লাদাখবাসীর দুঃখ কবে ঘুচবে?
জম্মু কাশ্মীর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া আরেক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল লাদাখের (লাদাখের অধিবাসীরা এখন তাদের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে জোরদার আন্দোলনে নেমেছে।কোনও রাজনৈতিক দলের ব্যানারে নয়।এক পরিবেশবিদ, শিক্ষাবিদ, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত এক সমাজকর্মীর নেতৃত্বে লাদাখবাসী এই আন্দোলনে নেমেছে।তারা চান তাদের অধিকার সুনিশ্চিত করুক কেন্দ্র। তাদেরকে ষষ্ঠ তপশিলের আওতায় আনা হোক।এনিয়ে লাদাখ এখন উত্তাল।
জম্মু কাশ্মীরের এ অঞ্চলে প্রকৃতি যেন তার সমস্ত কিছু উজার করে দিয়েছে।কি পাহাড়,কি হ্রদ,কি জলাভূমি সবই যেন প্রকৃতির মায়াবী একরূপে বিদ্যামান।ওপারে চিন।তবে সম্প্রতি লাদাখবাসী মূলত চারটি দাবিকে সামনে রেখে আন্দোলনে নেমেছে। এই চারটি দাবির মধ্যে রয়েছে লাদাখকে ষষ্ঠ তপশিলের আওতায় নিয়ে আসা।তাদের জন্য পৃথক রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া,দুইজন সাংসদকে নির্বাচিত করার সুযোগ এবং চাকরি বাকরির সুনিশ্চিতকরণের জন্য একটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করা ইত্যাদি ইত্যাদি।
উল্লেখ্য ২০১৯ সালে লাদাখকে পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করা হয়। এর আগে লাদাখ জম্মু কাশ্মীরের সাথেই ছিল।৩৭০ ধারা বিলুপ্তি নিয়ে লাদাখবাসীর মনে তেমন কোনও সংশয় নেই।তারা চান তাদের যেন অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়।কেন না লাদাখের প্রাকৃতিক যে ভূমি তা যদি ক্রমাগত শিল্প কলকারখানার জন্য ব্যবহার করা হয় তা এক সময় উত্তরাখণ্ডের মতো অবস্থার সৃষ্টি করবে।লাদাখবাসীর আশংকা এখানেই।যা পরিবেশ প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্য অশনিসংকেত বয়ে আনতে পারে।আর এ আশংকা থেকেই লাদাখবাসী ২০১৯ সালে পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের বাসিন্দা হবার পর এখন ২০২০ সালের আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে আন্দোলন শুরু করে।এরপর কেন্দ্র বুঝিয়ে সুজিয়ে তাদের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে সক্ষম হয়।পরবর্তীতে লাদাখে লাদাখ হিল ডিস্ট্রিক কাউন্সিলের একটি নির্বাচন করে বিজেপি জয়ী হয়।কিন্তু এরপর লাদাখবাসীর বিভিন্ন দাবির একটিও আজ অবধি পূরিত হয়নি।
সম্প্রতি লাদাখে প্রায় পঞ্চাশ হাজারের মানুষের সমাবেশ সংঘটিত হয়। তারা রাস্তায় নেমে তাদের বিভিন্ন দাবি সুনিশ্চিত করার জন্য জোরদার আন্দোলন সংগটিত করবে।এর নেতৃত্বে রয়েছেন আন্তর্জাতিক সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচুক। তিনি মূলত তার উদ্ভাবনী ভাবনাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে গোটা লাদাখে ব্যাপক জনপ্রিয়।সোলার এনার্জিকে ব্যবহার করা থেকে শুরু করে কৃত্রিম হিমবাহ তৈরি করা, সেনাবাহিনীর জন্য পরিবেশ বান্ধব ঘর তৈরি করে তাদের শীতের হাত থেকে রক্ষা করা এ সমস্ত নানা উদ্ভাবনী কাজে তার জুড়ি মেলা ভার।তার চরিত্রনির্ভরই বলিউডে একটি সিনেমাও তৈরি হয় ‘থ্রি ইডিয়টস’।তার মুখ্য চরিত্রে রেঞ্চো।তিনি লাদাখবাসীর সমস্ত দাবিকে সামনে রেখে আমরণ অনশন করেছেন। এরপর তার একটি মিছিল করার কথা ছিল।কিন্তু প্রশাসন এতে অনুমতি দেয়নি।
লাদাখবাসী চাইছেন, তাদের অধিকার সুনিশ্চিতকরণের জন্য তাদের ষষ্ঠ তপশিলের আওতায় আনা হোক।তাতে তাদের যেমন এডিসি গঠন করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে বিভিন্ন কাজ করার সুযোগ মিলবে।তেমনি তারা চান সাংসদ সংখ্যাও বাড়ানো হোক এ অঞ্চল থেকে।এতে লাদাখের কথা আরও বেশি করে সংসদে তোলে ধরা যাবে।এছাড়াও পৃথক রাজ্যের দাবিও চান তারা।তা না হলে অন্তত একটি বিধানসভা গঠন করা হোক।চতুর্থত, রাজ্যের যুবক যুবতীদের চাকরি বাকরির জন্য একটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করা হোক।সবচেয়ে মজার ঘটনা হলো, কেন্দ্রের শাসক বিজেপি লাদাখকে ষষ্ঠ তপশিল আওতায় আনার কথা তাদের ইস্তাহারে পর্যন্ত রেখেছিলো।কিন্তু এতদিন পরও কেন তাদের সেই দাবি পূরণ করা হচ্ছে না,কেন এর সুনির্দিষ্ট কোনও জবাব নেই সরকারের কাছে।