রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারী মাসে করার উদ্যোগ!!
লাভের প্রশ্নে জোটের জটিল অঙ্কে চরম দ্বিধায় তিপ্রা মথা
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজেপি বিরোধী জোট গঠন করা নিয়ে জল্পনা এখন তুঙ্গে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রায় সকলেই বিজেপি বিরোধী জোট গঠনের পক্ষে ইচ্ছা প্রকাশ এবং প্রকাশ্যে সাওয়াল করে গেলেও, এখনও সেই অর্থে জোটের দানা বাঁধেনি। তবে এমন একটি সম্ভাবনাকে হাওয়ায় ভাসিয়ে রাখা হয়েছে। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে শেষ পর্যন্ত বিজেপি বিরোধী জোটে কংগ্রেস-সিপিএম এক হলেও সেই জোটে তিপ্ৰা মথা শামিল হবে কি না? এখন পর্যন্ত তেমন কোনও সম্ভাবনা দেখা যায়নি। কেন না ক্ষমতা হারিয়ে সিপিএম এখন গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড দাবিকে সাংবিধানিক দাবি বলে সমর্থন করলেও, শাসন ক্ষমতায় থাকাকালীন সেই একই দাবিকে সিপিএম বিভেদকামী, সাম্প্রদায়িক এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দাবি বলে আখ্যায়িত করে এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছে। এখন ক্ষমতায় নেই সিপিএম। ফলে এই ধরনের দাবিকে সমর্থন করলেও তাদের কোনও দায় নেই। তাছাড়া সকলেই জানে, রাজ্যভাগের দাবি পূরণ করতে পারে একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার। আর কেন্দ্রে রয়েছে বিজেপি সরকার, রাজ্যেও রয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। দেখার বিষয় হচ্ছে কেন্দ্রের সরকার এবং বিজেপি দল গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড সমর্থন করে কি না? এই সম্ভাবনা যে একেবারেই নেই, তা কিন্তু স্পষ্ট। কারণ কেন্দ্র ও বিজেপি দল ভালো করেই জানে গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড অর্থাৎ রাজ্যভাগের দাবিকে মান্যতা বা সমর্থন করে মথার সাথে জোট করলে, সমতলের সত্তর শতাংশ বাঙালি ভোট হারাবে বিজেপি। তখন সিপিএম সহ অন্য দলগুলি গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ডের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে ময়দানে ঝাঁপাবে। এই নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। বিজেপির নীতি নির্ধারকরা এমন কোনও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধী দলগুলিকে সুযোগ করে দেবে বলে মনে হয় না । রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজ্য রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে সবথেকে বেশি দ্বিধার মধ্যে যদি কেউ থেকে থাকে, তিনি হচ্ছেন তিপ্ৰা মথা সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ। ঘটনা প্রবাহ যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রদ্যোত কিশোরের মথাকে একাই লড়াই করতে হবে। এছাড়া তার সামনে বিকল্প কোনও রাস্তা খোলা নেই। কারণ, সিপিএম-কংগ্রেসের সাথে জোট করে রাজনৈতিকভাবে কোনও লাভ নেই । এতে তার মূল দাবিপূরণ অধরাই থেকে যাবে। বরং একা লড়াই করলে প্রদ্যোতের রাজনৈতিকভাবে দুটো লাভ। এক, ভবিষ্যতে বড় রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠার সম্ভাবনা। দুই, গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড দাবির প্রশ্নে সমঝোতা না করার প্রতিশ্রুতিতে অনঢ় থেকে অনুগামী ও সমর্থকদের কাছে নিজের ইমেজ ও অবস্থান ধরে রাখতে পারবে।
এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, শাসক দল বিজেপি রাজনীতির এই অঙ্ককে সামনে রেখেই কী ধীরে চলো নীতি নিয়েছে? কেন না, রাজনীতির এই জটিল সমীকরণে বর্তমান পরিস্থিতিতে সবথেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে গেরুয়া শিবির। গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ডের লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি দল তিপ্রা মথার সাথে জোট করবে না। এটা একপ্রকার নিশ্চিত। মথা একা লড়াই করলেও বিজেপির লাভ। কংগ্রেস-সিপিএমের সাথে জোট করলেও বিজেপির লাভ। অবস্থা বুঝে প্রচারের অভিমুখ শুধু পাল্টে যাবে।
এদিকে, তিপ্রা মথার চেয়ারম্যান প্রদ্যোত কিশোর আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এক হয়ে লড়াই করার আহ্বান জানিয়ে শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে আইপিএফটির অ্যাক্টিং সভাপতি মন্ত্রী প্রেমকুমার রিয়াংকে চিঠি দিয়েছেন। এই ব্যাপারে প্রেম কুমার রিয়াংকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমার হাতে সেই চিঠি এখনও পৌঁছেনি। তাছাড়া আমাদের সাথে বিজেপির ২০১৮ সালে জোট হয়েছে। সেই জোট এখনও অক্ষত আছে। ফলে জোট ভাঙা বা নতুন জোট করা নিয়ে আমরা এখনও কোনও সিদ্ধান্ত বা আলোচনা করিনি। আমাদের সভাপতি এন সি দেববর্মা প্রয়াত হয়েছেন। আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে নতুন সভাপতি নির্বাচিত হবে। এরপর আমরা অন্য কিছু নিয়ে ভাববো। তাছাড়া প্রদ্যোত কিশোরের চিঠি তার হাতে পৌঁছার আগেই সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে দেওয়া নিয়ে তিনি বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।