শঙ্কার কালোমেঘ।।

 শঙ্কার কালোমেঘ।।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন তথা দপ্তর হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে শুক্রবার যে ঘটনা ঘটে গেল, তা চলমান জটিল বিশ্ব রাজনীতিতে একটা বড়সড় মোড় বা দিক পরিবর্তন বলা যেতে পারে।এদিন হোয়াইট হাউসে বৈঠকে বসেছিলেন ট্রাম্প এবং ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।আলোচনার বিষয়বস্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে শান্তির দিশা নির্ণয় হলেও মূলত আলোচনা হওয়ার কথা ছিল ইউক্রেনের খনিজ নিয়ে।আমেরিকাকে বিরল খনিজ ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে এর বিনিময়ে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন জেলেনস্কি। কারণ বাইডেনের সময়ে মার্কিন প্রশাসন ইউক্রেনের জন্য যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, গত জানুয়ারীতে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরেই সেই সাহায্য কার্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে ইউক্রেনকে আমেরিকা যে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সহযোগিতা করেছিল সেই খরচ এবার সুদে আসলে ফিরিয়ে নিতে চাইছিল মার্কিন প্রশাসন। কারণ ট্রাম্প স্পষ্টতই একটা কথা বলেছিলেন স্বেচ্ছাসেবায় তার দেশ আগ্রহী নয়। ট্রাম্পের প্রথম থেকেই নজর ছিল ইউক্রেনের খনিজসম্পদের দিকে, আর জেলেনস্কি সেটা বুঝতে পেরেই ট্রাম্পের সঙ্গে খনিজ চুক্তিতে রাজি হয়েছিলেন বিনিময়ে চেয়েছিলেন ইউক্রেনের নিরাপত্তা। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে জেলেনস্কির একথা বুঝতে অসুবিধা হয়নি, ট্রাম্প ইউক্রেনের লোভনীয় খনিজ দখল করতে যতটা উৎসাহী, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি ততটা আগ্রহী নন। বরং ট্রাম্প গত বেশ কিছু ঘটনায় . হাবেভাবে এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার পুতিনের প্রতিই যেন অনেক বেশি নরম। আর এখানেই ঘটে গেছে বিপত্তি। ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কোন রকম খনিজ চুক্তি করা যে সম্ভব নয় জেলেনস্কি সেটা জানিয়ে দিতেই চাপ বাড়াতে থাকেন ট্রাম্প। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের বৈঠকে সেই কারণেই সম্ভাব্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয় দেখিয়ে আগে থেকেই এর উত্তরদায়ী হিসাবে জেলেনস্কিকে কাঠগড়ায় তুলে রাখলেন ট্রাম্প। তবে যেভাবে জেলেনস্কিকে এই বৈঠকে রাশিয়ার সাথে শান্তি স্থাপনে এবং প্রয়োজনে কিছুটা ক্ষতি স্বীকার করেও সমঝোতায় যেতে রাজি হওয়ার জন্য ট্রাম্প চাপ বাড়াচ্ছিলেন, জেলেনস্কি তাতে সম্মতি না দিতেই ভেস্তে যায় ট্রাম্পের পরিকল্পনা।যদিও চুক্তিবদ্ধ না হলে ইউক্রেনের পক্ষে মার্কিনিরা থাকবে না, লড়াইটা একা রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনকে লড়তে হবে-ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারি কিন্তু যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা, ট্রাম্প যদি ইউক্রেনকে সাহায্য বন্ধ করে দেন, তবে জেলেনস্কির পক্ষে রুশ আক্রমণ ঠেকানো কঠিন। আবার এটাও ঘটনা, বিগত তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু এলাকা রাশিয়ার দখলে চলে গেছে। অথচ কিছুটা ক্ষতি স্বীকার করে যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইউক্রেনকে চাপ দিয়ে চলেছেন ট্রাম্প। বিনিময়ে মধ্যস্থতাকারী এবং যুদ্ধের ব্যয়ভার বাবদ খরচ হওয়া অর্থের বিনিময়ে ইউক্রেনের যাবতীয় খনির মালিকানা আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়ার ট্রাম্পের কৌশলও জেলেনস্কির পক্ষে মেনে নেওয়া অসম্ভব। এই অবস্থায় ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠকের দিকে গোটা বিশ্বের নজর থাকলেও, এই বৈঠক যে মাঝপথেই ভেঙে যাবে সেটা আশ্চর্য হওয়ার মতো কিছু নয়। কিন্তু যে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ এবং ইউরোপিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকার সম্পর্ক আগামী দিনে কোন পথে মোড় নেবে সেটা নির্ণয় করা। ইউক্রেনকে নিয়ে মার্কিন মনোভাব এখন থেকে কী হবে সেটা এই মুহূর্তে বলা না গেলেও ভালো কিছু হবে, এটা ধারণা করা ঠিক হবে না। তবে যে আশঙ্কা বিশ্ব রাজনীতিতে মাথাচারা দিয়ে উঠেছে তা হলো, ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে গোপন সমঝোতার গুঞ্জন। ইউক্রেনের মাটির নীচে বিশ্বের এমন ২০ টি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ধাতু রয়েছে যা অস্ত্র, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এবং মহাকাশ গবেষণায় কাজে লাগে। এই খনির অর্ধেকই বর্তমানে রাশিয়ার দখলে। এর মূল্য প্রায় ৭৫ লক্ষ কোটি ডলার। বাদবাকি যে খনিগুলি ইউক্রেনের হাতে আছে সেইগুলি ট্রাম্পের দেওয়া ‘হাতিয়ারের বদলে খনি চুক্তির’ প্রস্তাব জেলেনস্কি ফিরিয়ে দেওয়ায় এখন রুশ দখলীকৃত খনিগুলি আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে ভাগাভাগি হওয়ার পর, ইউক্রেনকে নিয়ে পুনরায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠে কিনা সেই আশঙ্কা কিন্তু ক্রমেই বাড়ছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.