লখনৌতে কমিউনিস্ট জমানার দুর্দশার কথা শোনালেন মানিক

অনলাইন প্রতিনিধি :- ত্রিপুরায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে যথেষ্ট ভালো। যার জন্য বাইরে থেকে আগ্রহী বিনিয়োগকারীরা ত্রিপুরায় বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রেই তারা আগ্রহ প্রকাশ করছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুযোগ্য নেতৃত্বের ফলেই এমনটা হচ্ছে। গোটা দেশের হাথে সমান্তরালে এগিয়ে চলেছে ছোট রাজ্য ত্রিপুরাও। সিকিম সহ উত্তর পূর্বের আটটি রাজ্যকে অষ্টলক্ষ্মী নাম য়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এরমধ্যে ত্রিপুরা অন্যতম একটি। ত্রিপুরাকে হিরা ডেল উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। হিরা মডেলের কারণে জাতীয় সড়ক থেকে শুরু করে ইন্টারনেট, রেলওয়ে ও বিমান যোগাযোগের ক্ষেত্রে দ্রুত গিয়ে চলছে ত্রিপুরা। শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনৌর কিং র্জজ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির অটল বিহারী বাজপেয়ী সায়েন্টিফিক কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ন্টারন্যাশনাল জর্জিয়ান অ্যালামনি মিটে ২০২৩’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমনটাই বলেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে হয়ে ত্রিপুরায় কমিউনিস্ট জমানার সাড়ে তিন দশকের দুর্দশার চিত্রও মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা মেলে ধরেছেন। কিং জর্জ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ১১৯তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি একজন সাধারণ মানুষ। নিজেকে অসাধারণ হিসেবে দেখতে নারাজ। বনেদি কেজিএমইউ থেকে শিক্ষালাভ করেছেন বলে তিনি গর্ব প্রকাশ করেছেন। অনুষ্ঠানে ছাত্র ও পেশাগত জীবনের বিভিন্ন ঘটনাবহুল তথ্য মেলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। ডা. সাহা বলেন, ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন অব ত্রিপুরার সচিব হিসেবে এক দশক দায়িত্ব পালন করেছেন। তারপর সভাপতি হিসেবেও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু চাকরিজীবনে বারবার বদলি হতে হয়েছে। অনেক জায়গায় বদলি করা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। তিনি বলেন, তাদের প্রচেষ্টায় ত্রিপুরাতে এখন মেডিকেল কলেজ হয়েছে। একটি সরকারী, অন্যটি সোসাইটি পরিচালিত। এক সময় কমিউনিস্টদের সরকার ছিল ত্রিপুরায়। কিন্তু সেই সরকারটার পরিচালনা সঠিক পথে ছিল না। যার জন্য একজন অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জন হিসেবে ত্রিপুরায় যথেষ্ট সুনাম থাকলেও যোগ্য সম্মান মেলেনি। পদোন্নতির স্থলে পদাবনতি ঘটানো হয় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব একজন সুযোগ্য ব্যক্তির হাতে আসার পরই পরিস্থিতির বদল হয় ত্রিপুরাতেও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে বিজেপিতে শামিল হয়েছেন তিনি। বিজেপিতে যোগ দিয়ে পৃষ্ঠাপ্রমুখ ইনচার্জ সহ বিভিন্ন সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিষ্ঠাসহকারে পালন করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা আরও বলেন, ত্রিপুরায় দীর্ঘ ৩৫ বছরের বাম শাসনে খুন, সন্ত্রা, মারপিট সহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। যার কোনও হিসেব নেই। ত্রিপুরার সার্বিক অবস্থা একেবারে খারাপ করে দিয়েছিল কমিউনিস্টরা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব নেওয়ার পর উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির উন্নয়নে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, যতক্ষণ উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নতি হবে না ততক্ষণ দেশেরও উন্নতি হবে না। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক সহযোগিতার কারণে ত্রিপুরা এখন বিকাশের লক্ষ্যে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নত জাতীয় সড়ক, উন্নত ইন্টারনেট পরিষেবা উন্নত রেল যোগাযোগ ও উন্নত বিমান যোগাযোগ ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে ত্রিপুরা। এখন ত্রিপুরা থেকে ১৭/১৮ টি এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করছে। রাজ্যের শেষ সীমান্ত সাক্রম পর্যন্ত ব্রডগেজ রেল পরিষেবা চালু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা খুবই শান্তিপ্রিয় রাজ্য। এখানে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও খুবই ভালো জায়গায় রয়েছে। বিগত বিধানসভা নির্বাচনে কোনও ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেনি। আর ত্রিপুরায় কোনও গুন্ডাগিরি কোনও অবস্থাতেই বরদাস্ত করা হবে না। ত্রিপুরা রাজ্যে পরিকাঠামোগত উন্নয়নে সরকার খুবই আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছে। মাত্র তিন মাসে জি+৭ ডেন্টাল কলেজ গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে দুটি মেডিকেল কলেজ, একটি ডেন্টাল কলেজ, একটি নার্সিং কলেজ, ফার্মেসি কলেজ রয়েছে। এখন হোমিও ও আয়ুর্বেদ কলেজ গড়ে তোলার প্রয়াস চলছে। ত্রিপুরায় একটি মেডিকেল হাব গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই প্রচেষ্টা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শান্তির পরিবেশ থাকায় মানুষ এখন ত্রিপুরায় বিনিয়োগে আগ্রহী। এখানে রয়েছে আমাজনের- পরিস্থিতির মতো পর্যটন কেন্দ্রও। এই প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল অতিথিদের ত্রিপুরায় একবার হলেও ঘুরে আসার আমন্ত্রণ জানান মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরার এয়ারপোর্ট এখন উত্তর পূর্বাঞ্চলের মঞ্চে অন্যতম সুন্দর ও সেরা এয়ারপোর্ট। কিছুদিনের মধ্যে এই এয়ারপোর্ট আন্তর্জাতিক মানের হতে চলেছে। যার প্রথম উড়ান শুরু হবে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টের সঙ্গে। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উত্তরপ্রদেশের বন পরিবেশ মন্ত্রী ড. অরুণ কুমার সাক্সেনা, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যসচিব দুর্গাশংকর- মিশ্র, কিং জর্জ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর সোনিয়া নিত্যানন্দ, প্রো ভাইস চ্যান্সেলর, জর্জিয়ান এলামনি অ্যাসোসিয়েশনে সেক্রেটারি প্রফেসর পি কে শর্মা সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। এদিকে, লখনৌর কিং জর্জ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিরই অপর একটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা অংশগ্রহণ করেন। এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী কিং জর্জ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। এই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সময়ের বিভিন্ন বিষয়ের স্মৃতিচারণ করেন। ত্রিপুরা সম্পর্কেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ত্রিপুরা খুবই ছোট রাজ্য। এর জনসংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঐকান্তিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বর্তমানে এই রাজ্য দ্রুত বিকাশের দিশায় এগিয়ে চলছে। ত্রিপুরা ১৯টি জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। তাদের কৃষ্টি সংস্কৃতি সমৃদ্ধ ঐতিহ্যবাহী। প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী শচীন দেববর্মণ, আর ডি বর্মণরা ত্রিপুরারই সুযোগ্য সন্তান। অথচ আগে ত্রিপুরা সম্পর্কে অনেকেই জানতেন না। এই ত্রিপুরারই মেয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন জিমনাস্ট দীপা কর্মকার। যাদের হাত ধরে ত্রিপুরার নাম সারা দেশে উজ্জ্বল হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী ব্রজেশ পাঠক, উত্তরপ্রদেশের মেডিকেল এডুকেশনের প্রতিমন্ত্রী ভি সরণ সহ ছাত্র ছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।