শত্রুরূপী মানুষকে ‘বলি’ দিয়ে আজও পুজো হয় দেবী অপরাজিতার
রাত জেগে রঙ করে চলছিলেন বৃদ্ধ শিল্পী । মাঝরাতে চারিদিক যখন নিঝুম , ঝিঝি পোকার ডাক , তখনও তিনি একাই জেগে এক হাতে তুলি ও অন্য হাতে বাতি ধরে দেবীর রঙ করে চলেন । বয়সের ভারে শরীর ভেঙেছে । চোখের জ্যোতিও কমেছে । তবু এক মনে রঙ করছিলেন । ভোরের নরম আলো এসে পড়ল দেবীর শরীরে । ক্লান্ত চোখে প্রতিমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে চমকে ওঠেন বৃদ্ধ । এ কী ! দেবীর গায়ে যে অপরাজিতা রঙ । চিন্তায় পড়ে গেলেন বৃদ্ধ শিল্পী। এদিকে আশেপাশে মুহূর্তে খবর ছড়িয়ে গেল । পরিবারের লোকরা ও গ্রামের লোকরা এসে মুষড়ে পড়লেন । এই সময় মুশকিল আসানের মতো হঠাৎই এলেন বাড়ির কর্তা । জানালেন , চিন্তা করার কিছু নেই । রাতেই দেবী তাঁকে স্বপ্নে আদেশ দিয়েছেন , যেন অপরাজিতা রঙেই দেবীর পুজো করা হয় । সেই থেকেই কৃষ্ণনগরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে অপরাজিতা রঙে পুজিত হয়ে আসছেন দেবী দুর্গা। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দাদের কাছে তিনি আজ আদরের ‘ নীল দুর্গা ‘ বা ‘ অপরাজিতা ‘ নামে পরিচিত । চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দাবি , প্রায় ৩০০ বছর আগে অধুনা বাংলাদেশের বরিশাল জেলার বামরাইল গ্রামে এই পুজো শুরু হয় । তাদেরই এক পূর্বপুরুষ তন্ত্রসাধক এই পুজোর প্রচলন করেন । দেশ ভাগের পর চট্টোপাধ্যায় পরিবার চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে । নাজিরা পাড়ায় তাঁরা স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন । ১৯৪৭ সাল থেকে এখানেই শুরু হয় , অপরাজিতার পুজো । তবে ১৯৯৮ সালে পুজোর নানান আচার ঘিরে মত পার্থক্যর জেরে শরিকি বিবাদ তৈরি হয় । সেবছর থেকেই আলাদা আলাদা করে শুরু হয় ‘ নীল দুর্গা’র পুজো । তবে পুজোর আচার থেকে শুরু করে নানা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান সব কিছু এক রকম থাকলেও নতুন পুজোয় বাদ দেওয়া হয়েছে পশু বলি ও কুমারী পুজো । পরিবারের লোকদের কথায় , বাংলাদেশে যখন পুজো হতো তখন মোষ বলি দেওয়া হত। কিন্তু ১৯৯৮ সালের প্রথম থেকেই পুজোয় সতীশচন্দ্ৰ চট্টোপাধ্যায়ের শাখার সদস্যরা যে পুজো শুরু করলেন , সেই পুজোয় কুমারী পুজো বন্ধ করে দেওয়া হয় । আর ৭ বছর আগে বন্ধ করে দেওয়া হয় পশু বলিও । তবে চিন্তাহরণ চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে এখনও কুমারী পুজো ও পশু বলির প্রচলন আছে । শুধু দেবীর গায়ের রঙই নয় , নানা মাঙ্গলিক আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই পুজো আলাদা করে নজর কাড়ে ।