লিথিয়াম উত্তোলনে ক্রমশ নামছে ভূগর্ভস্থ জলস্তর

 লিথিয়াম উত্তোলনে ক্রমশ নামছে ভূগর্ভস্থ জলস্তর
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ইলেকট্রিক ভেহিকল বা বৈদ্যুতিক যানই মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ।জি-২০ সম্মেলনের আগেও বারবার উঠে এসেছে, কার্বন নির্গমন রুখতে গেলে, আবশ্যিকভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করতে হবে।পরিবহনে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই শক্তি হিসাবে ব্যবহৃত হয় জীবাশ্ম জ্বালানি।একমাত্র এই শিল্পেই সর্বাধিক জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার।আর তা থেকে মুক্তি মিলতে একমাত্র বিকল্প পথ বৈদ্যুতায়ন।বিশ্বের তাবড় পরিবেশবিদরাও এই সমস্যার সমাধানে একটাই পথ বাতলেছেন।আর সেই কারণেই
ক্রমশ জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে বৈদ্যুতিক যানের।এবার প্রশ্ন উঠছে বৈদ্যুতিক যান প্রকৃতই কী পরিবেশবান্ধব?সাধারণ চোখে
দেখলে, বৈদ্যুতিক গাড়ি থেকে কোন গ্যাস নির্গত হয় না।তাই স্বাভাবিকভাবেই বৈদ্যুতিক গাড়িকে পরিবেশবান্ধব বলে শীলমোহর দিয়েছেন পরিবেশবিদরা।কিন্তু প্রযুক্তিবিদরা পরিবেশবিদদের এই যুক্তি পুরোপুরি খন্ডন করেছেন।বৈদ্যুতিক যানকে দূষণমুক্ত ভবিষ্যতের প্রতীক হিসাবে মনে হলেও,এই যান তৈরির জন্যই পরিবেশের অপরিমেয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে চলেছে বলে মত প্রকাশ করেছেন তারা।ব্রাউনসোয়াইগ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির গবেষকরা সম্প্রতি এক গবেষণাপত্রে প্রকাশ করেছেন কীভাবে প্রকৃতির ক্ষতি করছে বৈদ্যুতিক যান।ইভি বা বৈদ্যুতিক গাড়ির শক্তির উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হয় লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি।লিথিয়াম ছাড়াও নিকেল, কোবাল্টের মতো ধাতুও ব্যবহৃত হয় এই ব্যাটারি তৈরিতে। আর এই ধাতুগুলির খননকার্যই হয়ে দাঁড়িয়েছে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের কারণ।বর্তমানে বিশ্বের যে পরিমাণ লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়,তার অধিকাংশই উত্তোলিত হয় লাতিন আমেরিকার লিথিয়াম ট্রায়াঙ্গেল থেকে।চিলি, বলিভিয়া এবং আর্জেন্টিনা, মূলত এই তিন দেশেই লুকিয়ে রয়েছে বিশ্বের ৫৪ লিথিয়াম ভাণ্ডার।তবে খনি থেকে লিথিয়াম উত্তোলনের পর তা পরিশোধন করে ব্যাটারি তৈরির জন্য যে পরিকাঠামো লাগে; তা এই তিন দেশেই নেই।ফলে চিন, যুক্তরাষ্ট্র-সহ অধিকাংশ উন্নত দেশই চিলি, বলিভিয়া এবং আর্জেন্টিনা থেকে স্বল্পমূল্যে লিথিয়াম আকরিক কিনে নিয়ে যায়।তারপর তা পরিশোধন করে তৈরি হয় লিথিয়াম ব্যাটারি। লিথিয়াম পরিশোধন ও ব্যাটারি নির্মাণের প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে দূষণমুক্ত হওয়ায়,তা চোখ এড়িয়ে যায় গবেষকদের।তবে লিথিয়াম উত্তোলনের সময় প্রয়োজন পড়ে প্রচুর পরিমাণ মিষ্টি জলের। কাজেই লিথিয়াম খনি সংলগ্ন এলাকায় স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়ে গিয়েছে জলসংকট।পাশাপাশি লিথিয়াম উত্তোলনের সময় ব্যবহৃত হয় নানাধরনের অ্যাসিড ও রাসায়নিক। যা বড়ো মাত্রার দূষণ ঘটায় জলাশয়ের জলে মিশে।পাশাপাশি লিথিয়াম খননের জন্য মাইলের পর মাইল অরণ্য মুছে ফেলা হয়েছে লিথিয়াম ট্রায়াঙ্গেলে।সবমিলিয়ে গোটা পরিস্থিতি মোটেও পরিবেশের পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয় বলে দাবি করেছেন ব্রাউনসোয়াইগ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির গবেষকরা। লিথিয়ামের পুনর্ব্যবহার এবং দূষণমুক্ত উৎখননের ওপর গবেষণার জন্য ইতিমধ্যেই ২০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে ইলন মাস্কের সংস্থা টেসলা।লিথিয়াম ব্যাটারির পুনর্ব্যবহারের প্রক্রিয়া যথেষ্ট জটিল এবং খরচসাপেক্ষ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী,বিশ্বে ব্যবহৃত মাত্র ৫ শতাংশ লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি পুনর্ব্যবহৃত হয়।তবে সেখানেও থেকে যায় ব্যাটারি বিস্ফোরিত হওয়ার সম্ভাবনা।বাকি ৯৫ শতাংশ ব্যাটারিই ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হয় বর্জ্য হিসাবে। সেখান থেকেও পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে কোবাল্ট, নিকেল এবং লিথিয়ামের আয়ন।ঘটায় মৃত্তিকা ও জলদূষণ।মজার বিষয় হল, এতদিন পর্যন্ত লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহৃত হত মূলত গৃহস্থের বিভিন্ন যন্ত্র চালানোর কাজেই।তবে ব্যাপকহারে পরিবহন মাধ্যমে এই ব্যাটারির ব্যবহার শুরু হওয়ায়, দূষণের মাত্রা আকাশ ছুঁতে পারে বলেই অনুমান গবেষকদের। তাদের কথায়,কোনো বিশেষ সংস্থা নয়, বরং বিশ্বের প্রথম সারির লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনকারী দেশগুলিকে উদ্যোগী হতে হবে পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে।গবেষণায় বিনিয়োগের পাশাপাশি তৈরি করে তুলতে হবে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট।খনিজ উত্তোলনের সময় যাতে দূষণ না ছড়িয়ে পড়ে প্রকৃতিতে, বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।তা-না হলেও, ভবিষ্যতে পেট্রোলিয়াম জ্বালানি বর্জনের পরেও আখেরে পরিবেশের লাভ হবে না কোনো।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.