লজ্জাজনক হার ভারতের
আতশ বাজির রোশনাইয়ে উদ্ভাসিত কলিঙ্গ স্টেডিয়াম, আর কয়েক মুহূর্ত বাদেই বিশ্বকাপ ফুটবল মঞ্চে প্রথম পদার্পণ করবে ভারতীয় অনূর্ধ্ব সতেরো মহিলা ফুটবলাররা। দেশের জাতীয় সঙ্গীত বেজে উঠতেই দর্শকদের গলাতেও জাতীয় সঙ্গীতের মুর্ছনা। জন গণ মন, শেষ হতেই হাজার হাজার দর্শকদের গলায় উচ্ছ্বাস যেন প্রমাণ দিতে চাইছে তারাই জাতীয় দলের হয়ে এখুনি নেমে পড়বেন মাঠে।
আসলে ইতিহাসের সাক্ষী হতে আসা সব ফুটবলপ্রেমীদের তখন একটাই কামনা ‘জেতো ভারত জেতো’। এই বিশ্বকাপের স্লোগান হলো ‘কিক অফ দ্য ড্রিম’। কিন্তু সেই স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দিলো ভারত। মঙ্গলবার ভুবনেশ্বরে কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে ভারতীয় অনূর্ধ্ব সতেরো মহিলা দল লজ্জাজনক হারের (০-৮) মাধ্যমে তাদের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করলো। ভারতীয় মহিলা দলের কোচ থমাস ডেননাৰ্বি গত কয়েকদিন ধরেই বলে আসছিলেন, ভারতীয় মেয়েরা যে ফুটবলটা খেলতে জানে সেটাই প্রমাণ করার প্রতিযোগিতা এই বিশ্বকাপ।
গত সোমবারও সাংবাদিকদের সুইডেন মহিলা দলকে ব্রোঞ্জ এনে দেওয়া কোচ ডেননাৰ্বি জানিয়েছিলেন, তার দলের প্রস্তুতিটা যথেষ্ট ভালো হয়েছে, মেয়েরা তৈরি। কিন্তু মঙ্গলবার আমেরিকার কাছে ০-৮ গোলে হারের পর প্রশ্ন উঠে গেলো, সত্যিই কী ভারতীয় মহিলা ফুটবলাররা বিশ্ব ফুটবল মঞ্চে লড়াই করার মতো তৈরি? বিশ্ব মহিলা ফুটবলে আমেরিকার যুব মহিলারা একবারই রানার্সের তকমা পেয়েছে। বিশ্ব মহিলা ফুটবলে ইউএসের মেয়েরা যথেষ্ট শক্তিশালীও বটে। তবে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই ভারতের এই লজ্জাজনক হারটা মেনে নিতে নারাজ হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমী। আসলে কোনও রকমভাবেই রেবিম্বাস, গামেরো, থম্পসনদের বিরুদ্ধে ভারতীয় মহিলারা লড়াই করতে পারলো না। বলতে গেলে বলতে হয়, যুদ্ধে নামার আগেই প্রতিপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করে বসলো ভারতীয় মহিলারা।
আট মিনিটেই রেবিম্বাসের গোলে এগিয়ে যায় আমেরিকা । গোলের গন্ধে তখন বাঘিনির মতো ঝাঁপিয়ে পড়েন আমেরিকার ফুটবলাররা। সুয়ারেজ টেলর, গামেরো, অনায়েকা, থম্পসন গিজেলরাও ভারতের গোলের দরজা খুলে ফেলে। রেবিশ্বাস এই ম্যাচে জোড়া গোল করেন। প্রথমার্ধেই আমেরিকা এগিয়ে থাকে ৫-০ গোলে। দ্বিতীয়ার্ধেও কলিঙ্গর মাটিতে দাপট দেখাতে থাকেন আমেরিকার মেয়েরা। এলা এমরি, সুয়ারেজ, মিয়া ভুটা গোল পান এই অর্ধে। ০-৮ গোলে পিছিয়ে পড়া ভারতীয় মহিলা ফুটবলাররা তখন ধুঁকছেন। এর মধ্যেও লড়াই করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন ভারতীয় গোলরক্ষক মোনালিসা ।
ম্যাচের শেষে আমেরিকার মহিলা ফুটবলাররা যখন জয়ের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন তখন বিমর্ষ, বিধ্বস্ত নাকিতা, অস্টম, মোনালিসাদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন থমাস ডেননার্বি। তার মধ্যে কোথাও যেন বোধনের আগেই বিসর্জনের সুর।