ল্যান্ডার বিক্রমের মুখে লেসার রশ্মি ফেলে ঘুম ভাঙানোর চেষ্টায় নাসার স্পেসক্রাফ্ট!!
অনলাইন প্রতিনিধি :- চাঁদের বুকে ল্যান্ডার বিক্রম আর কতদিন ঘুমিয়ে থাকবে? পৃথিবী থেকেও বহু চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে বারবার। এবার ভারতীয় চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রমকে ঘুম থেকে তোলার মরিয়া চেষ্টা করছে নাসার স্পেসক্রাফ্ট। চাঁদের চারপাশে চক্কর কাটছে নাসার এলআরও অরবিটার। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মানজিনাস গহ্বরের কাছে চন্দ্রযানের বিক্রমকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখেছে সে। ল্যান্ডারের থেকে অন্তত ১০০ কিলোমিটার দূরে আছে এলআরও। নাসা জানাচ্ছে, এই এলআরও-তে আছে ছোট্ট রিফ্লেকটর যা দিয়ে বিক্রমের গায়ে লেসার আলো ফেলা হচ্ছে। বিক্রমের সিস্টেমে ‘পিং’ করার চেষ্টাও করছে নাসার এলআরও। বারবার বিক্রমের গায়ে লেসার আলো ফেলে ডাকাডাকি করছে নাসার লুনার অরবিটার। নাসা জানাচ্ছে, হাই রেজোলিউশন ক্যামেরা -ও সেন্সর আছে এই অরবিটারের। আকারে ছোট হলেও এই অরবিটার ভীষণই দক্ষ। দূর থেকেই ভারতের চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডারকে চিনতে পরেছে সে। তাই বার বার সিগন্যাল পাঠিয়ে তার ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করছে।চন্দ্রযান-৩-এর দ্বিতীয় ইনিংসের স্বপ্ন দেখছিল, তা পূরণ হওয়া সম্ভব নয় বলে সরকারিভাবে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে। চাঁদে নিকষ কালো রাত নেমেছে। ঘুটঘুট্টি আঁধারে হাড়হিম ঠান্ডায় একেবারেই নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে বিক্রম-প্রজ্ঞান। চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার ও রোভারকে উ আর জাগানো সম্ভব নয় বলেই জানিয়ে দিয়েছে ইসরো। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের পর ১৪ দিন পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছিল ল্যান্ডার বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞান। এরপর ‘স্লিপ মোড’ রাখার পর আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি ল্যান্ডার বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞানের সঙ্গে। তারপর এখন নাসার অরবিটার চাঁদকেপ্রদক্ষিণ করতে করতে বিক্রমকে দেখতে পেয়েই ফের ডাকাডাকি শুরু করেছে।
রাত গভীর হলেই চাঁদে হানা দিচ্ছে ধুমকেতুরা। তাদের দাপটে চাঁদের ধুলো বা রেগোলিথও উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল আমাদের অনেক রকমের ঝড়, ঝাপটার হাত থেকে বাঁচায়। সূর্যের করোনা বা বায়ুমণ্ডল থেকে ধেয়ে আসে সৌরবায়ু, সৌরঝড়, করোনাল মাস ইজেকশানের মতো ভয়ঙ্কর সব শত্রুরা। বায়ুমণ্ডল না থাকলে যাদের দাপটে মানুষের টিকে থাকা কোনওভাবেই সম্ভব হত না। মহাজাগতিক শত্রুদের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচায় শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের আবরণীও। চাঁদে বায়ুমণ্ডল বা চৌম্বক ক্ষেত্র কিছুই নেই। তাই উল্কা, ধুমকেতু বা মহাজাগতিক রশ্মিরা চাঁদের মাটিতে সরাসরি হামলা চালাচ্ছে। সেই হামলাতে ল্যান্ডার বিক্রম কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা এখনও জানায় নি নাসার লুনার অরবিটার। তবে যে ছবি সম্প্রতি নাসার হাতে এসেছে তাতে নিশ্চিত মহাজাগতিক ‘শত্রু’র হানায় কূপকাত বিক্রম ল্যান্ডারের গায়ে লেসার রশ্মির মাধ্যমে বিক্রমের যন্ত্রপাতিকে অ্যাকটিভ করার মরিয়া চেষ্টা চলছে। ইন্ডিয়ান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইনস্টিটিউটের তরফে অধ্যাপক সন্দীপ চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি বা অন্য কোনও মহাজাগতিক রশ্মি চাঁদের মাটিতে সরাসরি আছড়ে পড়ার সময় সূক্ষাতিসূক্ষ ধূলিকণাগুলিকে আঘাত করে। ফলে এগুলির মধ্যে বিদ্যুৎ তরঙ্গ তৈরি হয়। গরম হলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার জন্য ধূলিকণাগুলি তড়িৎ ঋণাত্মক কণা বা ইলেকট্রন ছাড়তে থাকে। তাপমাত্রার ফারাক এবং মহাজাগতিক রশ্মির প্রভাবে। বিরাট এলাকা জুড়ে ধুলোর ঝড় শুরু হয়। এমনই প্রতিকূল পরিবেশে দিন কাটাচ্ছে বিক্রম ও প্রজ্ঞান।