Categories: বিজ্ঞান

লেজারের সাহায্যে বাজের দিক পরিবর্তন, দেখালেন ফ্রান্সের বিজ্ঞানীরা

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নজির তৈরি করলেন একদল ফরাসি বিজ্ঞানী। লেজারের সাহায্যে এবার বজ্রপাতের দিকই বদলে দিলেন ফরাসি বিজ্ঞানীরা। আজ থেকে প্রায় ২৭০ বছর আগে ১৭৫২ সালে বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন প্রথমবার বজ্রপাত আর বিদ্যুতের মধ্যে সম্পর্কের কথা বলেন। ২৭০ বছর পর বিজ্ঞানীরা লেজারের সাহায্যে বেপরোয়া
‘বজ্রপাত’কে পোষ মানানোর প্রযুক্তিকে সামনে আনলেন। দীর্ঘদিন ধরেই ফ্রান্সের একোল পলিটেকনিক ল্যাবরেটরি অফ
অ্যাপ্লায়েড অপটিক্সের একদল বিজ্ঞানী এমন এক সিস্টেম তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন যেখানে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন লেজারের সাহায্যে দিক বদল করা যায় প্রবল শক্তিশালী বজ্রপাতেরও। দীর্ঘ দু’দশকের
লড়াইয়ের শেষে তারা সফল হয়েছেন লক্ষ্যে। সুইৎজারল্যান্ডের উত্তরপূর্ব প্রান্তে মাউন্ট স্যান্টিস নামে পাহাড়ের মাথায় তারা শক্তিশালী লেজার বসান। এর মাধ্যমে তারা সফলভাবে বজ্রপাতের দিক বদল করতে সক্ষম হয়েছেন। এমনটাই দাবি ‘নেচার’
জার্নালের। সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণায়
বলা হয়েছে, লেজার থেকে ফিলামেন্ট (কম দূরত্বের শক্তিশালী লেজার পালস) আকাশে ছিটকে যায়। এই লেজার ফিলামেন্ট বজ্রপাতের দিক বদল করতে পারে। একটা
বড়োসড়ো গাড়ির আয়তনের এই লেজার যন্ত্রের ৩ টনের বেশি। জার্মান ইন্ডাস্ট্রিয়াল যন্ত্র তৈরি করা সংস্থা ট্রায়াম্ফ গ্রুপ তৈরি করেছে এই লেজার যন্ত্র। আড়াই হাজার মিটার
উঁচুপাহাড়ের ওপর আকাশের দিকে মুখ করে বসানো হয় লেজার যন্ত্র। টেলিযোগাযোগ সংস্থা সুইসকমের ৪০০ ফুট লম্বা ট্রান্সমিশন টাওয়ারের ওপর বসানো হয় লেজার যন্ত্র।
বিজ্ঞানীরা প্রতি সেকেন্ডে ১ হাজার বার ইনটেন্স লেজার পালস আকাশে ছোড়েন বজ্রপাতের দিক বদল ঘটাতে। বজ্রপাতের দিক কতটা বদলেছে তার রেকর্ড করতে বিজ্ঞানীরা ২টি হাই-স্পিড ক্যামেরা ব্যবহার করেন । ফলিত পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক জঁ
পিয়ের ওলফ জানিয়েছেন, যখন খুব
শক্তিশালী উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন লেজার পালস বাতাসে ছোড়া হয় তখন বিমের মধ্যে শক্তিশালী আলোকরশ্মি দিয়ে ফিলামেন্ট তৈরি হয়। এই ফিলামেন্ট বাতাসে থাকা নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন অণুকে আয়োনাইজড করে তোলে। এই আয়োনাইজড বাতাসকে বলা হয় প্লাজমা। ইলেকট্রিক্যাল কনডাক্টর হিসাবে কাজ করে এই আয়োনাইজড। ১৯৭০ সালে প্রথম এমন
পরিকল্পনার কথা ভাবা হয়। কিন্তু সেই
পরিকল্পনার প্রস্তাব ল্যাবরেটরি স্তরেই রয়ে যায়। খাতায়-কলমে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বাড়ি-ঘরকে বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা করতে বাড়ির ছাদে লোহার রড বসানো হয়। এই লোহার রডের সঙ্গে বিদ্যুতের তার
লাগানো থাকে। বিদ্যুতে র তার মাটির মধ্যে ঢোকানো থাকে যাতে বাজ পড়ার সময় বিদ্যুৎ বয়ে যায় মাটির নিচে। ক্ষতি ও প্রাণহানি আটকাতে এই ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে ছোটো এলাকায় বজ্রপাতের হাত থেকে
ক্ষয়ক্ষতি আটকানো সম্ভব। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থ সায়েন্স মন্ত্রক গত বছর সংসদে রিপোর্ট জমা দিয়ে জানায়, ২০২২ সালে শুধু বজ্রপাতেই মৃত্যু হয়েছে ৯০৭ জনের। ১ বছরে ১১১ বেড়েছে বজ্রপাতে
মৃত্যুর ঘটনা। তাই ফরাসি বিজ্ঞানীদের
গবেষণা সফলভাবে কার্যকর করা সম্ভব হলে প্রাণহানি যেমন ঠেকানো সম্ভব তেমনই বাড়িঘর, বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাও রক্ষা করা সম্ভব বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় আর্থ সায়েন্স।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

17 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

17 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago