শঙ্কা ও সহনশীলতা

 শঙ্কা ও সহনশীলতা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারী নাগাদ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে চলেছে। এই নির্বাচন একাধিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে এর আভাস পাওয়া গেছে। আসলে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ নতুন কোন বিষয় নয়।তবে অতীতে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে এতটা কূটনৈতিক গুরুত্ব না থাকলেও, সাম্প্রতিক কিছু বছরে পশ্চিমা দেশগুলো সহ বিশ্বের আধিপত্যবাদের রাজনীতির কারণে বাংলাদেশের রাজনীতি ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।এর অর্থ হয়তো এই নয় যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপ আছে। কিন্তু ভূ-রাজনীতির অবস্থানগত কারণেই বাংলাদেশ যে ক্রমশ বৃহৎ শক্তিধর দেশগুলির কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সেটা কিন্তু পরিষ্কার। কিন্তু বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে কিছু ঘটনাপ্রবাহ পরিস্থিতিকে জটিল মাত্রায় নিয়ে গেছে। গত বেশকিছু মাস ধরেই বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের শুদ্ধতা নিশ্চিতকরণের দাবি জানিয়ে আসছিল আমেরিকা।শুধু নির্বাচনই নয় নির্বাচনপূর্ব পরিস্থিতি, নির্বাচনে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ কিংবা সবগুলো রাজনৈতিক দলের জন্য ভোটের অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টির প্রশ্নে ক্ষমতাসীন সরকারের ভূমিকায় সন্তুষ্ট হতে পারছিল না আমেরিকা। এই অবস্থায় মার্কিন প্রশাসন গত এপ্রিল মাসে ঘোষণা দেয় বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে যদি কোন অনিয়ম হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মার্কিন ভিসা প্রদান করা হবে না। নির্বাচন প্রশ্নে এই নতুন মার্কিন ভিসা নীতির কারণে বেশ খানিকটাই অস্বস্তির মুখে পড়েছে আওয়ামী লিগ সরকার। এক্ষেত্রে মার্কিনী বক্তব্য ছিল,কোন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, সংস্থা বা কোন ব্যক্তি যদি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে বাধা হয় তাহলে এই ভিসা নীতির আওতায় তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।স্পষ্ট করে না বললেও মার্কিনী এই ইঙ্গিত যে ক্ষমতাসীনদের দিকে সেটা বুঝতে বাকি ছিলো না কারো। কিন্তু মার্কিন প্রশাসনের এই পদক্ষেপের পরপরই বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলে তৎপরতা বেড়ে যায়। দেখা যায় বাংলাদেশের উপর কূটনৈতিক ও স্নায়ুর চাপ বাড়াতে গত ক’ মাসে মার্কিনীদের বেশ কিছু প্রতিনিধি দল, ইউরোপিয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিনিধি দল, মার্কিন পররাষ্ট্র বিষয়ক নাগরিক নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র বিষয়ক প্রতিনিধিরা ঢাকা সফর করে গেছেন।পাশাপাশি চিনের তরফেও বেশকিছু রাজনৈতিক তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়। এই পদক্ষেপগুলো যে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের নামে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মাথা ঘামানোর চেষ্টা সেটাও অস্বীকারের উপায় নেই। এই জটিল পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়েই সম্প্রতি নয়াদিল্লীর কিছু পদক্ষেপ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা নিতে শুরু করেছে। সাউথ ব্লক এই মর্মে সম্প্রতি এক বার্তায় জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ঢাকায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হোক এটা ওয়াশিংটনের মতো ভারতও চায়। কিন্তু বাংলাদেশে আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলানো কিংবা বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারকে দুর্বল করলে এই ক্ষতি যে সবার সেটাও কৌশলে সাউথ ব্লক বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ঘটনা হলো, বাংলাদেশ নির্বাচনকে ঘিরে আমেরিকার বাড়তি কর্মকাণ্ডে চিন অনেকটাই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এমনিতেই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভারতের পূর্বোত্তর সীমান্ত অঞ্চলের পরিস্থিতি মোটেই আগের মতো সন্তোষজন নয়। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে উগ্র মৌলবাদী সংগঠন জামায়াতের তৎপরতা বেড়েছে। মার্কিনীরা বরাবরই জামায়াতকে রাজনৈতিক ইসলামিক সংগঠন হিসাবে দেখে এবং তাদের মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গেই তুলনা করে থাকে। কিন্তু পাকিস্তানের হাতে তামাক খাওয়া জামায়াত শুধু ভারত নয় গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য অন্যতম বিপদ সেটা উপলব্ধি করতে চাইছে না বাইডেন প্রশাসন। শুধু তাই নয়, ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তানের অন্যতম মিত্ররাষ্ট্র চিন। আর চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধী দল সহ মৌলবাদী সংগঠনগুলোর আত্মিক সম্পর্ক ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। এই অবস্থায় দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা ও ক্ষমতার দাপাদাপি নতুন মাত্রা পাবে যা ভারত কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ কারোর জন্যই স্বস্তির খবর নয়। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি, সুস্থিতি ও সমৃদ্ধির প্রশ্নে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একই ভূমিকা বাংলাদেশেরও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এই অবস্থায় এই অঞ্চলে এমন কোন কাজকে উৎসাহ দেওয়া ঠিক হবে না যা বাংলাদেশে মৌলবাদী, কট্টরপন্থী ও সন্ত্রাসীদের
সাহায্য করে। আবার অতিরিক্ত মার্কিনী চাপ বাড়তে থাকলে ভোটের মুখে বাংলাদেশ সরকার চিনের প্রতি নরম মনোভাব দেখালে এটাও এই অঞ্চলের জন্য নতুন কূটনৈতিক রসায়ন তৈরী করতে পারে। এই প্রেক্ষিতে কোন রাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে যেহেতু চূড়া কথা বলবেন একমাত্র সেই দেশেরই মানুষ, তাই বাংলাদেশে রাজনীতি নিয়ে বাইরের নাক গলানো যেমন কোনভাবেই কাম্য নয় তেমনি বাঞ্ছিত নয়। এটাই এই মুহূর্তে এই অঞ্চলের শান্তি,সুস্থিতি উন্নয়নের একমাত্র পথ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.