধবারের ঘোষণার মধ্যেও কোথায় যেন একটা অন্ত:মিল রয়েছে।সেইদিক থেকে আপাতত মমতার লক্ষ্য আগামী ২০২৪ এ নবান্নে ক্ষমতায় ফিরে আসা।আর সেই লক্ষ্য পুরণে মমতার আগামী প্রতিটি পদক্ষেপই যে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য কৌশলী অবস্থান থেকে ইন্ডিয়া জোট বা বিজেপি- যেকোন পক্ষেই ঝুঁকে যেতে পারে- সেটার দিকেই, ইঙ্গিত করছে রাজনৈতিক মহল।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.