শরীরের বাড়তি মেদ ঝড়াতে কিছু ফলের বিশেষ ভূমিকা

 শরীরের বাড়তি মেদ ঝড়াতে কিছু ফলের বিশেষ ভূমিকা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ওজন যে কোনও মানুষের জন্যই ক্ষতিকর। ওজন কমাতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে এবং তার সঙ্গে নিয়মিত ব্যায়ামের বিকল্প
নেই। অতিরিক্ত পেটের মেদ শরীরে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে। যেমন, হৃদরোগ, স্ট্রোক, টাইপ টু ডায়াবেটিস ইত্যাদি। কিন্তু আপনারা জানেন কি রোজ চারবার ফল খেলে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের মাত্রা কমে যায়।
আর এভাবেই ওজন কমাতে সাহায্য করে ফল। আর এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু ফল বেশি উপকারী। কিন্তু শুধু ফল খেলেই হবে না তার সঙ্গে খেতে হবে শাকসব্জি আর পরিমাণ মতো জল। তার ফলে শরীরের বর্জ্যপদার্থ
সহজেই দূর হবে এবং মেদ কমে যাবে। একটা কথা মাথায় রাখবেন, সব ফলই ওজন কমায় না। ওজন কমাতে সাহায্য করে এমন কিছুফল প্রতিদিনের ডায়েটে রাখলে আপনার ওজন কমতে বাধ্য। যেসব ফল
শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে তাদের কিছু নাম তুলে ধরা হল এই লেখার মাধ্যমে।

শশা
এক কাপ শশায় ক্যালরি মাত্র ১৬। অর্থাৎ এর ‘এনার্জিডেনসিটি’ কম। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘এনার্জি ডেনসিটি’ কম এমন খাবার খাওয়ার
সঙ্গে ওজন কমার গভীর সম্পর্ক আছে। আর শশায় জলের মাত্রা বেশি হওয়ায় তা খাওয়া পেট ভরা অনুভূতি থাকে, ফলে খাওয়া কম
হয়।

কমলালেবু ও পাতিলেবু
কমলালেবুতে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ও ক্যালরি কম। আর এটি অনেকক্ষণ পেটভরা রাখতে সাহায্য করে। ফলে ওজন কমে। তবে কমলালেবুর রস করে খাওয়ার চাইতে আস্ত
কমলা খাওয়া বেশি উপকারী। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করুন কমলালেবু। এছাড়াও পাতি লেবুতে প্রাকৃতিকভাবে পেকটিন ফাইবার থাকে, যা খিদে লাগার প্রবণতা কমায়। তাই রোজ একটা করে
পাতিলেবুর রস খেতে পারেন ওজন
কমানোর জন্য।

আনারস
আনারস এমন একটি ফল যা পেটের মেদ কমাতে খুবই উপকারী। এ ফলে প্রচুর ফ্যাট থাকে আর ক্যালোরির মাত্রা কম থাকে। এই ফল পেটের হজম শক্তি বৃদ্ধিসহ মেদ কমাতে বেশ উপকারী। কিন্তু রস করে খেলে
তেমনভাবে উপকার পাওয়া যায় না। কারণ পুরো ফাইবার শরীরে না ঢুকলে সম্পূর্ণভাবে ফলাফল পাওয়া যায় না।

আপেল
লো ক্যালোরি ও উচ্চ ফাইবার-যুক্ত এই ফল ওজন কমায়। প্রতিদিনের ডায়েটে সাধারণত যে পরিমাণ ফাইবার প্রয়োজন হয়, তার পাঁচ
ভাগের এক ভাগের যোগান দেয় আপেল। আপেল রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে। রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকলে খিদে নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং দেহের ওজন কমায়। শুধু তাই নয় ডায়াবেটিস হওয়া থেকে রক্ষা করে। কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখতে হবে আপেল খোসাসহ খাওয়া উচিত, তবেই আপেলের
সম্পূর্ণ গুণগুলি শরীরে ঢুকবে।

অ্যাভোকাডো ও ব্লুবেরি
প্রচুর ফাইবার আছে অ্যাভোকাডোতে। এটি খেলে দ্রুত খিেদ পায় না। এতে থাকা
মোনো-স্যাটিউরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড পেটে জমে থাকা মেদ কমাতে খুবই কার্যকরী। ওজন কমাতে ব্লুবেরির ভূমিকাও কিছু কম নয়। ব্লুবেরির মধ্যে ফ্লেভানল রয়েছে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এক কাপ ব্লুবেরিতে ১০ মিলিগ্রাম অ্যনথোসিয়ানিন রয়েছে যা অনেকক্ষণ পেট ভর্তি রাখতে
সাহায্য করে। এছাড়া ব্লুবেরিতে রয়েছে ক্যালশিয়াম, আয়রন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত দরকারি।

তরমুজ
মিনারেল সমৃদ্ধ ফল হিসেবে পরিচিত। এই ফলে ক্যালরির পরিমাণও কম। এক কাপ অর্থাৎ ১৫০ থেকে ১৬০ গ্রাম তরমুজ থেকে
মিলবে মাত্র ৪৬ থেকে ৬১ ক্যালরি।

পেঁপে
পেঁপেতে ফ্যাটের পরিমাণ একদম নেই বললেই চলে। এতে যে এনজাইম থাকে তা হজমে সাহায্য করে এবং শরীরে ফ্যাটের আস্তরণ ভাঙতে পারে, যার ফলে ওজন কমে
যায়। প্রতিদিন পেঁপে খেলে কিছুটা হলেও শরীরের ওজন কমাতে সক্ষম হবেন।

সবেদা
এই ফলটি দেহের মেটাবোলিজমের হার বাড়িয়ে দেয়। শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি ফ্যাট গলাতে সবেদা বেশ কার্যকর। এতে থাকা ফাইবার দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে
ও খিদে নিয়ন্ত্রণ করে।

আঙুর
আঙুরের রস শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে খুবই উপকারী। শরীরের ওজন কমাতে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও
খুবই উপকারী। ওজন কমাতে রোজ কিছুটা আঙুর খেতেই পারেন। তবে হালকা সবুজ
রংয়ের আঙুর থেকে লাল বা গাঢ় সবুজ
রঙের আঙুর খাওয়া বেশি ভাল।

নাশপাতি
নাশপাতি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে কারণ এতে আছে ফ্লাভানয়েড পলিমারস। প্রতি ১৩৮ মিলিগ্রাম বাড়তি ফ্লাভানয়েড পলিমারস ওজন কম হারে বাড়ায়। তাই যারা ওজন কমাতে চায় তাদের
ফ্লাভানয়েড সমৃদ্ধ ফল খাওয়া উচিত। খোসাসহ খাওয়া হলে এর আঁশ দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। ফলে এলোমেলো খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা যায়।

বেদানা
প্রচুর পরিমাণ ফাইবার রয়েছে এ ফলটিতে।
পাশাপাশি বেদানা লো ক্যালোরি সমৃদ্ধ। ওজন কমাতে খাদ্য তালিকায় রাখুন এই ফল। এছাড়াও বেদানা রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতেও সাহায্য করে।

স্ট্রবেরি
আপনি যদি ওজন কমানোর জন্য ডায়েটে থাকেন তবে আপনার যে পরিমাণ প্রয়োজন তার চেয়ে কম ক্যালোরি গ্রহণ করতে হবে এবং আপনার শরীর থেকে ক্যালোরির
পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হবে। তাই
প্রতিদিনের খাওয়ারের তালিকায় স্ট্রবেরি রাখতে পারেন। কারণ ১০০ গ্রাম স্ট্রবেরিতে মাত্র ৩৩ গ্রাম ক্যালোরি থাকে। আর এটি খেতেও অসাধারণ।

কলা
উচ্চ মাত্রায় ক্যালরি ও শর্করা থাকার কারণে ওজন কমাতে গিয়ে অনেকেই কলা খাওয়া এড়িয়ে যান। তবে ক্যালরি বেশি হলেও এই
ফলে আরও রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ বিভিন্ন
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এ, বি-সিক্স এবং সি। এই ফলের শর্করাও শরীরে ধীরে শোষিত হয়। তাই বিভিন্ন পুষ্টি উপাদনে ভরপুর কলা দেহের ওজন কম রাখতে সাহায্য করে। আপনি যদি ওজন কমাতে দৃঢ়
প্রতিজ্ঞ হন তাহলে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। খুব খিদে পেলে বিস্কুট বা উচ্চ ক্যালরি সম্পন্ন স্ন্যাকস চিবানোর পরিবর্তে আঙুর, আপেল বা কমলালেবুর মতো ফল
খান। শরীরে পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষায় ফল খাওয়ার কোনও বিকল্প নেই। ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টি অক্সিডেন্টের পাশাপাশি ফলে রয়েছে নানা উপকারী উপাদান। আর ফলে রয়েছে ফাইবার তাই ফল খান আর
ওজন কমান।

——বর্ষা বিশ্বাস

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.