শক্তির স্বাধীনতা

 শক্তির স্বাধীনতা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

খুব দ্ৰুত বদলে যাচ্ছে বিশ্ব জুড়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের উপকরণ। আসলে গোটা দুনিয়া জুড়েই একটা মানসিক অবস্থান স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা এবং অন্যান্য বিভিন্ন জ্বালানির উপকরণগুলোর জোগানের উপর আর বেশিদিন নির্ভর করে বসে থাকার অর্থই হল, আগামী প্রজন্মকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া। এই বাস্তবতাকে মাথায় রেখেই ভারত পারমাণবিক শক্তিতে আরও জোর দিতে চাইছে।

India to build world's largest nuclear power plant, says French agency |  Bengali News App



বিশেষ করে এক্ষেত্রে ভারতের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে কয়লানির্ভর শক্তি থেকে ধীরে ধীরে সরে আসা। আর এক্ষেত্রে দেশকে পারমাণবিক শক্তির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে বড় সহায়ক ভূমিকা হিসাবে কাজ করছে এনটিপিসি অর্থাৎ ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন। মূল কথা হল, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার অর্থাৎ গ্যাস, পেট্রোল, ডিজেল, কয়লা, কেরোসিন এ সমস্ত জ্বালানির উপাদান থেকে অনেক আগেই বিশ্বের উন্নত ও উন্নততর রাষ্ট্রগুলি নিজেদের অনেকটাই দূরে সরিয়ে রাখতে শুরু করেছিল প্রায় এক দশক ধরেই। এবার এই যাত্রায় শরিক হচ্ছে ভারত। আমাদের দেশে জ্বালানি হিসাবে বর্তমানে যে উপাদান ব্যবহার করা হয় এর নব্বই শতাংশই হচ্ছে জীবাশ্ম থেকে প্রাপ্ত। আর ভারত সরকার চাইছে ২০৩২ সালের মধ্যেই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার অনেকটা কমিয়ে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে। তবে একা পারমাণবিক শক্তির উপর ভর করেই জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প ভারত খুঁজছে, ঘটনা তা নয়। এক্ষেত্রে পাশাপাশি সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুচালিত শক্তি এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পেরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশ। কারণটাও স্পষ্ট। আগামীদিনে দেশ এবং বিশ্ব জুড়ে কয়লার ভাণ্ডার হ্রাস পাবে। সেই সঙ্গে বেড়ে যাবে কয়লার দাম। এই কয়লা থেকে নিঃসরিত হচ্ছে কার্বন। এক্ষেত্রে আগামীদিনে বৈদ্যুতিক গাড়িই যে ভারতের ভবিষ্যৎ সেটা বেশ কিছুদিন আগেই ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় ভূতল পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গড়করি। সেক্ষেত্রে যানবাহন থেকে কার্বন নিঃসরণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পাবে। আর যেহেতু বিদ্যুৎ ক্ষেত্র অনেক আগে থেকেই পরমাণু রি-অ্যাক্টর চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা চালুর পক্ষপাতী — স্বাভাবিক কারণেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়াতেও যে বিপুল পরিমাণ কার্বন নির্গত হয়, এর পরিমাণও পঞ্চাশ শতাংশের নিচে নামানো সম্ভব হবে। বিশ্বজুড়ে কয়লা সঙ্কট কিংবা অন্য সব প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রেও বড় কথা হচ্ছে, সম্প্রতি রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের ঘটনার বিশ্ব কূটনীতিতে এবং অর্থ ব্যবস্থায় যে বড় পরিবর্তন ঘটে গেছে সেই বাস্তবতা আঁচ করে এশিয়া কিংবা ইউরোপের সব বড় দেশই শক্তির স্বাধীনতার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছে। যে কারণে চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো আরও বেশি করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন চুল্লি তৈরি করার পথে ঝাঁপিয়েছে।এই পরিকল্পনাকে সামনে রেখেই গোটা দেশে ভারত আরও বারোটি পরমাণু চুল্লি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে ভারতের জন্য গর্বের যে, ভারত এই মুহূর্তে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কার্বন নির্গমনকারী দেশ।

The Dezeen guide to carbon



কিন্তু দেশের লক্ষ্য এই মোট কার্বন নির্গমনকে শূন্যে নামিয়ে আনা। ভারত এই কাজে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে আগামী পঞ্চাশ বছর। আর এই লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম হাতিয়ারই হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেওয়া। বর্তমান সরকারের সময়ে ভারতের শ্লোগান ‘আত্মনির্ভর দেশ’। ভারত বরাবরই একটা কথা বলে এসেছে – – পারমাণবিক শক্তিকে ভারত অন্য কোনও হুমকির কাজে ব্যবহার করবে না। বরং শান্তি-সুস্থিতি এবং উন্নয়নই ভারতের পরমাণু কর্মসূচির মূল লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ২০৩১ সালের মধ্যে দেশে মোট দশটি পারমাণবিক শক্তি চুল্লি স্থাপন করার ছাড়পত্রের ঘোষণার কথা জানানো হল সংসদে। প্রতিটি ৭०० মেগাওয়াটের মোট দশটি প্রেশারাইজড ওয়াটার রিঅ্যাক্টর আগামীদিনে ভারতের উন্নয়ন ও প্রযুক্তির জন্য বড় সমৃদ্ধির বার্তা বয়ে আনছে সেটা এই মুহূর্তেই বলা যায়। প্রচলিত শক্তির দিন আর নেই । নতুন বিকল্পের সন্ধানে বসে নেই দুনিয়া। শক্তির স্বাধীনতা’র এই লড়াইয়ে ভারত যে আগামী এক দশকের মধ্যে গোটা বিশ্বের সামনে স্পর্ধিত অথচ মানবিক চেহারা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে, পারমাণবিক শক্তির এই বড়সড় পরিকল্পনা এরই বার্তা মাত্র। শক্তির স্বাধীনতার এই দৌড়ে কয়লা, ডিজেল সবই অতীত হবে। পারমাণবিক বিদ্যুতের সাফল্য দেশের প্রতি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়বে এটাই নতুন ভারতের সংকল্প।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.